Bengal

পিচ বিতর্কে মোড়, প্রশ্নের মুখে রাজকোট প্রস্তুতকারক

প্রথম দিনের শেষেই বাংলার কোচ অরুণ লাল বলে দিয়েছিলেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফির ফাইনালের যোগ্য নয় এই পিচ। প্রথম দিন থেকেই যেখানে বল গড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ দিন কী হবে?’’

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

রাজকোট শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৬:৫৮
Share:

মনোজ তিওয়ারির উইকেট নেওয়ার পর সৌরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের উচ্ছাস।—ছবি পিটিআই।

পিচ নিয়ে জট কাটছে না। যত সময় যাচ্ছে, অবনতি ঘটছে এসসিএ স্টেডিয়ামের বাইশ গজের। বুধবার ম্যাচের তৃতীয় দিনে অন্তত পাঁচ বার বল গড়িয়ে গিয়েছে। সঙ্গ দিচ্ছে অসমান বাউন্স। মঙ্গলবার পর্যন্ত বল নিচু হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। এ দিন আচমকা বল লাফিয়ে উঠতেও দেখা যায়।

Advertisement

প্রথম দিনের শেষেই বাংলার কোচ অরুণ লাল বলে দিয়েছিলেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফির ফাইনালের যোগ্য নয় এই পিচ। প্রথম দিন থেকেই যেখানে বল গড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ দিন কী হবে?’’ দ্বিতীয় দিন প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘বোর্ড অনুমোদিত পিচ প্রস্তুতকারক কেন মাত্র তিন দিন আগে এসেছিলেন?’’ অরুণের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা। এতটাই চটে গিয়েছে তারা যে, স্থানীয় কিউরেটর মহেন্দ্র রাজদেবের বিবৃতি পৌঁছে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের হাতে। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘প্রথম দিনের শেষে ‌বাংলার কোচ অরুণ লালের বক্তব্যে আমি বিস্মিত। সে দিন বাংলা ভাল জায়গায় ছিল। তবুও কেন ‌তিনি এই মন্তব্য করলেন পরিষ্কার নয়। হয়তো এই পিচ থেকে তাঁর দলের পেসারেরা সাহায্য পাচ্ছেন না, তার অর্থ এটা নয় যে, পিচ খারাপ। এ ধরনের মন্তব্য করে তিনি হয়তো নিজের ক্রিকেটারদের প্রতি সুবিচার করছেন না। দু’দল তো একই পিচে খেলছে। যা বানিয়েছে বোর্ড অনুমোদিত পিচ প্রস্তুতকারক।’’

বিতর্ক এখানেই। পিচ যখন বানিয়েছেন বোর্ড অনুমোদিত প্রস্তুতকারক, তা হলে স্থানীয় কিউরেটরের চটে যাওয়ার কারণ কী? বোর্ডের কিউরেটারের বক্তব্য না নিয়ে কেন তিনি মন্তব্য করলেন? ফাইনালের বাইশ গজ তৈরির নেপথ্যে তাঁর অবদান নেই তো? সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার সচিব হিমাংশু শাহ বলছিলেন, ‘‘আমাদের বাইশ গজ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করলে স্থানীয় কিউরেটরের খারাপ তো লাগবেই। সারা বছর তিনিই দেখাশুনো করেন।’’ যোগ করেন, ‘‘অরুণ লাল তাঁর বক্তব্য রেখেছেন। আমরাও নিজেদের বক্তব্য রাখলাম।’’

Advertisement

বুধবার ম্যাচ শেষে অরুণকে এ বিষয়ে জানানো হয়। ফের তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগেও যা বলেছি, এখনও একই কথা বলব। রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল এ ধরনের উইকেটে হওয়ার যোগ্য নয়। দেখাই তো যাচ্ছে যে, বল গড়িয়ে যাচ্ছে। এ বার তো ভয় লাগতে শুরু করেছে। চোট-আঘাত লাগলে কী হবে?’’

আম্পায়ারিং নিয়েও সমস্যা দেখা গিয়েছে তৃতীয় দিন। শামশুদ্দিনের পরিবর্তে এ দিনই যোগ দিয়েছেন যশবন্ত বার্দে। আর প্রথম দিনেই বিতর্কের মুখে ‌তিনি। যশবন্তের দু’টি সিদ্ধান্ত বাংলা শিবিরে আঁধার নামিয়ে আনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। প্রথমটি অভিমন্যু ঈশ্বরনের বিরুদ্ধে। লাঞ্চের ঠিক আগে বাংলার ইনিংসের ১৫তম ওভারে বঙ্গ অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ দেওয়া হয়। আংশিক ডিআরএস ব্যবহার করে দেখা যায় প্যাডের ‘ফ্ল্যাপ’-এ লাগছে বল। ইমপ্যাক্ট একেবারে লেগস্টাম্পে। বল ট্র্যাকিং থাকলে কোনও ভাবেই আউট হতেন না অভিমন্যু। প্রেরক মাঁকড়ের ইনসুইং লেগস্টাম্প ছাড়িয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু অসহায় টিভি আম্পায়ার। এস রবির হাতে কোনও উপায় ছিল না তাঁকে বাঁচানোর। আংশিক ডিআরএস-এ বল আদৌ স্টাম্পে লাগছে কি না, তা দেখানো সম্ভব নয়। ৯ রান করে ফিরে যান ঈশ্বরন। দলের স্কোর তখন ৩৫-২। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত দিনের শেষে। দলের রান তখন ১৩৩-৩। ৪৭ রানে ব্যাট করছিলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার চেতন সাকারিয়ার রিভার্স সুইংয়ে পরাস্ত হন সুদীপ। এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত দেন যশবন্ত। সঙ্গে সঙ্গে ডিআরএস-এর আবেদন করেন বাংলার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। দেখা যায়, প্যাডে লাগার আগে ব্যাটের অনেকটি অংশ ছুঁয়েছিল বল। সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় যশবন্তকে। আম্পায়ারিং নিয়ে অরুণের মন্তব্য, ‘‘ম্যাচ রেফারির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যদিও এ সব আমাদের হাতে নেই। এগিয়ে যেতে হবে। ম্যাচ জেতার বিষয়ে ভাবতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘ভাল আম্পায়ার হলে এ ধরনের ভুল নিশ্চয়ই করতেন না।’’

এখানেই শেষ নয়। এসসিএ আরও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। শোনা যাচ্ছে দ্বিতীয় দিনের শেষে সৌরাষ্ট্রের ড্রেসিংরুম থেকে চুরি হয় দু’টি ব্যাট। তাই বুধবার নিরাপত্তা বাড়ানো হয় দু’দলের ড্রেসিংরুমে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ড্রেসিংরুমের সামনের গ্যালারিও। রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল আয়োজন করতেই একাধিক বিতর্কে জড়াচ্ছে এসসিএ। এ বার থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেওয়ার আগে বোর্ড দু’বার ভাববে না তো!

তারই মধ্যে সৌরাষ্ট্র দল বড় ধাক্কা খেেয়ছে চেতেশ্বর পুজারাকে নিয়ে। তাঁর গলার ব্যথা এখনও কমেনি। তারই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পিঠের ব্যথা। এ দিন ফিল্ডিংও করেননি। খুব সম্ভবত এই ম্যাচে তিনি আর নামবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement