ক্ষুব্ধ: টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি বঞ্চনায় বিরক্ত রামিজ। ফাইল চিত্র
আইসিসির প্রস্তাবিত চার দিনের টেস্টের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, এই আলোচনায় ইতিমধ্যেই উত্তাল ক্রিকেট দুনিয়া। মঙ্গলবার আবার সেই বিতর্কে যোগ দিলেন দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। ইংল্যান্ডের মাইকেল ভন। এবং পাকিস্তানের রামিজ রাজা। দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গি দুই মেরুতে। ভনের ভোট যেখানে চার দিনের টেস্ট নিয়ে, সেখানে রামিজ প্রশ্ন তুলেছেন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। তারই মধ্যে আবার ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়ে দিল, তাদের সায় আছে আইসিসির এই প্রস্তাবে।
আইসিসির পরিকল্পনা সফল হলে ২০২৩ সাল থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে চালু হয়ে যাবে চার দিনের টেস্ট। যা হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্গত। অস্ট্রেলীয় বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ কেভিন রবার্টস আগেই বলেছিলেন, তাঁরা এই প্রস্তাব ভেবে দেখবেন। এ দিন ইসিবি-র এক মুখপাত্র ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি আইসিসির এই পরিকল্পনা সফল হলে অতিরিক্ত ক্রিকেট খেলার চাপ এবং ঠাসা ক্রীড়াসূচির সমস্যাটা সামলানো যাবে।’’
ইতিমধ্যে চার দিনের টেস্টে অংশ নিয়েছে চারটি দেশ। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবোয়ে। এই বছরে ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডও নিজেদের মধ্যে চার দিনের টেস্ট খেলেছে। ইসিবির মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই চার দিনের টেস্টের ব্যাপারে আগ্রহী। তবে এই নিয়ে সতর্কও থাকতে হবে। কারণ এই বিষয়টা নিয়ে ইতিমধ্যেই দর্শক, ক্রিকেটার এবং অন্যান্যদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
যে বিতর্কে গলা মিলিয়েছেন ভন এবং রামিজের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও। নিজের কলামে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক লিখেছেন, ‘‘দু’বছর ধরে আমি বলে আসছি, আমাদের চার দিনের টেস্ট নিয়ে ভাবতে হবেই। না হলে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।’’ ভন আরও জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে একবিংশ শতাব্দীতে টেস্ট ম্যাচের ফল পেতে গড়ে লেগেছে ৩১৮ ওভার। দিনে ৯০ ওভার খেলা হওয়ার অর্থ চার দিনে হবে ৩৬০ ওভার। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাড়ে তিন দিনেই বেশির ভাগ টেস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যখন দুটো শক্তিশালী দল মুখোমুখি হবে, তখন চার দিনের টেস্ট হলে আকর্ষণ কমে যাবে না তো? যেমন ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট। তা ছাড়া আবহাওয়ার কারণে মাঝে মাঝেই টেস্ট ম্যাচে সময় নষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে চার দিনের টেস্ট হলে আগ্রহ অনেক আগেই মরে যেতে বাধ্য।
এই প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ভন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি মানছি, কিছু কিছু টেস্টে শেষ দিনে অনেক নাটক দেখা গিয়েছে। দারুণ সব ইনিংস খেলা হয়েছে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য। পাশাপাশি বৃষ্টির আশঙ্কাও আছে। কিন্তু সব কিছু মাথায় রেখেও বলব, বেশির ভাগ টেস্ট এখন চার দিনেই শেষ হয়ে যায়।’’
টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনে গড়ালে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন ভন। তাঁর মতে, ‘‘একটা টেস্ট ম্যাচকে যদি কাটাছেঁড়া করা হয়, তা হলে দেখা যাবে পঞ্চম দিনে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। ওই অর্থ বাঁচিয়ে যদি ক্রিকেটের স্বার্থে, তৃণমূল স্তরে যদি খরচ করা হয়, তা হলে খেলাটারই উন্নতি হবে।’’
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক রামিজ রাজা আরও একটা তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর এমসিসি-র ক্রিকেট কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সদস্যরা কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। রামিজের মন্তব্য, ‘‘চার দিনের টেস্ট নিয়ে এমসিসি বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ সদস্যই পাঁচ দিনের টেস্টের পক্ষে।’’ এর পরে রামিজ আরও বলে দিয়েছেন, ‘‘আসল ব্যাপারটা হল সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য ক্রীড়াসূচিতে আরও সময় বার করতে হবে। যে কারণে টেস্ট ক্রিকেটকে ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। সম্পূর্ণ ভুল কারণের জন্য টেস্ট ক্রিকেটকে এই ভাবে বঞ্চিত করাটা কি ঠিক?’’ রামিজের এই প্রশ্নের কী জবাব আসে, এখন সেটাই দেখার।