রঞ্জিতে ফাইনালে ফের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে বাংলার। কিন্তু ট্রফি জিততে না পারলেও থেকে গিয়েছে লড়াই। স্মৃতিতে উজ্জ্বল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও জ্বলে ওঠার একের পর এক উদাহরণ। আর রয়েছে পারফরম্যান্স। আমাদের বেছে নেওয়া সদ্যসমাপ্ত রঞ্জি ট্রফির সেরা একাদশে যার জোরে জায়গা করে নিয়েছেন একাধিক বঙ্গ ক্রিকেটার। আপনার বেছে সেরা দলের সঙ্গে আমাদের তৈরি করা দলের মিল কতটা, দেখে নিন।
অভিনব মুকুন্দ: তামিলনাড়ুর বাঁ-হাতি ওপেনার এই মরসুমে ছয় ম্যাচে ৫৬৪ রান করেছেন। গড় ৭০.৫০। সর্বোচ্চ ২০৬। এ বারের রঞ্জিতে ওপেনাররা তেমন সাফল্য পাননি। কিন্তু তার মধ্যেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছেন মুকুন্দ। রঞ্জিতে খেলেছেন শততম ম্যাচ। আর তাতে সেঞ্চুরিও করেছেন। আরও ম্যাচ পেলে রান বাড়ত তাঁর।
দেবদূত পাদিকাল: রঞ্জি ট্রফি শুরুর আগে বিজয় হাজারে ট্রফি ও সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সর্বাধিক রান করেছিলেন এই কর্নাটকি। দেবদূত সেই ফর্মেই রঞ্জিতে ১০ ম্যাচে ৪০.৫৬ গড়ে করেন ৬৪৯ রান। সর্বাধিক ৯৯। রঞ্জিতে প্রথম ছয় ম্যাচের প্রতিটিতেই করেন হাফ-সেঞ্চুরি। কিন্তু পরের চার ম্যাচে আসে মাত্র একটি পঞ্চাশ। সেমিফাইনালে বাংলার কাছে হেরে যায় কর্নাটক। তবে সেই ম্যাচেও ভাল ব্যাট করেন তিনি।
শেলডন জ্যাকসন: চ্যাম্পিয়ন সৌরাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জিতে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ১০ ম্যাচে ৫০.৫৬ গড়ে করেছেন ৮০৯ রান। সেঞ্চুরি তিনটি। হাফ সেঞ্চুরি তিনটি। সর্বাধিক ১৮৬। সৌরাষ্ট্রের ট্রফি জয়ের নেপথ্যে ব্যাট হাতে তাঁর দেওয়া নির্ভরতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সরফরাজ খান: এ বারের রঞ্জি ট্রফির সেরা ব্যাটসম্যান বলা হচ্ছে মুম্বইকরকে। ছয় ম্যাচে ১৫৪.৬৬ গড়ে ৯২৮ রান করেছেন তিনি। যে পরিসংখ্যান চোখ কপালে তোলার মতোই! বৃষ্টির কারণে টানা দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি। তবে ১৭৭, অপরাজিত ২২৬, অপরাজিত ৩০১... স্কোরগুলোই বলছে তিনি রান করে গিয়েছেন দাপটে। প্রতিভা নিয়ে সংশয় ছিল না, কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবের অভিযোগ ঘুচিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্টুপ মজুমদার: বাংলার মুশকিল আসান। যখনই দল বিপদে পড়েছে, পরিত্রাতা হয়ে উঠেছেন অনুষ্টুপ। আট ম্যাচে ৫৮.৬৬ গড়ে ৭০৪ রানে তারই প্রতিফলন। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে দলকে সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছেন একক কৃতিত্বে। ফাইনালেও টানছিলেন দলকে। কিন্তু ক্ষণিকের ভুলে সব শেষ। অনুষ্টুপ ফিরতেই বাংলার রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন চুরমার।
আনমোল মলহোত্র: পঞ্জাবের হয়ে এই মরসুমে ধারাবাহিক থেকেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। আট ম্যাচে ৫২ গড়ে করেছেন ৪৬৮ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১৯। পাশাপাশি, নিয়েছেন ২৫ ক্যাচ। দুটো স্টাম্পিংও রয়েছে। কঠিন সময়ে তিনিও বার বার জ্বলে উঠেছেন।
পারভেজ রসুল: জম্মু ও কাশ্মীরের হয়ে ব্যাটে-বলে ধারাবাহিক থেকেছেন তিনি। অফস্পিনে ১৫.৭৪ গড়ে নিয়েছেন ৩১ উইকেট। ৪৫ রানে সাত উইকেট ইনিংসে সেরা বোলিং। ম্যাচে সেরা হল ৭৩ রানে ১২ উইকেট। মাত্র ছয় ম্যাচে ৩৬.৯০ গড়ে করেছেন ৪০৬ রান। রয়েছে দুটো সেঞ্চুরিও। সর্বাধিক ১২৮।
শাহবাজ আহমেদ: সাত নম্বরে অবশ্যই থাকবেন বাংলার বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। এই মরসুমের প্রাপ্তি বলে চিহ্নিত হচ্ছেন তিনি। ১১ ম্যাচে ৩৬.৩৫ গড়ে করেছেন ৫০৯ রান। সর্বাধিক ৮২। বাঁ-হাতি স্পিনে ১৬.৮০ গড়ে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। ৫৭ রানে সাত উইকেট ইনিংসে তাঁর সেরা বোলিং। ম্যাচে সেরা হল ১০১ রানে ১১ উইকেট।
হর্শল প্যাটেল: হরিয়ানার পেসারের দুর্দান্ত গিয়েছে মরসুম। ১৪.৪৮ গড়ে নিয়েছেন ৫২ উইকেট। ২৯ রানে সাত উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। ম্যাচে সেরা বোলিং হল ৫৩ রানে ১২ উইকেট। শুধু বোলিংয়েই নয়, ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। নয় ম্যাচে ২২.৪৬ গড়ে করেছেন ২৯২ রান।
জয়দেব উনাদকাট: সৌরাষ্ট্রের রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক যথারীতি এই দলেরও ক্যাপ্টেন। ১৩.২৩ গড়ে নিয়েছেন ৬৭ উইকেট। ৫৬ রানে নিয়েছেন সাত উইকেট। ১০৬ রানে ১২ উইকেট তাঁর ম্যাচে সেরা বোলিং। ক্রিকেটমহলের মতে, এ বারের রঞ্জির সেরা ক্রিকেটার তিনিই। দলের প্রয়োজনে বার বার উজাড় করে দিয়েছেন বাঁ-হাতি পেসার।
আকাশ দীপ: বাংলার মতো এই দলেরও তিন নম্বর পেসার হলেন তিনি। ২৩ বছর বয়সির এই মরসুমেই অভিষেক হয়েছে। এমনই ধারাবাহিক ছিলেন যে, অশোক ডিন্ডার অভাব বুঝতে দেননি একেবারেই। নয় ম্যাচে ১৮.০২ গড়ে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। ৬০ রানে ছয় উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমারের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি বাংলার পেস আক্রমণের ধার বাড়িয়েছিল।