নাদালকে উড়িয়ে ১২তম উইম্বলডন ফাইনালে ৩৭-এর ‘তরুণ’ ফেডেরার

এত দিন ফেডেরারের ব্যাকহ্যান্ডকেই দুর্বলতা ধরে নিয়ে আক্রমণ করে এসেছে ওর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ফেডেরার তিন-চারটে ব্যাকহ্যান্ড বেস লইন থেকে মারলে, একটা ভুল জায়গায় পড়বেই ধরে নিত প্রতিপক্ষ।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৪:১০
Share:

রাজকীয়: উইম্বলডনে দেখা গেল ফেডেরারের সেই শাসন। নাদালকে হারিয়ে উল্লাস সুইস মহাতারকার। গেটি ইমেজেস

এখনও যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি! এ কোন রজার ফেডেরারকে দেখলাম, সাঁইত্রিশের না সতেরোর?

Advertisement

ম্যাচটা শুরু হওয়ার পরে ভেবেছিলাম প্রায় পাঁচ বছরের সিনিয়র ফেডেরারের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে আগ্রাসী খেলতে দেখব রাফায়েল নাদালকে। কয়েক দিন আগেই তো ফরাসি ওপেনে ফেডেরারকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিয়েছিল নাদাল। তা ছাড়া এ বার উইম্বলডনে দুরন্ত ছন্দে ছিল স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন। অনেকে ভেবেছিল ফেডেরার পারবে না ।

কিন্তু দেখা গেল উল্টোটাই। ফেডেরার ৭-৬, ১-৬, ৬-৩, ৬-৪ সেটে জিতল। কী সার্ভিস, কী ব্যাকহ্যান্ড, কী আগ্রাসন! কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব। এত দিন ফেডেরারের ব্যাকহ্যান্ডকেই দুর্বলতা ধরে নিয়ে আক্রমণ করে এসেছে ওর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ফেডেরার তিন-চারটে ব্যাকহ্যান্ড বেস লইন থেকে মারলে, একটা ভুল জায়গায় পড়বেই ধরে নিত প্রতিপক্ষ। কিন্তু শুক্রবার ফেডেরারের দুর্বলতাই ওর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। নিখুঁত ব্যাকহ্যান্ডে চমকে দিয়েছে নাদালকে।

Advertisement

শেষ বার দু’জন যখন সেন্টার কোর্টে মুখোমুখি হয়েছিল, সালটা ছিল ২০০৮। সেই মহাকাব্যিক লড়াইয়ের পরে এ বার উইম্বলডনের গোড়া থেকেই আবার দুই সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হওয়ার আশায় ছিলেন টেনিসপ্রেমীরা। কারণ, ড্র-এর এক দিকে সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট ছিল জোকোভিচ। অন্য দিকে নাদাল-ফেডেরার। টিভিতে দেখছিলাম, শুক্রবার শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচের সাক্ষী থাকতে স্টেডিয়াম তো বটেই, যাঁরা সেন্টার কোর্টের টিকিট পান না তাঁরাও জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখার জন্য ভরিয়ে তুলেছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে হেনম্যান হিল।

আসলে ফেডেরার জানত শুক্রবার নাদালের সঙ্গে র‌্যালিতে গেলে পারবে না। তাই শুরু থেকেই ছোট, ছোট পয়েন্টে খেলার চেষ্টা করে গিয়েছে, নেটে উঠে এসেছে। যাতে নাদাল জায়গা না পায়। সেই পরিকল্পনায় ফেডেরার পুরোপুরি সফল। তবে, প্রথম সেটে শুরু থেকেই দু’জনে খুব সতর্ক ভাবে খেলছিল। তাই সেটটা টাইব্রেকে গড়ায়। সেখানেই নাদাল প্রথমে ৩-২ এগিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ফেডেরার সেখান থেকে টানা পাঁচটা পয়েন্ট জিতে সেট দখল করে নেয়। যদি ওই সেটটা নাদাল জিততে পারত, ম্যাচের ফল অন্য দিকে গড়ানোর তবুও একটা সম্ভাবনা ছিল।

কিন্তু ফেডেরার ওই সেটটা জেতার পরে আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে নাদাল মরিয়া আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল দ্বিতীয় সেটের গোড়াতেই ফেডেরারের সার্ভিস ভেঙে দিয়ে। ফেডেরারের কৌশল ছিল নাদাল এগিয়ে গেলেও যতটা সম্ভব কম শক্তি খরচ করা। কারণ, ফেডেরার জানত পরের দুই বা তিন সেটে নাদাল ঘুরে দাঁড়াতে সর্বস্ব উজাড় করে দেবে। তাই হয়তো দ্বিতীয় সেটে ফেডেরারকে সে ভাবে পাল্টা লড়াই করতে দেখা যায়নি।

নাদাল সমতা ফেরানোর পরে তৃতীয় সেটে ফেডেরার আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। নাদালের সার্ভিসে আক্রমণ করাই ছিল ফেডেরারের কৌশল। তবু নাদাল সমানে পাল্লা দিয়ে গিয়েছে। ২৩, ২৪, ২৫ শটের র‌্যালি হয়েছে দু’জনের। তাতেও দমানো যায়নি ফেডেরারকে। উইনার মারার ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছে। কথায় আছে ভাগ্য সব সময় সাহসীর সঙ্গে থাকে। ফেডেরারের সঙ্গে যেন সেটাই হল।

চতুর্থ সেটের গোড়াতে ফের নাদালের সার্ভিস ভেঙে দেয় ফেডেরার। তখনই বোঝা যাচ্ছিল ম্যাচ নাদালের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে ফেডেরারের প্রতিপক্ষের নামটা যে রাফায়েল নাদাল সেটা চতুর্থ সেটে বুঝিয়ে দিয়েছে বিশ্বের দু’নম্বর। চারটে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে। ওই জায়গায় অন্য কোনও প্রতিপক্ষ থাকলে হয়তো ভেঙে পড়ত। নাদাল যদি চতুর্থ সেটে ৫-৫ ফলও করে ফেলতে পারত ম্যাচটা অন্য দিকে যেতে পারত। কিন্তু এ যেন কুড়ি বছর আগের অপ্রতিরোধ্য ফেডেরার। আট বারের চ্যাম্পিয়নের সাম্রাজ্য।

ফাইনালে ফেডেরার আর জোকোভিচের জেতার সম্ভাবনা ৫০-৫০। জানি জোকোভিচ প্রায় ছ’বছরের জুনিয়র। কিন্তু যে নাদালকে এই ভাবে হারাতে পারে, সে জোকোভিচকেও যে হারাবে না, কে বলতে পারে। আমি তো বলব, আরও দু’তিন বছর খেলে যাবে ফেডেরার। আর এই ফর্মে থাকলে রেকর্ড ন’নম্বর উইম্বলডন ট্রফি আর একুশ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামও জেতা আশ্চর্যের নয় চিরতরুণ রজারের!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement