সমস্যা: নক আউটে বারবার হারতে হচ্ছে সিন্ধুকে।
ফের ‘জাপানি বোমা’য় তছনছ হয়ে গেল পি ভি সিন্ধুর স্বপ্ন। এ বার অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে আকানে ইয়ামাগুচির বিরুদ্ধে। কেন বারবার বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের বড় মঞ্চে আটকে যাচ্ছেন সিন্ধু? রবিবার বার্মিংহামে সিন্ধুর হারের পরে এই প্রশ্নটাই উঠে আসছে।
সাইনা নেহওয়ালের প্রাক্তন কোচ বিমল কুমার মনে করছেন, সিন্ধুর স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনতে হবে। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে রবিবার তিনি আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘জাপানি খেলোয়াড়রা সাধারণত ডিফেন্সিভ খেলতে পছন্দ করে এবং অনেক বেশি র্যালিতে যায়। সেমিফাইনালেও ইয়ামাগুচি এটাই করেছে। সিন্ধুর উচিত ছিল লম্বা র্যালিতে না যাওয়া। র্যালিগুলো ছোট করে দেওয়া।’’
কী ভাবে, তাও বলেন প্রাক্তন জাতীয় কোচ, ‘‘টিভিতে দেখছিলাম সিন্ধু থার্ড কোর্ট থেকে র্যালির জবাব দিয়ে যাচ্ছিল। সিন্ধুর উচিত ছিল ওর উচ্চতার সুযোগ নিয়ে র্যালিতে হাফ স্ম্যাশ মিশিয়ে দেওয়া এবং সুযোগ পেলেই ফাইনাল শটে যাওয়া। তাতে দুটো লাভ হত। ইয়ামাগুচি ওকে লম্বা র্যালিতে ক্লান্ত করে দেওয়ার যে ছক নিয়ে নেমেছিল সেটা আটকে দেওয়া যেত এবং পাল্টা চাপে ফেলে দিতে পারত ইয়ামাগুচিকে। কারণ, সিন্ধু আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় আর ওর ফিনিশিং ইয়ামাগুচির চেয়ে অনেক ভাল। ডিফেন্সের থেকে সিন্ধু বেশি ভালবাসে আক্রমণ করতে। সেটাই ওর সবচেয়ে বড় শক্তি।’’
পরিসংখ্যান বলছে ১২টা র্যালি হয়েছে সিন্ধু-ইয়ামাগুচির সেমিফাইনাল ম্যাচে। যার মধ্যে দুটি র্যালি ছিল ৫১ শটের। সিন্ধু এর মধ্যে জিতেছেন মাত্র চারটি। এটাই ম্যাচে অনেকটা পার্থক্য গড়ে দেয়। বিমল মনে করেন সিন্ধুর আরও দুটো বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে, এক ম্যাচ থেকে মাঝে মধ্যেই ফোকাস হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সামলানো আর শটে বৈচিত্র আনা। ‘‘সেমিফাইনালের প্রথম আর তৃতীয় গেমে দেখবেন সিন্ধু একটা সময় অনেকটা এগিয়ে গেলেও ইয়ামাগুচি ওকে ধরে ফেলে। প্রথম গেমে ১৬-৮ এগিয়েছিল সিন্ধু। সেখান থেকে ১৭-১৭ করে ফেলে ইয়ামাগুচি। তৃতীয় গেমেও সিন্ধু এক সময়ে ১৩-৭ এগিয়ে ছিল। তাও গেম এবং তার সঙ্গে ম্যাচটাও হাতছাড়া হল ওর। তাই বলছি ফোকাস হারালে চলবে না। সঙ্গে আরও নতুন নতুন শট ব্যবহার করতে হবে। সেমিফাইনালে সিন্ধুর খেলায় যেটার অভাব ছিল। ড্রপ শট তো প্রায় ব্যবহারই করতে দেখলাম না ওকে। যেটা খুব ভাল অস্ত্র,’’ বলেন বিমল।
প্রায় একই কথা বললেন ন’বারের প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অপর্ণা পোপট। মুম্বই থেকে তিনি ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘রবিবার সিন্ধুর জেতার দারুণ সুযোগ ছিল। আমার মনে হয়, সিন্ধু ঠিক সময় ঠিক শট খেলার আত্মবিশ্বাসটা দেখাতে পারেনি। জাপানি খেলোয়াড়রা গতিতে খেলতে পছন্দ করে। সিন্ধু ওই গতিটাই আটকাতে পারেনি সেমিফাইনালে। ফলে ছন্দ পেয়ে গিয়ে ইয়ামাগুচি ম্যাচে ফিরে আসে। টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ইয়ামাগুচি সহজেই সিন্ধুর খেলাটা বুঝে নিতে পারছিল। এর দাওয়াই একটাই। শটে বৈচিত্র আনা। মানে, যদি একই পজিশন থেকে অনেক রকমের শট খেলার ক্ষমতা থাকে তা হলে বিপক্ষকে ধন্দে ফেলে দেওয়া যায়। বিপক্ষ বুঝতে পারবে না এর পরে সিন্ধু কোন শট খেলবে। সিন্ধুকে এটা আয়ত্ত করতে হবে।’’
আর এক প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মধুমিতা বিস্ত অবশ্য মনে করছেন টানা ম্যাচ খেলে যাওয়ার ক্লান্তির প্রভাব সিন্ধুর খেলায় পড়তে পারে। নয়াদিল্লি থেকে তিনি ফোনে বললেন, ‘‘বাইরে থেকে বলা খুব সহজ সিন্ধুর কী করা উচিত ছিল। কিন্তু কোর্টে ওই রকম চাপের মধ্যে ঠিক সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ নয়। আগের দিন তিন গেমে ওকুহারাকে হারানোর ক্লান্তি হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিন্ধু। যেটা স্বাভাবিক। ইয়ামাগুচিকেই দেখুন না। সিন্ধুকে হারানোর পরে রবিবার ফাইনালে তাই জু ইংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারল না। স্ট্রেট গেমে জিতে চ্যাম্পিয়ন তাই জু। আমি নিশ্চিত সিন্ধু এই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ফিরে আসবে আরও শক্তিশালী হয়ে।’’
একই প্রতিজ্ঞার কথা বলেছেন সিন্ধুও। হায়দরাবাদি তারকা সেমিফাইনালে ছিটকে যাওয়ার পরে বলেছেন, ‘‘আমি ১০০ শতাংশ দিয়েছি। দিনটা আমার ছিল না। অনেক লম্বা লম্বা র্যালি হয়েছে, ইয়ামাগুচি ভাল খেলেছে। তিন গেমের ম্যাচ খেলা সহজ নয়। ২-৩ পয়েন্টের পার্থক্য অনেক বড় হয়ে যায়। এই টুর্নামেন্ট থেকে অনেক শিখলাম। আমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।’’