হতাশ: পরিবর্ত হিসেবে ডার্বিতে নামলেন কোলাদো। নিজস্ব চিত্র
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের নয়নের মণি তিনি। তাঁকে ঘিরেই মোহনবাগানকে হারিয়ে মরসুমের প্রথম ডার্বি জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন লাল-হলুদ জনতা। অথচ প্রথম দলে খাইমে সান্তোস কোলাদোর পরিবর্তে মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারাকে রাখলেন কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া।
কেন কোলাদো প্রথম একাদশে ছিলেন না? সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘চার বিদেশির মধ্যে এক জনকে বসাতেই হত। আমার লক্ষ্য ছিল, দলে ভারসাম্য রাখা। সেটাই করেছি।’’
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে এই মুহূর্তে চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ইস্টবেঙ্গল। জিতেছে দু’টি ম্যাচ। ড্র দু’টি ম্যাচে। হার একটিতে। এখনও পর্যন্ত গোল করেছে পাঁচটি। যার মধ্যে তিনটি গোল একাই করেছেন কোলাদো। বাকি দু’টি গোল বিদ্যাসাগর সিংহের। অথচ রবিবাসরীয় যুবভারতীতে দু’জনেই নামলেন পরিবর্ত হিসেবে।
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ডার্বি দেখতে খড়্গপুর, বেথুয়াডহরী, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকেও প্রচুর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক এ দিন যুবভারতীতে এসেছিলেন। ম্যাচের পরে হতাশ হয়ে তাঁরা বলছিলেন, ‘‘কোলাদো ও বিদ্যাসাগর শুরু থেকে খেললে ইস্টবেঙ্গলকে আটকাতে পারত না মোহনবাগান। দু’জনেই ম্যাচ উইনার। গোলের মধ্যেও রয়েছেন। আলেসান্দ্রো কেন যে কোলাদো ও বিদ্যাসাগরকে ৭১ মিনিটে মাঠে নামালেন, তা আমাদের কাছে এখনও রহস্য।’’ তাঁরা ক্ষুব্ধ জবি জাস্টিন, লালডানমাউইয়া রালতে, লালরাম চুলোভোকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেও। জবি অবশ্য এ দিনও যুবভারতীতে ছিলেন। তবে পুরনো দল না জেতায় তিনিও হতাশ।
কোলাদোকে পরিবর্ত হিসেবে নামানোর ব্যাখ্যা দিলেও বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ উঠতেই ক্ষুব্ধ লাল-হলুদ কোচ বললেন, ‘‘আমি হেড কোচ। প্রথম দলে কারা খেলবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব আমারই।’’ এর পরেই যোগ করলেন, ‘‘একসঙ্গে খেলতে পারে এগারো জন ফুটবলারই। তাই সকলকে নামানো সম্ভব নয়।’’ ক্লাব কর্তারা এক দিকে। আর বিনিয়োগকারী সংস্থা আর এক দিকে। তার প্রভাব দল নির্বাচন ও খেলায় পড়ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
কোচের এই যুক্তি একেবারেই মানতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল জনতা। তাঁরা আরও বিস্মিত, মার্কোসকে প্রথম একাদশে দেখে। আলেসান্দ্রো কি মার্কোসকে শুরু থেকে নামিয়ে চমক দিতে চেয়েছিলেন? তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, কোলাদোকে আটকানোর রণনীতি নিয়েই নামবে মোহনবাগান। নতুন স্ট্রাইকার মার্কোসকে খেলালে সমস্যায় পড়বে সবুজ-মেরুন রক্ষণ। ফল হল উল্টো। প্রতিপক্ষের চক্রব্যূহ থেকে বেরোতেই পারলেন না লাল-হলুদের নতুন স্পেনীয় স্ট্রাইকার।
মার্কোস যে ব্যর্থ হয়েছেন, মানতে রাজি নন আলেসান্দ্রো। বলছেন, ‘‘মার্কোস দুর্দান্ত খেলেছে। বেশ কয়েকটা সুযোগও পেয়েছিল। যদিও অল্পের জন্য গোল পায়নি। ওকে যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা খুব ভাল ভাবেই পালন করেছে। যত দিন যাবে আরও উন্নতি করবে মার্কোস।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘আমরা অনেক বেশি গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম।’’
প্রশ্ন উঠছে তা হলে জয় অধরা থাকল কেন? লাল-হলুদ কোচের বিশ্লেষণ, ‘‘প্রথমার্ধে মাঝমাঠে ওদেরই নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল। কারণ, এক জন বাড়তি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার নিয়ে খেলেছে। তাতে অবশ্য আমাদের খুব একটা সমস্যায় ফেলতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৩০ মিনিট আমরা অনেক ভাল খেলেছি। বলের দখলের লড়াইয়েও আমরা এগিয়ে ছিলাম। বেশ কয়েক বার সুযোগও পেয়েছিলাম গোল করে এগিয়ে যাওয়ার।’’
মরসুমের প্রথম ডার্বির পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোহনবাগান বার পাঁচেক গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ভি পি সুহের একাই অবিশ্বাস্য ভাবে দু’টো গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলেন। সেই সময় হতাশায় মোহনবাগান সমর্থকেরা বলছিলেন, ‘‘ডার্বিতে সুহের একাই আমাদের শুইয়ে দিল!’’ অথচ লাল-হলুদ কোচের দাবি, ‘‘ওরা মাত্র দু’বার আমাদের সমস্যায় ফেলেছিল। তার মধ্যে এক বার আমাদের দুই ডিফেন্ডারের ভুলেই ওরা সুযোগটা পেয়ে যায়। কারণ, বল দখলের জন্য দু’জনেই একসঙ্গে ঝাঁপিয়েছিল।’’ লাল-হলুদ সমর্থকেরা ডার্বির ফলে হতাশ হলেও আলেসান্দ্রো বলছেন, ‘‘ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি ও গর্বিত। আমরা প্রত্যেক দিন উন্নতি করছি।’’
হতাশ বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারাও। অনেক জায়গায় ডার্বি দেখা যায়নি। আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘খেলা দেখতে না পেরে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। আমরা সম্প্রচার সংস্থাকে চিঠি দিয়ে বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইব।’’