Rameshbabu Praggnanandhaa

‘বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই বুঝেছিলাম, খালি হাতে ফিরবে না’, আনন্দবাজার অনলাইনে প্রজ্ঞানন্দের বাবা

বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় খেলোয়াড় হিসাবে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছেন প্রজ্ঞানন্দ। চেন্নাইয়ের বাড়িতে এখন থেকেই খুশির পরিবেশ। তার ফাঁকেই প্রজ্ঞার বাবা কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৩১
Share:

দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ছবি: পিটিআই।

বিশ্বনাথন আনন্দের পর রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ভারতের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে দাবা বিশ্বকাপে ওঠার পর থেকেই চেন্নাইয়ের ১৮ বছরের ছেলে উঠে এসেছেন গোটা দেশের শিরোনামে। সোমবার আমেরিকার গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানাকে হারানোর পর থেকেই প্রজ্ঞানন্দকে নিয়ে চলছে উচ্ছ্বাস। ছেলেকে নিয়ে গোটা দেশের এই মাতামাতি দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারছেন না প্রজ্ঞানন্দের বাবা কে রমেশবাবু। ছেলের দাবা খেলার নেপথ্যে অনেকটাই অবদান রয়েছে তাঁর।

Advertisement

সোমবার রাতে রমেশবাবু আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “প্রজ্ঞানন্দ ফাইনালে উঠবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু বিশ্বকাপ যখনই খেলতে গিয়েছিল তখনই জানতাম কিছু না কিছু একটা করবে। খালি হাতে ফিরবে না। খুব ভাল লাগছে সেটা সত্যি হতে দেখে। এ বার চাই ও বিশ্বকাপটা জিতুক।”

দাবার সঙ্গে প্রজ্ঞানন্দের পরিচয় নেহাতই আকস্মিক। মেয়ে বৈশালীর টিভি দেখার নেশা ছাড়াতে তাঁকে স্থানীয় দাবার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন রমেশবাবু। দিদির দেখাদেখি প্রজ্ঞানন্দও ভালবেসে ফেলে দাবাকে। ৬৪ খোপের খেলাতে মজে থাকত সারাক্ষণ। তাঁকেও দাবার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন রমেশবাবু। কখনও ভাবেননি যে সেই ছেলেই এক দিন দিদিকে ছাপিয়ে যাবে এবং দেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে পড়বে।

Advertisement

বাবা কে রমেশবাবুর সঙ্গে প্রজ্ঞানন্দ। —ফাইল চিত্র।

রমেশবাবু বললেন, “ছোটবেলা থেকেই দাবায় ওর আগ্রহ ছিল। দেখছিলাম ভাল খেলছিল। বড় বড় খেলোয়াড়দেরও হারিয়েছিল। কিন্তু দাবা খেলা শুরু করার সময় আমাদের কোনও প্রত্যাশা ছিল না। আমরা চাইতাম ও নিজের মনের আনন্দে খেলুক। কোনও চাপ যাতে ছোটবেলায় ওর উপরে না পড়ে সেটা লক্ষ্য রাখতাম।”

২০১৩ সালে বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতা জেতা দিয়ে শুরু। তার পর কোনও দিন আর পিছনে তাকাতে হয়নি প্রজ্ঞানন্দকে। একের পর এক প্রতিযোগিতায় ট্রফি জিতে বাড়ির ক্যাবিনেট ভরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। ১০ বছর ১০ মাস ১৯ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স (আইএম) হন, যা গোটা বিশ্বে কনিষ্ঠতম। ২০১৭-য় প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম। পরের বছরের ২৩ জুন ইটালির একটি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় নর্ম পেয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার। সেই সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় কনিষ্ঠ (সের্গেই কারয়াকিনের পরে) খেলোয়াড় হিসাবে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন প্রজ্ঞানন্দ।

