প্রশংসা: সাত্ত্বিকদের থেকে আরও ট্রফি দেখছেন গোপী। ফাইল চিত্র
তিন বছর আগে প্রাক্তন ভারতীয় ডাবলস কোচ তান কিম হার যখন সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টিকে জুটি বাঁধতে বলেছিলেন, রাজি ছিলেন না দু’জনই। তার উপরে প্রথম তিনটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ব্যর্থতা তাঁদের আরও ধাক্কা দিয়েছিল।
একটু একটু করে আত্মবিশ্বাসটা ফিরতে শুরু করে ২০১৭ সালে। কোরিয়া আর ফরাসি ওপেন সুপার সিরিজে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরে। যা আরও মজবুত হয় গত বছর কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জিতে। কিন্তু বৃত্তটা তখনও পূর্ণ হয়নি। গত রবিবার তাইল্যান্ড ওপেনের ফাইনালের জন্য যা তোলা ছিল। প্রথম ভারতীয় পুরুষ ডাবলস জুটি হিসেবে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার এই মাপের প্রতিযোগিতা জয় এবং বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে উঠে আসার পরে সাত্ত্বিকরা বুঝতে পারেন কেন তাঁদের জুটি চেয়েছিলেন কোচ কিম তান।
‘‘যখন কোচ তান আমাদের জুটি বাঁধতে বলেছিলেন, প্রথম দিকে অস্বস্তি হত। বুঝতাম না কেন আমাদের জুটি বাঁধতে বলেছিল। পরে বুঝলাম আমাদের আক্রমণ করার ক্ষমতার জন্য এই সিদ্ধান্ত,’’ হায়দরাবাদ থেকে আনন্দবাজারকে বলেন সাত্ত্বিক। প্রথম থেকেই যাঁর লক্ষ্য ছিল ডাবলস খেলোয়াড় হওয়ার। কারণ জানতে চাইলে অন্ধ্রপ্রদেশের ১৮ বছর বয়সি খেলোয়াড় বলেন, ‘‘সবাই আমাকে প্রশ্ন করে কেন ডাবলস খেলোয়াড় হলাম। আমি উল্টে সবাইকে প্রশ্ন করতে চাই, কেন সিঙ্গলস খেলতে চায়, ডাবলস নয় কেন? সিঙ্গলসের সঙ্গে তুলনা করলে আমার মনে হয় ডাবলস কঠিন। কারণ, ডাবলসে খুব ভাল বোঝাপড়া দরকার। সিঙ্গলসে শারীরিক ভাবে শক্তপোক্ত থাকতে হয়। যখন আরও বয়স কম ছিল, শুনতাম ভারতে শুধু সিঙ্গলস খেলোয়াড়েরাই ভাল। তার পরে যখন টিম ইভেন্টে ভারত হারত, বলা হত ভাল ডাবলস খেলোয়াড় নেই, তাই হারতে হল। এ সব শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাকে এটা পাল্টাতে হবে। ডাবলসে খেলতে হবে।’’
সাফল্যের জন্য শুধু মালয়েশীয় কোচ তান কিমই নন জাতীয় ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাত্ত্বিক। ১৪ বছর বয়েসে গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পরে ব্যাডমিন্টনে যাঁর পথচলা শুরু। ‘‘গোপী স্যরের বিরাট অবদান রয়েছে আমার খেলায়। গোপী স্যরের জন্যই আজ আমরা এখানে আসতে পেরেছি,’’ বলেন সাত্ত্বিক।
ছাত্রদের এই সাফল্যে গর্বিত জাতীয় কোচও। হায়দরাবাদ থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে লড়াই করে (তাইল্যান্ড ওপেনে বিশ্বের প্রথম ১০টির মধ্যে ন’টি ডাবলস জুটিই যোগ দিয়েছিল) সাত্ত্বিক আর চিরাগের এই জয়ের প্রশংসা করতেই হবে। ওরা দু’জনেই বয়েসে তরুণ, আশা করি এ রকম জয় ওরা ভবিষ্যতে আরও পাবে।’’ সাত্ত্বিকদের এই সাফল্য কতটা প্রেরণা দিতে পারে খেলোয়াড়দের জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ওদের এই সাফল্য প্রেরণা দেবে অন্যদের। ডাবলসে এ রকমই আসল নায়ক দরকার। আমি নিশ্চিত সাত্ত্বিক আর চিরাগের এই জয় তরুণ খেলোয়াড়দের ডাবলসে আসতে উৎসাহ দেবে। একই সঙ্গে যারা ডাবলস খেলছেন তাদেরও আরও বড় লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’
রবিবার জয়ের পরে ছাত্রদের কী বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি? গোপীচন্দ বলেন, ‘‘চলতি মরসুমটা ঠাসা। তাইল্যান্ড থেকে জিতে এসেই এ বার সাত্ত্বিক-চিরাগকে খেলতে হবে হায়দরাবাদ ওপেনে। তার সপ্তাহ দু’য়েক পরেই রয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। তাই জেতার পরে ওদের আমি বলেছিলাম দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে উঠে তৈরি হও পরবর্তী লক্ষ্যে ঝাঁপানোর জন্য। এখনও অনেক দূর যেতে হবে।’’
কয়েক দিন আগেই অস্ট্রেলীয় ওপেনে এই চিনা জুটির কাছেই হেরে গিয়েছিলেন চিরাগ-সাত্ত্বিক। এ বার ফাইনালে নামার আগে তাই কী পরিকল্পনা ছিল, জানতে চাইলে চিরাগ বলেন, ‘‘চিনা জুটির বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান পরিকল্পনা ছিল শাটল যতটা সম্ভব নিচু রাখতে হবে। যাতে আমরা আক্রমণের সুযোগ তৈরি করতে পারি। কারণ ওরাও আমাদের মতো লম্বা। ওরা ফ্রন্ট কোর্টে নড়াচড়ার দিক থেকে ধীর গতির, কিন্তু দাঁড়িয়ে খেললে শক্তিশালী। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল ওদের নীচু হয়ে খেলতে বাধ্য করা।’’ চলতি মরসুমে যে এত দ্রুত এই মাপের সাফল্য পাবেন, সেটাও ভাবেননি মুম্বইয়ের ২২ বছর বয়সি তরুণ। তিনি বলছিলেন, ‘‘কমনওয়েলথ গেমসে গত বছর রুপো জেতার পরে আমাদের লক্ষ্য ছিল চলতি বছরে বিশ্বের প্রথম পনেরো জনের মধ্যে আসা। আর সুপার সিরিজে ধারাবাহিক ভাবে কোয়ার্টার, ফাইনাল, সেমিফাইনাল খেলা। কিন্তু আশা করিনি এ মরসুমে এত তাড়াতাড়ি ফাইনাল খেলতে পারব। এত তাড়াতাড়ি কারণ সাত্ত্বিকের চোটের জন্য আমাদের মরসুম শুরু হয় এপ্রিলে। তাই এই ট্রফি জিতে দারুণ খুশি।’’