অনুপস্থিত দিদি। লতা মঙ্গেশকরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হৃদয়নাথ ও ঊষার সঙ্গে সচিন। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য
কে জানত, লতা মঙ্গেশকরের পঁচাশিতম জন্মদিন উৎসবে ক্রিকেট মাঠের সেই চিরপরিচিত ডাকটা আবার নতুন করে উঠবে। শেষ যা শোনা গিয়েছিল দশ মাস আগের ওয়াংখেড়েতে। স্যা-চ্চি-ন, স্যা-চ্চি-ন, স্যা-চ্চি-ন।
রোববার রাতে মাতুঙ্গার সম্মুখানন্দ হলের হাজার তিনেক লোকের এই তীব্র চিৎকারে সচিন বক্তৃতাই শুরু করতে পারছিলেন না। নভেম্বরে অবসরের পর এত বড় পাবলিক ফাংশনে তিনি আসেননি। এসে আবিষ্কার করলেন তাঁর জায়গাটা জনগণের আবেগের সিন্দুকে আজও একই রকম সুরক্ষিত। শনিবার রাতেই স্বয়ং লতা এবিপি-র জন্মদিনের উপহার গ্রহণ করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, নিজের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই আসতে পারছেন না। চিকিৎসকের কড়া বারণ। দিন কয়েক আগে দেড় ঘণ্টা দূরত্বে নিজের স্টুডিওয় গিয়ে পুজোর বাংলা গান নির্বিঘ্নে রেকর্ডিং করে এলেও তার পরেই তাঁর শরীর সাময়িক বিগড়োয়। ডাক্তার অতঃপর তীব্র ফতোয়া জারি করেন, কিছুতেই আপনি ভিড়ে যাবেন না। লতা খালি ফোনে বলছিলেন, “আমি দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যেতে পারব না। তবে সচিন আছে। আশাও থাকবে। ওরা ঠিক সামলে নেবে।”
মঙ্গেশকর খানদানের পক্ষে তাঁর ভাই হৃদয়নাথ ছিলেন। ছিলেন আর এক বোন ঊষা। আশা ভোঁসলেকে যদিও একেবারেই দেখা গেল না। তবে ঘোষকের মুখে লতা আসবেন না শুনে গণ-হতাশার ঢল যেন সচিন একাই মাঠের বাইরে ফেলে দিলেন তাঁর আবির্ভাব আর বক্তব্যে। এক ভারতরত্ন অন্য অনুপস্থিত ভারতরত্নের তরফে উপহার গ্রহণ করলেন। আর হল মুহূর্মুহূ ফেটে পড়ল হাততালিতে। রবীন্দ্রসদনের ডাবলেরও বেশি লোক ধরে এই সম্মুখানন্দ হলে। আর আজ তা ভর্তি হয়েও যেন উপচে পড়ছে বিরল এই অনুষ্ঠান ঘিরে। কারণ লতার জন্মদিন মোটেও ফি বছর পালিত হয় না।
মরাঠা প্রাণকেন্দ্রের মধ্যে অবস্থানকারী সেই হলে সচিন কথা বললেন মরাঠিতেই। প্রতিটি বাক্যের পরেই হাততালি। রাতে ফোনে এবিপি-কে তর্জমা করে দিলেন তাঁর বক্তব্যের:
...এই হলে যদি আজ পঁচাত্তর বছরের কেউ থেকে থাকেন, তিনিও ছোটবেলায় দিদির গান শুনেছেন। আমরাও শুনেছি। সব রকম এজ গ্রুপেই এটা অদ্ভুত মিল। লতা মঙ্গেশকর এমনই বিশাল বনস্পতি। আমি যখন প্রথম খেলতে শুরু করি, ওয়াকম্যানে গান শুনতাম। তার পর এল সিডি প্লেয়ার। তার পর সিডি ডিস্ক প্লেয়ার। তার পর আজকের দিনে আইপড। আমার ক্রিকেট কিটসের ভেতর যন্ত্রগুলো বদলে বদলে যেত। দিদির গান শুধু বদলাল না। রান কম করে আউট হয়েছি— মন খারাপ। কী শুনব— দিদির গান আছে দুঃখের সব। রান পেয়ে নিজেকে চাঙ্গা লাগছে, একটু গান শুনব। কী চালাব, সেই দিদি। সব সময়ই যেন উনি সীমাহীন বিস্ময়ের বাহন! ক্রিকেট নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছি। ওঁর জ্ঞান আর খোঁজখবরের গভীরতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি! ১৯৬৬ সালে উনি একটা বিখ্যাত গান গেয়েছিলেন ‘তু যহাঁ যহাঁ চলেগা মেরা সায়া’— ওই গানের নোটেশনটা আমার শততম সেঞ্চুরির পর নিজের হাতের লেখা সমেত উপহার দিয়েছিলেন। আমার ঘরে সেটা ফ্রেম করা রয়েছে। আজ বারবার বলা হচ্ছে আমি সম্মাননা জ্ঞাপন করতে এসেছি। আমি শুধু এটুকু বলি, আমি দিদিকে সম্মান জানাতে পারি না। তার যোগ্যই না। শুধু দিদির কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা করতে পারি...
নভেম্বরের সেই বিদায়ী ওয়াংখেড়ে বক্তৃতার মতোই সচিনের হাতে নোটস আর পরপর পয়েন্টস। প্রচণ্ড মিল। অমিল অবশ্য দাবি করলেন তাঁর এখনকার জীবনে। এবিপি-কে ফোনে বললেন, “জীবন আরও গতিশীল হয়ে গিয়েছে। ভরা আমার ডায়েরি। রোজ কিছু না কিছু। আগে তবুও তো খেলার মাঝে বিরতি থাকত।”