হতাশ: দর্শক সমর্থন ছিল। কিন্তু পারলেন না রজার। গেটি ইমেজেস
চোট এবং হারের ধাক্কায় যতই তাঁকে কাবু দেখাক, এখনই অবসর নেওয়ার কোনও ভাবনা নেই রজার ফেডেরারের। বৃহস্পতিবার রড লেভার এরিনায় অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে নোভাক জোকোভিচের হাতে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অবসরের প্রশ্ন উড়িয়েই দিয়েছেন তিনি। ফেডেরার এমনও বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন এখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেন। তাই অবসর নেওয়ার প্রশ্নই নেই।
৩৮ বছরের ফেডেরারকে বিশ্বের দু’নম্বর নোভাক জোকোভিচ উড়িয়ে দেন ৭-৬ (৭-১), ৬-৪, ৬-৩ ফলে। প্রথম সেটে দারুণ শুরু করে ৪-১ এগিয়ে যান ফেডেরার। এর পরে নিজের সার্ভে জোকোভিচ ০-৪০ পিছিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরে আসেন সার্বিয়ার চ্যাম্পিয়ন। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে টাইব্রেকারে প্রথম সেট নেওয়ার পরে ফেডেরারকে আর দাঁড়াতেই দেননি তিনি। তবে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল, ফেডেরার পুরোপুরি সুস্থ নন। একেই তাঁর কুঁচকির চোট ছিল। পর-পর দু’টি ম্যারাথন ম্যাচ খেলে কাহিল ছিলেন। সঙ্গে এ দিন তাঁর ট্রেনার ইঙ্গিত করেন, কোমরেও চোট লেগেছে। কিন্তু ফেডেরারের খেলোয়াড়ি মনোভাবের প্রশংসা করেন সকলে। চোট থাকলেও ওয়াকওভার না দিয়ে তিনি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন বলে কুর্নিশ করতে ছাড়েননি জোকোভিচও। বলেন, ‘‘বলতেই হবে যে, কোর্টে নেমে খেলার জন্য রজারের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছে আমার। বোঝাই যাচ্ছিল, ওর চোট রয়েছে এবং নিজের সেরা ফর্মের ধারেকাছেও নেই। ভাল করে নড়াচড়াই করতে পারছিল না।’’
যদিও ম্যাচ হেরে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়, আর কখনও কি অস্ট্রেলীয় ওপেনে খেলতে দেখা যাবে ফেডেরারকে? ৩৮ বছরের তিনি চোট-আঘাতের ধাক্কায় জর্জরিত। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে সে সব জল্পনা উড়িয়ে দেন স্বয়ং ফেডেরার। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, নিজের ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের তালিকায় আরও খেতাব কি যোগ করার আশা রাখেন? ফেডেরারের জবাব, ‘‘হ্যাঁ, আমি সে রকমই বিশ্বাস করি। গত এক বছরে যে রকম আমি খেলেছি, যে রকম খেলে চলেছি, তাতে আশাবাদী না হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ গত বছরে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে ওঠেন তিনি। উইম্বলডনে দুর্ধর্ষ খেলে এই জোকোভিচের কাছেই পাঁচ সেটের থ্রিলারে হারেন। বলে গেলেন, মেলবোর্ন পার্কে আবারও ফেরার আশা রাখেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত জোকোভিচ জিতেছেন সাতটি অস্ট্রেলীয় ওপেন। ফেডেরার জিতেছেন ছ’টি। ফেডেরারকে হারিয়ে অষ্টম খেতাবের দিকে এগোলেন জোকার। তিনি— ফেডেরার কি আরও ট্রফি যোগ করতে পারবেন? ‘‘হতেও পারে, কে বলতে পারে! ভবিষ্যতে কার জন্য কী লেখা আছে, আগে থেকে বলা যায় নাকি? আমার যা বয়স, তাতে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী। আমি নিজেকে নিয়ে খুশি। ট্রেনিং করে এখনও আনন্দ পাচ্ছি। অবসরের ভাবনা এখনও আসেনি আমার মধ্যে।’’ যোগ করেন, ‘‘বছরটা কী ভাবে যাচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে, ওরা কী ভাবছে। সে সব দেখে তার পর না হয় ভাবা যাবে। তবে অবশ্যই আমি এখানে ফিরে আসতে চাই।’’ ম্যাচ শুরুর আগে মেলবোর্ন পার্কে ফেডেরারকে দেখা যায়, ডান পায়ের উপরের দিকে টেপ লাগিয়ে ঘুরছেন। তা দেখে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে, কোর্টে না নেমে তিনি ওয়াকওভারই দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ওয়াকওভার শব্দটিই ফেডেরারের অভিধানে লেখা নেই। জীবনে কখনও ম্যাচ খেলতে খেলতে তিনি ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হননি।
তবে চোটের জন্য যে ম্যাচের প্রস্তুতিও সে ভাবে নিতে পারেননি ফেডেরার, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ কোনও ওয়ার্ম-আপ ছাড়াই তিনি নেমে পড়তে বাধ্য হন। ‘‘আজ সত্যিই খুব খারাপ অবস্থা ছিল। দারুণ সাড়া পেয়েছিলাম কোর্টে ঢোকার সময়। দারুণ সাড়া পেলাম কোর্ট ছাড়ার সময়। কিন্তু এই দু’টো ব্যাপারের মাঝখানে যা ঘটল, তা মনে রাখার মতো নয়। আমি জানতাম, আজ আমার তিন শতাংশ জেতার সম্ভাবনাও নেই।’’ তবু তিনি নেমেছিলেন কারণ ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না মন। চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী? আগের দিন সাতটি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে সেমিফাইনালে উঠে বলেছিলেন, ‘‘টেনিস অলৌকিকে আমি বিশ্বাস করি।’’ কে বলতে পারে, অলৌকিক ফের ঘটবে না!
ফেডেরার-জোকোভিচ দ্বৈরথের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হল এ দিন। স্ট্রেট সেটে জেতার পরে জোকার এগিয়ে থাকলেন ২৭-২৩। মেলবোর্ন পার্কে চারটি সেমিফাইনালের চারটিই জিতেছেন জোকার। ‘‘যে ভাবে খেলছি, তা নিয়ে আমি খুবই খুশি,’’ বলে যান জোকোভিচ, ‘‘এটিপি কাপে খেলে নিজেকে অনেকটা তৈরি করতে পেরেছি আমি। সিঙ্গলস, ডাবলস খেলে অনেকটা সময় কোর্টে কাটাতে পেরেছি বলে অস্ট্রেলীয় ওপেনের জন্য প্রস্তুতিটা খুব ভাল হয়ে গিয়েছিল।’’ এখন দু’দিন বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন জোকোভিচ। তার পর জেরেভ বনাম থিমের বিজয়ীর সঙ্গে খেলতে নামবেন রেকর্ড অষ্টম অস্ট্রেলীয় খেতাবের লক্ষ্যে। ফেডেরার নেই, নাদাল নেই। তাই তিনি যে হট ফেভারিট, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যদি রবিবার খেতাব জিততে পারেন, গ্র্যান্ড স্ল্যামের দৌড়েও ফেডেরার এবং নাদালের আরও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করবেন। ফেডেরারের আছে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, নাদালের ১৯টি, রবিবার জিতলে জোকোভিচের হবে ১৭টি। আর ত্রয়ীর মধ্যে বয়সে সকলের ছোট হওয়ায় নোভাকই সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম নিয়ে শেষ করবেন কি না, সেই আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে মোলবোর্ন
পার্ক থেকে।