মিষ্টিমুখ: শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র
খবরটা যখন পেলেন মেয়েকে জড়িয়ে আদর করতে ইচ্ছে করছিল স্বপ্না ঘোষের। কিন্তু সে তো খেলার জন্য বাড়ির বাইরে। মেয়েকে কাছে না পেয়ে তিনি চলে গেলেন মেয়ের খেলার সামগ্রীর কাছে। তার ব্যবহার করা ব্যাট, প্যাড, গ্লাভসে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ‘‘এ বার বিশ্বকাপে মেয়ের খেলা দেখব। লক্ষ্য স্থির রেখে নিজের সেরাটা দিয়ে গিয়েছে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। এতদিনে তা পূরণ হল।’’ শিলিগুড়ি হাতি মোড়ের বাড়িতে এই কথা বলার সময় চোখের কোণ চিকচিক করে উঠছিল রিচা ঘোষের মা স্বপ্নাদেবীর।
মেয়েদের সিনিয়র টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে শিলিগুড়ির মেয়ে রিচা ঘোষ। রবিবার বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ১৫ জনের দল ঘোষণা করা হয়। সেখানে রয়েছে রিচা। তার সাফল্য কামনা করে ট্যুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিবার জানাচ্ছে, মাত্র চার বছর বয়সে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় রিচার। আর পাঁচটা শিশুর মতো পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ক্রিকেট খেলত রিচা। খেলার প্রতি মেয়ের আগ্রহ দেখে বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে যান বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। পেশায় ব্যবসায়ী মানবেন্দ্রর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে এখন কলেজে পড়ে। ছোট মেয়ে রিচা ছোট থেকেই বাবার হাত ধরে ক্রিকেট মাঠে যেত বলে জানাচ্ছেন পরিচিতেরা। মানবেন্দ্র নিজেও ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতেন। তাই মেয়ের খেলার প্রতি প্রথম থেকেই যত্ন নিয়েছেন তিনি।
এখন রিচা তার বাবার সঙ্গে কলকাতায় রয়েছে। শিলিগুড়ির মার্গারেট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী রিচার এই বছর মাধ্যমিক রয়েছে। তবে তা নিয়ে বেশি ভাবছে না হাসিখুশি ষোড়শী। কলকাতা থেকে সে বলল, ‘‘আমি ভীষণ খুশি। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার।’’ তার বাবা মানবেন্দ্র বললেন, ‘‘আশা ছিল মেয়ে জাতীয় দলে খেলবে। এত তাড়াতাড়ি সুযোগ মিলবে ভাবিনি। ক্রমাগত সাফল্যই ওকে সুযোগ দিয়েছে।’’ মেয়ের ছোটবেলার কোচ থেকে বর্তমান প্রশিক্ষক, সিএবির কর্মকর্তা—সবাইকেই মেয়ের সাফল্যের শরিক করতে চান তিনি।
রিচার ছোটবেলার কোচ গোপাল সাহা জানান, রিচাকে দেখে অনেকে উৎসাহ পাবে। বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে ক্রিকেটে মেয়েদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’’ বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের সম্পাদক বিবেক সরকার বলেন, ‘‘ঋদ্ধিমানের মতই রিচার মানসিকতা ছিল জাতীয় দলে খেলা।’’ এখান ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শ্রেয়া হাজরা, শিঞ্জিনী সরকার, ডোনা বিশ্বাস। শ্রেয়ার কথায়, ‘‘রিচাদিকে লক্ষ্য রেখে এগোতে চাই।’’
২০১৬ সালে রাজ্য দলে সুযোগ পেয়েছিল রিচা। সেখানে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিল অনেকবার। সেই বছরই বাংলা দলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ চ্যালেঞ্জার ট্রফি খেলেছিল। পরে একে একে টি টোয়েন্টি এবং এক দিনের খেলায় অনেকবার ব্যাট হাতে ম্যাচ জিতিয়েছে। মূলত অলরাউন্ডার হলেও এখন ব্যাটসম্যান হিসাবেই খেলছে রিচা। ২০১৯ সালে বাংলা সিনিয়র দলের হয়ে টি টোয়েন্টিতেও ভাল খেলেছিল। সম্প্রতি মহিলাদের সিনিয়র টি টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে ভারতীয় বি দলের হয়ে খেলেছে সে। সেখানে তার খেলা নজর কেড়েছিল নির্বাচকদের। তার ভিত্তিতেই রিচার সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়া বলে মনে করছেন শিলিগুড়ির ক্রীড়াপ্রেমীরা। ঋদ্ধিমান সাহার পরে রিচার এই সাফল্যে খুশির হাওয়া শহর জুড়ে। এ দিন শহরের বিভিন্ন জায়গায় রিচার ছবি নিয়ে পদযাত্রা হয়েছে। সম্বর্ধনা জানাতে বাড়িতে জমেছে ভিড়।