ফাইল ছবি
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা জানানোর পরে এখন কৌতুহল রোহিত শর্মা কী বলেন, তা নিয়ে। কিন্তু কোহলীর টুইটের পর ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রোহিত এখনও নিশ্চুপ।
টি-টোয়েন্টি ও এক দিনের ক্রিকেটে রোহিতকেই অধিনায়ক করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে টেস্টেও তাঁরই অধিনায়ক হওয়ার কথা। স্বাভাবিক ভাবেই সবার কৌতূহল, হবু অধিনায়ক সদ্য বিদায় নেওয়া নেতা সম্পর্কে কী বলছেন। বিশেষ করে কোহলীর একের পর এক অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর্বগুলো যেখানে চূড়ান্ত নাটকীয়।
তা ছাড়া যতই দু’ জনে মুখে বলুন, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, নানা ঘটনায় বার বার এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর সব থেকে বড় এবং সাম্প্রতিকতম উদাহরণ চোটের জন্য রোহিতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে সরে যাওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ রঘুর একটি বল আচমকা লাফিয়ে উঠে রোহিতের গ্লাভসে লেগেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে সুস্থ মনে হলেও পরে ব্যথা বেড়েছিল। শেষ পর্যন্ত সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বোর্ড বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, রোহিতের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট রয়েছে। সেই জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে পারছেন না। তার আগে এক দিনের ক্রিকেটে কোহলীকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। রোহিতের চোট নিয়ে এই নাটকের পর প্রশ্ন উঠেছিল, এই বিতর্কের মধ্যে কি রোহিত এখনই কোহলীর সঙ্গে খেলতে চাইছেন না?
দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে সেই বহু বিতর্কিত সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলীকে বলতে হয়েছিল, ‘‘আমার এবং রোহিতের মধ্যে কোনও খারাপ সম্পর্ক নেই। শেষ দু’বছর ধরে এক কথা বলে বলে আমি ক্লান্ত। একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, আমার কোনও সিদ্ধান্তে দলের ক্ষতি হবে না। দলকে সঠিক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। রোহিত দারুণ অধিনায়ক এবং কৌশলগত ভাবেও পারদর্শী। রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ওরা আমার থেকে ১০০ শতাংশ বার করে নেবে। টি-টোয়েন্টি এবং এক দিনের ক্রিকেটে ওরা যে লক্ষ্য ঠিক করবে দলের জন্য, আমি সেই ভাবেই কাজ করব।’’
এমনকী নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মাকেও সেই সময় বলতে হয়েছিল, “কোহলী এবং রোহিতের সঙ্গে আলাদা করে বসে আলোচনার কোনও দরকারই নেই। সবই ঠিকঠাক আছে। আমি বারবার বলি জল্পনায় কান না দিতে। ওদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ওদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। সব হিসেবমতোই চলছে। আপনারা যদি আমার জায়গায় থাকতেন, তা হলে দেখতে পেতেন ওরা কী ভাবে দলের স্বার্থে এক হয়ে, একটা পরিবারের মতো কাজ করে চলেছে। দেখে খারাপ লাগে যে ওদের সম্পর্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে এত চর্চা হয়। তাই ২০২১-এই এগুলো ফেলে আসুন। কী ভাবে সেরা দল গঠন করা যায়, সেটা নিয়ে বরং আলোচনা হোক।”
কিন্তু মুখে এঁরা যাই বলুন না কেন, দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। কোহলীর টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া নিয়ে এখনও রোহিতের মুখে রা নেই দেখে আবারও সেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে কোহলীর অন্য কয়েকজন সতীর্থ অবশ্য টুইট করেছেন। লোকেশ রাহুল লিখেছেন, ‘সব অর্থেই নেতা। তুমি যা করেছ, তার জন্য কোনও ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়, অধিনায়ক।’
যশপ্রীত বুমরার টুইট, ‘একাগ্রতা, অন্তর্দৃষ্টি, পরিপূর্ণতা। অধিনায়ক হিসেবে দলে তোমার অবদান অমূল্য। তুমি সত্যিই বিরাট নেতা। তোমার অধিনায়কত্বে খেলা উভোগ করেছি।’
কেপ টাউন টেস্টে হারার পরে যেখানে ব্যাটারদের তুলোধনা করেছিলেন, সেখানে ময়ঙ্ক অগ্রবালের প্রশংসা করেছিলেন কোহলী। সেই ময়ঙ্ক লিখেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত বছরগুলোর জন্য অভিনন্দন। তোমার অধিনায়কত্বে খেলা সম্মানের। দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নেতৃত্ব দিয়েছ। সবার মধ্যে জেতার মানসিকতা ঢুকিয়ে দিয়েছ। খেলার প্রতি তোমার ভালবাসা আমাদের কাছে অনুপ্ররণা। ধন্যবাদ অধিনায়ক।’
মহম্মদ শামির টুইট, ‘অধিনায়কত্ব বলতে যা বোঝায়, তুমি তাই। বিদেশে দলকে জিততে শিখিয়েছ। ভারত অধিনায়ক হিসেবে যা যা করেছ, তার জন্য অভিনন্দন। এ বার ব্যাট হাতে তোমার থেকে আরও অনেক কিছু দেখতে চাই।’
ইশান্ত লিখেছেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে মাঠে ও মাঠের বাইরে তোমার সঙ্গে যে স্মৃতিগুলো আছে, তার জন্য ধন্যবাদ। দু’জনের কেউই ভাবিনি, তুমি এক দিন আমার অধিনায়ক হবে বা আমি দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলে ফেলব। আমরা শুধু হৃদয় দিয়ে ক্রিকেটটা খেলে গিয়েছি। বাকিটা হয়ে গিয়েছে। এখনও মনে আছে, ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তুমি বলেছিলে, এ বার এই সব দেশে সিরিজ জেতার সময় হয়েছে। সেই সিরিজ আমরা জিততে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। ২০১৭-১৮ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে আমাদের হারতে হলেও আমরা জানি, দল হিসেবে কতটা লড়াই করেছিলাম।’
হনুমা বিহারীর টুইট, ‘সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ অধিনায়ক।’