‘বিদায় নিউ ইয়র্ক’। ফ্লাশিং মেডোজ থেকে ছিটকে যাওয়ার পরদিন নিজের ছবি টুইট করে লিখলেন নাদাল।
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে তাঁর ছিটকে যাওয়া হতাশ করেছিল কোটি কোটি ভক্তদের। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রাফায়েল নাদালের ভারতীয় ভক্তদের জন্য দারুণ খবর।
ভারতের কোর্টে ডেভিস কাপ খেলতে আসছেন স্প্যানিশ মহাতারকা!
মঙ্গলবার নাদালের নিউইয়র্ক ছাড়ার ছবি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা আর স্প্যানিশ টেনিস ফেডারেশনের তাঁকে দলে রেখে ডেভিস কাপ টিম ঘোষণা প্রায় গায়ে গায়ে ঘটে! যার অর্থ, আগামী সপ্তাহে ১৬-১৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির আর কে খন্না স্টেডিয়ামের হার্ডকোর্টে নৈশালোকে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাইয়ে নামবেন চোদ্দো গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন নাদাল। যিনি গত বছরের শেষের দিকে দিল্লিতেই খেলে গিয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল আইপিটিএলে ফেডেরারের বিরুদ্ধে এক সেটের নিছক মশালা ম্যাচ। সে দিক দিয়ে এ দেশে নাদাল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবেন এক যুগেরও পর! এর আগে চেন্নাই ওপেনে যখন তিনি খেলেছিলেন সেই সময় আজকের কিংবদন্তি নাদাল হয়ে ওঠেননি। একটাও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেননি তখন।
নাদাল ছাড়া স্পেনের তারকাখচিত ডেভিস কাপ টিমে সিঙ্গলসের জন্য রয়েছেন ডেভিড ফেরার। যিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের তেরো নম্বর। ডাবলসে রয়েছেন ফেলিসিয়ানো লোপেজ আর মার্ক লোপেজ। ডাবলস টিম হিসেবে যাঁদের বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৫। দলের ৪৪ বছর বয়সি মহিলা নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন কনচিতা মার্টিনেজ-ও প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বের প্রাক্তন দুই নম্বর।
‘‘স্পেনের যে টিমটা ভারতে যাচ্ছে, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় খবর হচ্ছে রাফায়েল নাদাল আর ডেভিড ফেরারের প্রত্যাবর্তন,’’ এ দিন এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে স্প্যানিশ টেনিস ফেডারেশন। স্পেন পাঁচ বারের ডেভিস কাপ চ্যাম্পিয়ন কেবল চলতি শতাব্দীর প্রথম পনেরো বছরে। ভারত সেখানে তিন বারের ডেভিস কাপ রানার্স। যার শেষটা ঘটেছে উনত্রিশ বছর আগে। ১৯৮৭-তে। সোজা কথায়, ভারতের মাটিতে সাম্প্রতিক ডেভিস কাপ ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় টাই হতে চলেছে স্পেনের বিরুদ্ধে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে টাইয়ের আগে দু’দলের দুই বৃহত্তম তারকা প্লেয়ারের সাম্প্রতিক মন্তব্য দুই মেরুর! যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে এ বার ডাবলস-মিক্সড ডাবলস দু’টোতেই গোড়ার দিকে হেরে যাওয়ার পরে লিয়েন্ডার পেজ বিদেশি টিভি চ্যানেলে মন্তব্য করেন, ‘‘আমি আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম (আটটা ডাবলস, দশটা মিক্সড ডাবলস) জিতেছি। আমার কাছে টেনিস খেলাটা এখন এই খেলাটার মজা উপভোগ করা।’’ পাশাপাশি গতকাল সিঙ্গলসের চতুর্থ রাউন্ডে হেরে যাওয়ার পরে নাদাল বলে দিয়েছেন, ‘‘আপনারা যা খুশি বলতে পারেন। যা খুশি লিখতে পারেন। কিন্তু আমার সঙ্গে কী হচ্ছে আমিই সবচেয়ে ভাল জানি। আমি জানি আমাকে কী করতে হবে। দু’একটা জিনিস পরিকল্পনা মতো করতে পারিনি, তাই এ বার হেরে গেলাম। আত্মসমালোচনার জন্য আমি সব সময় তৈরি। আর আমার বিশ্বাস, এই দু’একটা সমস্যার সমাধান আমি করতে পারব।’’
কে বলতে পারে, সেই ‘দু-একটা সমস্যার সমাধান’ নাদাল নয়াদিল্লি থেকেই শুরু করে দিতে চললেন কি না! নিউইয়র্কে হারের পর নাদালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেরিয়ারের পনেরো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামটা কি আদৌ আসছে তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেটে? যার উত্তরে নাদালের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, আমি শেষ হয়ে যাইনি। আমার টেনিস কেরিয়ারও শেষ হয়ে যাচ্ছে না।’’
এই পরিস্থিতিতে ভারতে ডেভিস কাপ খেলতে আসছেন নাদাল। তিন দিন মিলিয়ে একটা সিঙ্গলসের বেশি ম্যাচ হয়তো খেলবেন না তিনি। তবে সেটা হলেও ভারতীয় টেনিসপ্রেমীদের কাছে মাঝ সেপ্টেম্বরের ওই তিন দিন যে ঐতিহাসিক এবং চিরস্মরণীয় হতে চলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।