উচ্ছ্বাস: সেঞ্চুরির পরে রামন। বুধবার ইডেেন। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
স্কোয়্যার লেগের উপর দিয়ে ছয় মেরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের চতুর্থ সেঞ্চুরি করলেন অভিষেক রামন। কিন্তু উচ্ছ্বাস দেখা গেল না বাঁ-হাতি ওপেনারের। বুঝিয়ে দিলেন, বড়দিনে এমন একটা ইনিংস খেলার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিলেন। বাংলা শিবিরে তিনিই এখন সেরা ভরসা।
২০০৬ সালে দিল্লি থেকে কলকাতা এসেছিলেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। পাঁচ বছর বনগাঁয় অপু সেনগুপ্তের কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন করেই উত্থান তাঁর। ঘাসে ভরা উইকেটে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দিলেন রামন। প্রথম ম্যাচে কেরলের বিরুদ্ধে ১১০। এ দিন ২৫৫ বলে ১১০ রানে অপরাজিত। বাংলার রান ২৪১-৪।
বুধবার টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন অন্ধ্রপ্রদেশ অধিনায়ক হনুমা বিহারী। দিনের প্রথম দু’ঘণ্টা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তিন পেসারকে নিয়ে। ম্যাচের দ্বাদশ ওভারে বাঁ-হাতি পেসার সি স্টিভনের ডেলিভারি অভিমন্যু (৬) ফেরেন উইকেটকিপার শ্রীকর ভরতের হাতে ধরা পড়ে। ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলা। হনুমা তখন হয়তো ভেবেছিলেন পরিকল্পনা কাজ দিচ্ছে। কিন্তু রামন ও কৌশিক ঘোষ সেই ভাবনায় জল ঢেলে দিলেন। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার দায়িত্ব নিলেন রামন। অন্য দিক থেকে কৌশিক স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্ব নেন। লাঞ্চ পর্যন্ত এ ভাবেই চলে দু’জনের জুটি। দ্বিতীয় সেশনের পঞ্চম ওভারে অফস্পিনার মহম্মদ শোয়েব খানের ফ্লোটার প্যাডে আছড়ে পড়ে কৌশিকের। ৬৯ বলে ৩৭ রান করে ফিরে যান বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
বাংলা যদিও তাদের রণকৌশলে ছিল অনড়। পৃথ্বীরাজ ইয়ারা, স্টিভন ও শশীকান্তের পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ান প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। তিনি বরাবর বিপক্ষকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন। এ দিন অফস্পিনার মহম্মদ শোয়েবকে স্টেপ আউট করে ছয় মেরে ইনিংস শুরু করলেন। ক্রিজের এক ফুট বাইরে দাঁড়িয়ে পেসারদের সুইং সামলালেন। মনোজকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য শর্ট বল করার পরিকল্পনা নেন বাঁ-হাতি পেসার পৃথ্বী। কিন্তু পুল, হুক, স্কোয়্যার কাটে মনোজ রইলেন আগ্রাসী মেজাজে। রামনের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়লেন তিনি। কিন্তু সেই শর্ট বলের ফাঁদে পা দিয়েই হাফসেঞ্চুরি হাতছাড়া হল মনোজের। ডিপ ফাইন লেগ ও ডিপ স্কোয়্যার লেগ রেখে ক্রমাগত খাটো লেংথের বল করে তাঁকে চাপে রাখতে চাইছিলেন পৃথ্বীরাজ। ধৈর্য হারিয়ে হুক করেন মনোজ। গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় ভরতের হাতে। ৪৬ রান (৭৮ বলে) করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
রামন কিন্তু একবারের জন্য লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। ৮৯ থেকে চার মেরে ৯৩ রানে পৌঁছনোর পরে স্নায়ুর চাপ শুরু হয় তাঁর। এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চার বার ৯০-এর ঘরে আউট হয়েছেন। ৯৩ রানে শেষ হয়ে যেতে পারত রামনের ইনিংস। ৬৯তম ওভারে শোয়েবের বলে স্টেপ আউট করে বড় শট মেরে দ্রুত সেঞ্চুরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। বল বেশি ঘোরায় পরাস্ত হন রামন। ভরত স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না। পরের ওভারে শশীকান্তের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গন্ডগোল হয়ে যায়। স্কোয়্যার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা জ্ঞানেশ্বরনের হাতে চলে যেতে পারত সেই শট। ভাগ্যই রামনকে সঙ্গ দিল। প্রথম দিনের শেষে রামন বলছিলেন, ‘‘খুব চাপ তৈরি হয়েছিল। ৯০-এর ঘরে বহু বার আউট হয়েছি। সেটাই মাথায় ঘুরছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘কাল প্রথম এক ঘণ্টা উইকেট না পড়লে বিপক্ষের উপরে বড় রানের চাপ তৈরি করতে পারব।’’ যদিও সহ-অধিনায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (১৮) ফের ব্যর্থ।
প্রথম দিনের শেষে সমস্যায় অন্ধ্রপ্রদেশও। শেষ দু’ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আসা রিকি ভুঁই দিনের শুরুতে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। বাঁ-হাতি পেসার পৃথ্বীরাজের পায়ের পেশিতে টান ধরে। ঝাঁপিয়ে বল ধরতে গিয়ে কাঁধের হাড় সরে গেল মণীশ গোলামারুর। রিকি ও পৃথ্বীর চোট গুরুতর না হলেও মণীশ হয়তো ম্যাচের বাইরেই চলে গেলেন।