একাকী, কলম্বোয় টিম হোটেলে। ছবি: দেবাশিস সেন
সোমবার কলম্বোয় বসে বললেন ভারতীয় টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস ধুয়ে যাওয়ার পর টিম হোটেলেই প্রেস কনফারেন্স করলেন একরাশ আক্রমণাত্মক প্রশ্নের মাঝে। কবুল করলেন গলের হার তাঁদের নাকি এমন নড়েচড়ে বসিয়েছে যে, সে দিন দু’ঘণ্টা টানা পোস্টমর্টেম না করে কেউ গল স্টেডিয়াম ছাড়েননি।
প্রশ্ন: চাপের মুখে পারফর্ম করা আপনার বিশেষত্ব ছিল ক্রিকেট জীবনে। এই টিম তো ঠিক উল্টো। চাপ এলেই ভেঙে পড়ে। সে কী অ্যাডিলেড হোক। কী গল। তা হলে আর কী শেখাতে পারছেন এই টিমকে?
শাস্ত্রী: অ্যাডিলেড আর গল এক নয়। অ্যাডিলেডে ড্রয়ের জন্য খেলতে গেলে ম্যাচটা আরও আগেই শেষ হয়ে যেত। আমরা খুব সাহসিকতার সঙ্গে খেলেছিলাম বলেই ম্যাচটা অত কাছে গেছিল। গলে ওই অ্যাটিটিউডটাই দরকার ছিল যা আমরা দেখাতে পারিনি।
প্র: এত বিশ্রী হার থেকে কী ভাবে টিমকে টেনে তুলবেন বলে ভাবছেন?
শাস্ত্রী: হারের ধরনটা যে খুব খারাপ ছিল মেনে নিতে অসুবিধে নেই। আমাদের ড্রেসিংরুম তার পর দু’ঘণ্টা ধরে অবিরাম এটা নিয়েই আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে যে কী ঘটল? আমরা একমত হই যে, এমন হার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে এবং দ্রুতই শেখার আছে। কোনও অজুহাত দিচ্ছি না তবে আমরা পোস্টমর্টেমের জন্য কিছু ফেলে রাখিনি। এ বার দেখা যাক।
প্র: এই যে এত অ্যাটাকিং ক্রিকেট খেলব খেলব বলে তড়পালেন আপনারা— কোথায় গেল সেই অ্যাটাকিং ক্রিকেট?
শাস্ত্রী: অ্যাটাকিং ক্রিকেট লাস্ট দিনে খেলল কোথায়! সবাই তো কেমন ভয়ে সিঁটকে থাকল।
প্র: চণ্ডীমল যখন মারছিলেন। পরের দিন যখন ইন্ডিয়ার পরপর উইকেট পড়া শুরু হল, তখন আপনি কী ভাবে পরিচালনা করছিলেন?
শাস্ত্রী: আমি ওদের যা বলার বলেছি। এখনও বলেই যাব যে সিঁটকে থাকলে হবে না। তোমাদের মধ্যে জেতার সব রকম মশলা আছে। একটা জিতলেই দেখবেন বোর্ডে পরপর নাম উঠবে। কিন্তু সেই একটা যতক্ষণ না আসে, আমি হাতুড়ির ঘা মেরেই যাব।
প্র: রোহিত শর্মা কি এর পরেও তিন নম্বরে খেলবেন?
শাস্ত্রী: দেখা যাক। সেকেন্ড টেস্ট শুরুর আগে পিচের কন্ডিশন দেখি।
প্র: আপনি আর বিরাট এখানে আসার পর থেকে একটা নির্দিষ্ট আগ্রাসী মাইন্ডসেটের কথা বলছেন। এটা কী একটু বুঝিয়ে বলবেন? কারণ আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না।
শাস্ত্রী: এটা হল মাথাটা অতীত থেকে সম্পূর্ণ ক্লিয়ার করে ফেলে শুধু বর্তমানে রাখা। আমরা যেন সেকেন্ড টেস্ট খেলতে নামার আগে আবার ফার্স্ট টেস্টের ব্যর্থতায় ফেরত না যাই। এটা নতুন ম্যাচ। মাইন্ডটা আবার জিরো থেকে এগোবে।
প্র: বিরাটের অধিনায়কত্ব কি অনেক জায়গায় মনে হয়নি আপনার একটু বেশি আক্রমণ আরোপিত?
শাস্ত্রী: কী রকম?
সোমবারের শাস্ত্রী। কখনও সাংবাদিকদের মাঝে।
প্র: যখন অশ্বিন একটা এন্ড থেকে এত ভাল বল করছে তখন হঠাৎ ওকে সরিয়ে হরভজনকে নিয়ে এল। আপনি দেখুন শ্রীলঙ্কা কী ভাবে হেরাথ আর কৌশলকে টানা রেখে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করেছে। আর ভারত হুটহাট বোলার বদলাল।
শাস্ত্রী: হতে পারে। বিরাট তিন স্পিনার নিয়ে তো আগে ক্যাপ্টেন্সি করেনি। ওকে শিখতে একটু সময় দিতে হবে। ও নিজেও নিশ্চয়ই বসে ভেবেছে কী ভাবে ম্যাচটা হাত থেকে ফসকে গেল। চালে কী কী ভুল হয়ে থাকতে পারে। ব্যাটিংয়ে যেমন দ্রুত শিখেছে ক্যাপ্টেন্সিটাও ও তাড়াতাড়ি শিখবে এটা আমি বলতে পারি।
প্র: স্পিনারের স্বর্গরাজ্যে ভাজ্জির পারফরম্যান্স এমন খারাপ হল কেন?
শাস্ত্রী: যে মানুষটা কামব্যাক করছে তাকে একটু সময় দিতেই হবে। একটু সময় নিজেকে গুছিয়ে নিতে লাগবে ওর।
প্র: আপনার কি মনে হয় না শ্রীলঙ্কা এই অযাচিত সাফল্য পেয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্ট হয়ে যাবে না?
শাস্ত্রী: হ্যাঁ, ওরা কনফিডেন্স পেয়ে গেল এটা সত্যি কথা। কিন্তু পরমুহূর্তেই ওরা চিন্তা করবে যে, কোন টিম ম্যাচটার বেশির ভাগ ডমিনেট করেছিল? তারা কারা? আর আমার ভাবনাও এক জায়গায় দু’বার বাজ পড়ে না। ভাগ্যের মার আজ যদি আমরা খেয়ে থাকি কাল ওদের টার্নও তো হতে পারে!