ফিফা ক্রমতালিকায় বাংলাদেশ ১৮৯ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা ২০৫তম স্থানে। অথচ মলদ্বীপে চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই দুই দেশের বিরুদ্ধেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ১০৭ নম্বরে থাকা ভারতীয় দল!
প্রথম ম্যাচে দশ জনে খেলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ফল ছিল গোলশূন্য। টানা ড্রয়ের ফলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সুনীল ছেত্রীদের যোগ্যতা অর্জন করা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্কটে কোচ ইগর স্তিমাচের ভবিষ্যৎও। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখার জন্য শেষ দু’টি ম্যাচে নেপাল ও মলদ্বীপের বিরুদ্ধে জিততেই হবে ভারতকে।
বৃহস্পতিবারের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার রণকৌশলই ছিল ভারত অধিনায়ককে খেলতে না দেওয়া। সুনীল আটকে গেলে গোল করার কেউ নেই, এই নির্মম সত্যটা আরও একবার প্রমাণিত। পুরো ম্যাচে মাত্র একবারই বিপক্ষের গোলে নির্ভুল লক্ষ্যে বল মেরেছিল ভারত! ম্যাচের পরে নাকি ইগর বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘আমি তো আর মাঠে নেমে গোল করতে পারব না।’’প্রশ্ন উঠছে সুনীল একার কাঁধে কত দিন টানবেন? ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সফল স্ট্রাইকারের বয়স এই মুহূর্তে ৩৭।ফুটবলজীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে গিয়েছেন। অথচ এখনও পর্যন্ত তাঁর অভাব পূরণ করার মতো কোনও স্ট্রাইকার নেই। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আই এম বিজয়ন বললেন, ‘‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারত যা খেলেছে, তাতে আমি খুব আশাবাদী নই ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে। এখন পরের দু’টি ম্যাচই জিততে হবে। কিন্তু এ বার নেপালের যা দল, তাতে ওদের হারানো কঠিন বলেই আমার মত।’’
সুনীলের যোগ্য উত্তরসূরি তুলে আনতে না পারার জন্য অবশ্য ইগরকেই দায়ী করছেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান শ্যাম থাপা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে শেষ ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের সদস্যকে ভারতের কোচ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, গত মার্চে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কাছে ০-৬ বিপর্যয়ের পরেও ইগরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় দলের খেলা দেখে ক্ষুব্ধ শ্যাম বলে দিলেন, ‘‘জাতীয় কোচকেই দায়িত্ব নিতে হবে নতুন ফুটবলার তুলে আনার। শুধুমাত্র সিনিয়র দল নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। যুব দলের খেলা দেখতে মাঠে যেতে হবে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘পরবর্তী টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ফেডারশনকে আমি প্রস্তাব দেব, নতুন কোচের সঙ্গে চুক্তি করার সময়ই শর্ত দিতে হবে যুব দলের খেলার দেখার জন্য। আমাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে বিদেশি কোচের জন্য। কিন্তু তার কোনও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।’’ নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বললেন, ‘‘খেলা যখন থাকবে না, তখন জাতীয় দলের কোচকে যুব দলে কোচিং করাতে হবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে। নেপালের কোচ থাকার সময় আমি অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দল নিয়ে অসংখ্য প্রতিযোগিতায় খেলেছি। আমাদের দেশে কেন তা হবে না।’’
ভারতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে না পারলে ফেডারেশনের অন্দরমহলে অনেকেই কোচকে বরখাস্ত করার পক্ষে।