পরামর্শ: অশ্বিনদের তীক্ষ্ণ করে তুলেছিলেন বোলিং কোচ বি অরুণ। ফাইল চিত্র
মার্নাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথদের লেগের ফাঁদে জড়িয়ে কী করে বিভ্রান্ত করা যায়, তা অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছনোর আগেই ঠিক করে ফেলেছিল ভারতীয় দল। স্মিথরা অফস্টাম্পেই যে বেশি শক্তিশালী তা বহু আগে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। জুলাইয়ে সারা বিশ্ব যখন লকডাউনে স্তব্ধ, এই অভিনব নকশা তৈরি হয় তখনই। হঠাৎই একদিন বোলিং কোচ বি অরুণকে ফোন করেন শাস্ত্রী। স্মিথদের জব্দ করার উপায় খুঁজতে বলেন তাঁকে।
অরুণ ও শাস্ত্রী দু’জনেই লক্ষ্য করেছিলেন, শরীরের ভেতর দিকের বল খেলতে সমস্যায় পড়েন স্মিথ। নিউজ়িল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা লেগস্টাম্প লক্ষ্য করে বল করেই আটকে রেখেছিলেন স্মিথকে। হেড কোচ ও বোলিং কোচ ঠিক করেন, এ ভাবেই অস্ট্রেলিয়ার দুই সেরা অস্ত্রকে ঘায়েল করবে ভারত। শুক্রবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে সেই নকশা তুলে ধরেন বোলিং কোচ। অরুণ বলেন, “শাস্ত্রী ফোন করে আমাকে বলেছিল, অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের অফস্টাম্পে কোনও বল করা যাবে না। নিউজ়িল্যান্ডকে দেখেছিলাম টানা লেগস্টাম্পে বল করে স্মিথদের ক্রিজে আটকে রেখেছিল। লেগস্টাম্প সাজিয়ে বল করলে, ব্যাটসম্যানদের রান করার একটাই উপায়। ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে মেরে রান বার করা। টেস্টে সচরাচর যা করে না।” যোগ করেন, “শাস্ত্রীর সঙ্গে জুলাইয়েই সিরিজের নকশা সাজিয়ে নিই। তারপর বিরাটকে জানাই। অ্যাডিলেডে শুরু হয়েছিল এই অধ্যায়। বোলাররা অসাধারণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছিল এই
পরিকল্পনার সঙ্গে।”
চতুর্থ টেস্টের আগে চোট পেয়ে ছিটকে যান যশপ্রীত বুমরা ও আর অশ্বিন। ভারতের কাছে তখন সব চেয়ে অভিজ্ঞ পেসার মহম্মদ সিরাজ। দুই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। একটি করে ম্যাচ খেলেছিলেন নবদীপ সাইনি ও শার্দূল ঠাকুর। স্পিন বিভাগে অশ্বিনের বিকল্প ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। পেস বিভাগে সিরাজ, শার্দূল, সাইনির সঙ্গে নেওয়া হয় টি নটরাজনকে। কী করে তাঁদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করা হল যে, বিপক্ষের ২০টি উইকেট তুলতে তাঁরাই যথেষ্ট? অরুণের উত্তর, “ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যেকের উইকেট আছে। আমি শুধু বলেছিলাম, টেস্টে ভুল করার জায়গা একেবারেই নেই। ভুল যত কম হবে, ততই চাপে রাখা যাবে বিপক্ষকে।” তিনি আরও বলেন, “নেট বোলারদের অস্ট্রেলিয়ায় রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল শাস্ত্রীর। প্রত্যেক নেট বোলারকে সমান সময় দেওয়া হত, ঠিক যেমন প্রথম দলের কোনও বোলারকে দেওয়া হয়। ওদের জন্য নির্দিষ্ট লাইন ঠিক করে বল করতে বলা হত। নেট সেশন শেষে প্রত্যেকের সমস্যা জানার চেষ্টা করতাম। সেই অনুযায়ী উপায় বলে দেওয়া হত। এই ফল এক দিনের নয়। গত তিন-চার বছর ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে।”
অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসা কতটা কঠিন ছিল? অরুণের জবাব, “অ্যাডিলেড টেস্টের পরে শাস্ত্রী বলে দিয়েছিল, আমরা ০-৪ ফলেও হারতে রাজি। কিন্তু আমাদের প্রমাণ করতে হবে প্রত্যেকে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। ভারত যে ধরনের ক্রিকেট খেলতে অভ্যস্ত, সেটা কিন্তু তুলে ধরতে হবে প্রত্যেকের সামনে।”
অরুণ জানিয়েছেন, জেতার জন্য হারের ভয় দূর করা খুব জরুরি। তাঁর কথায়, “ভারতের এই হার-না-মানা মানসিকতা তৈরি হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। একটা দল হারের ভয় তখনই পায়, যখন তারা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে না। আমাদের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি ছিল না। তাই ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পরেও সিরিজ থেকে আমরা হারিয়ে যাইনি।”