বিষণ্ণ: চার দিনেই ম্যাচ শেষ। ওয়েলিংটন টেস্ট হেরে মাঠ ছাড়ছেন হতাশ কোহালি, বুমরা, রাহােনরা। এএফপি
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে ভারতের ১০ উইকেটে হার অন্য রকম লাগছে। আমার মতে, টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউজ়িল্যান্ডকে হারানোর পরে ওয়ান ডে সিরিজের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। আমার ধারণা, ওখানেই ভারতীয় দলের মনঃসংযোগ কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। যার প্রভাব এসে পড়ল টেস্ট ম্যাচে।
প্রথম টেস্টে বিরাট কোহালির দল হারল মূলত দু’টি কারণে। এক, নিউজ়িল্যান্ডের পেসারদের মোকাবিলা করা যায়নি। ২) ওয়েলিংটনের দামাল হাওয়া সামলাতে না পারা।
প্রথম টেস্টে ভারতীয় দলের বেশ কয়েক জনের অতি মন্থর ও রক্ষণাত্মক ব্যাটিংও প্রথম টেস্টে হারের একটা বড় কারণ। যার ফলে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো ব্যাটসম্যানের উপরে চাপ বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে চেতেশ্বর পুজারা ও হনুমা বিহারীর কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। মায়াঙ্ক আগরওয়াল বরং প্রকৃত ওপেনারের ভূমিকা পালন করেছে। ও খুব ভাল ড্রাইভ করে। এই নিউজ়িল্যান্ড দলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলের গতি কিছুটা কম। মায়াঙ্ককে ও বল করছিল শর্ট কভার ও শর্ট মিডঅন রেখে। উদ্দেশ্যটা ছিল অন কিংবা অফে ড্রাইভ মারতে প্রলুব্ধ করা। মায়াঙ্ক কিন্তু ওই সময়ে পরিস্থিতি বুঝে ড্রাইভ মারেনি।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন পুজারা ও মায়াঙ্ক ব্যাট করছিল তখন ২৮ বল খেলে পুজারা করেছিল, ৬ রান। এতে স্কোরবোর্ডে রান বাড়ানোর জন্য চাপ বেড়েছিল মায়াঙ্কের উপরে। এ রকম অতি-রক্ষণাত্মক হলে বিপক্ষ বোলাররা মাথায় চড়ে বসবেই। নিউজ়িল্যান্ডের পেসাররাও ঠিক সেটাই করেছে।
জানা নেই ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজ়িল্যান্ড কোনও স্পিনার খেলাবে কি না। কারণ গ্র্যান্ডহোমকে ওরা আধা পেসার ও আধা স্পিনার হিসেবে ব্যবহার করছে। গ্র্যান্ডহোমের বলের গতি বেশি নয়। উইকেট টু উইকেট বল করে ও ব্যাটসম্যানেদের মারার জায়গা দেয় না। অনেকটা আমাদের সময়ে মোহিন্দর অমরনাথের মতো। প্রথম ইনিংসের পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের রানটা চেপে দিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেদের উপরে আরও চাপ বাড়িয়েছিল গ্র্যান্ডহোম।
চেতেশ্বর পুজারা ধীর গতির ইনিংস খেলার সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হওয়ার সময়ে যে ভাবে বলটা ছাড়ল, তা পুজারার মতো ব্যাটসম্যানের কাছে প্রাপ্য নয়। পৃথ্বী শ-কে দেখে আমার মনে হয়েছে, লাফিয়ে ওঠা বলে ওর সমস্যা হচ্ছে। আর বিরাট কোহালির দু’ইনিংসে বড় রান না পাওয়া সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন, ভারত অধিনায়ককে নিয়ে নিউজ়িল্যান্ড ভাল পরিকল্পনা করেছে। বিরাট খুব ভাল কভার ড্রাইভ মারে। কিন্তু সাউদিরা ওকে অনেক বেশি শর্ট বল করে পিছনের পায়ে নিয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেটে একটা কথা রয়েছে, চোখের উপরের বল খেলতে যেয়ো না। আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রান বাড়াতে গিয়ে সেই চোখের উপরের বল মারতে গিয়েই কট বিহাইন্ড হয়েছে।
ভারতের হারের আরও একটা বড় কারণ আমার মতে, নীচের সারির ব্যাটসম্যানেদের রান না পাওয়া। যে রানটা কাইল জেমিসন বা গ্র্যান্ডহোম করেছে। এ প্রসঙ্গে ঋষভ পন্থকে আমি দোষারোপ করছি না। কারণ, প্রথম ইনিংসে ঋষভ রান আউট হয়েছে অজিঙ্ক রাহানের ভুলে। ০-১ পিছিয়ে গিয়ে ক্রাইস্টাচার্চের পরবর্তী টেস্টে ভারতীয় দল প্রত্যাবর্তনের জন্য কী দল বাছবে তা জানা নেই। কিন্তু আমার মতে, আর অশ্বিনকে বসিয়ে ওই ম্যাচে খেলানো হোক রবীন্দ্র জাডেজাকে। কারণ ও ইনিংস ধরার পাশাপাশি, ৪০-৫০ রান করে দিতে পারবে। এতে নীচের সারির ব্যাটসম্যানেদের রান না পাওয়ার সমস্যা দূর হবে। পেসারদের মধ্যে ইশান্ত ও শামি এই টেস্টে ভালই বল করল। তবে বুমরাকে নিউজ়িল্যান্ড খুব ভাল সামলাল। ওকে একটু ম্লান লাগল। পরের টেস্টে বুমরাকেও উজ্জীবিত হয়ে বল করতে হবে।