সেমিফাইনালে খেলছেন প্রজ্ঞানন্দ। ছবি: পিটিআই।

রমেশবাবুর সঙ্গে কথা বলার সময়েই বাড়ির ভিতরে ভেসে আসছিল চিৎকারের শব্দ। উৎসবের কথা জিজ্ঞাসা করাতেই তিনি বললেন, “অবশ্যই আমরা সবাই ওকে নিয়ে খুশি। গোটা বাড়িতেই এখন খুশির পরিবেশ। আত্মীয়েরা ফোন করছেন একের পর এক। সত্যি বলতে, ওর পারফরম্যান্স মুগ্ধ করার মতোই। কিন্তু বিশ্বকাপ জিতলে তখন আসল উৎসব হবে।” রমেশবাবুর সংযোজন, “ও অনেক দিন ধরেই ভাল খেলছিল। এ বারের প্রতিযোগিতাতেও ভাল খেলছিল। তাই ভাল কিছু করবে এই আশা বরাবরই ছিল।”

বাকি ছেলেমেয়েরা যখন এই বয়সে স্কুল পর্যায় পার করে সফল কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, তখন প্রজ্ঞানন্দ প্রথাগত শিক্ষাজগত থেকে অনেকটাই দূরে। দিনের বেশির ভাগটাই কাটে দাবার বোর্ডে। মাথায় ঘোরে নতুন চাল। দেশ-বিদেশে ঘোরা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সাফল্যও আসছে। কী ভাবে প্রস্তুতি নেন প্রজ্ঞানন্দ? রমেশবাবুর উত্তর, “সত্যি বলতে, ওর প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি কোনও দিন মাথা ঘামাইনি। এটা পুরোপুরি দেখেন ওর কোচ। তিনি অনেক ভাল বোঝেন এই বিষয়ে। কোনও দিন আমি ভেতরে ঢুকতে চাইনি। আমি অত টেকনিক্যাল দিকগুলো বুঝতে পারব না। তবে দিনে ছ’-সাত ঘণ্টা অনুশীলন করত এটা দেখেছি। বিশ্বকাপের আগেও বাড়িতে থেকে অনুশীলন করেছে। নিবিড় অনুশীলনে ডুবে থাকত। তা ছাড়া সমাজমাধ্যম থেকে নিজেই দূরে থাকে। ফলে কোনও দিন বাইরের জগতের কোনও কিছু ওকে স্পর্শ করতে পারেনি।”

বিশ্বকাপ জিতলেও অবশ্য প্রজ্ঞানন্দের কাজ শেষ হচ্ছে না। রমেশবাবুর কথায়, “ওকে আগামী দিনে আরও ভাল খেলতে হবে। আসলে সবাই চায় ট্রফি জিততে এবং এক নম্বর হতে। যে কোনও খেলাতেই এটা সত্যি। নিঃসন্দেহে আমিও চাই ও এক নম্বর হোক। কিন্তু শুধু এক নম্বর হওয়া নয়, ওকে মনের আনন্দে খেলতে হবে। রেটিং পয়েন্ট বাড়াতে হবে।”

আনন্দ নিজে যেমন চেন্নাইয়ের, প্রজ্ঞানন্দও তাই। ফলে চেন্নাই থেকেই দুই খেলোয়াড় বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব অর্জন করলেন। ফাইনালে ওঠার পর আনন্দ কি কোনও বার্তা দিয়েছেন? রমেশবাবু বললেন, “প্রজ্ঞানন্দ নিজে আনন্দ স্যরের অ্যাকাডেমিতেই (ওয়েস্টব্রিজ আনন্দ চেস অ্যাকাডেমি) অনুশীলন করে। ও নিজে আনন্দ স্যরকে আদর্শ বলে মানে। এখনও ব্যক্তিগত ভাবে আনন্দ স্যর আমাদের কিছু বলেননি। মনে হয় প্রজ্ঞাকেও এখন কিছু বলবেন না। ফাইনালটা হোক। তার পরে হয়তো কোনও বার্তা পাঠাবেন। তবে সমাজমাধ্যমে আনন্দ স্যরের বার্তা তো সবাই পড়েছেন। তাতেই নিশ্চয়ই বোঝা গিয়েছে উনি কতটা গর্বিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement