উল্লসিত পিএসজি শিবির। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
লিসবনের টিম হোটেলে মঙ্গলবার রাতে যখন ফিরলেন নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), কিলিয়ান এমবাপেরা, হাজারখানেক প্যারিস সাঁ জারমাঁ (পিএসজি) সমর্থক অপেক্ষা করছিলেন। টিম বাস এসে দাঁড়াতেই শুরু হয়ে গেল গগনভেদী চিৎকার।
টিম বাসের ভিতরেও এক ছবি। নেমারের হাতে ধরা সাউন্ড বক্সে তারস্বরে গান বাজছে। তালে তালে নাচছেন ফুটবলারেরা। লাইপজ়িসকে হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার অনুভূতিটাই যে আলাদা। ক্লান্ত ফুটবলারদের কেউ কেউ অবশ্য দ্রুত হোটেলের দরজার দিকে এগোচ্ছিলেন। তাঁদের আটকালেন নেমার। উৎসব যে সবে শুরু হয়েছে। সকলকে ডেকে নিয়ে নাচতে শুরু করলেন ব্রাজিলীয় তারকা।
লাইপজ়িসের বিরুদ্ধেও জয়ের নেপথ্যে নেমার। ছ’মিনিটে তাঁর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। নিজে গোল পাননি। কিন্তু তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান রয়েছে। উচ্ছ্বসিত ফুটবল পণ্ডিতদের মতে মঙ্গলবার রাতে নতুন রূপে আবির্ভাব ঘটেছে নেমারের। যাঁর একমাত্র লক্ষ্য গোল করা নয়। বদলে যাওয়া নেমার দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সতীর্থদের জন্য গোলের রাস্তা তৈরি করছেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়েও দলের প্রতি দায়বদ্ধতা যাঁর অনেক বেশি।
নেমারকে ফাউল করার জন্যই লাইপজ়িসের পেনাল্টি বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় পিএসজি। ১৩ মিনিটে অ্যাঙ্খেল দি মারিয়ার সেন্টার হেড করে জালে জড়িয়ে দেন মারকুইনোজের। ৪২ মিনিটে নেমারের অসাধারণ পাস থেকেই গোল করে ২-০ করেন দি মারিয়া। ৫৫ মিনিটে আর্জেন্টিনীয় তারকার সেন্টার থেকে হেড করে ৩-০ করেন খুয়ান বের্নাত।
সেমিফাইনালে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই নেমার প্রসঙ্গে পিএসজি ম্যানেজার থোমাস টুহেল বলেছিলেন, ‘‘নেমার প্রকৃত নেতা। ওর দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস, সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা অতুলনীয়।’’ মঙ্গলবার রাতে সেই দৃশ্যই বার বার দেখা গিয়েছে লাইপজ়িসের বিরুদ্ধে।
ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে উচ্ছ্বসিত পিএসজি ম্যানেজার বলেছেন, ‘‘অসাধারণ জয়। আমরা এখানে এসেছি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই।’’ তবে সেমিফাইনালের আগে তিনি যে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন, গোপন করেননি। বলেছেন, ‘‘অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, আমি প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। আমার ফুটবলারেরা অবশ্য জানত, এই চাপ কী ভাবে সামলাতে হয়।’’
কোয়ার্টার ফাইনালে আটলান্টার বিরুদ্ধে এমবাপেকে শুরু থেকে খেলাননি পিএসজি ম্যানেজার। মঙ্গলবার অবশ্য প্রথম একাদশে নেমারের সঙ্গে বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি তারকাকেও রেখেছিলেন। এমবাপের একটি গোল বাতিল হয়। কারণ, তিনি গোলে শট নেওয়ার আগে বল নেমারের হাতে লেগেছিল। থোমাস বলেছেন, ‘‘দি মারিয়া, এমবাপে ও নেমারের গতি কাজে লাগানোর জন্যই শুরু থেকে খেলাই। আমরা কতটা শক্তিশালী, তা প্রমাণ করা দরকার ছিল।’’
শুধু লিসবন নয়, মঙ্গলবার রাতে প্যারিসেও উৎসবে মেতে উঠেছিলেন পিএসজি সমর্থকেরা। স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য ৩৬ জন গ্রেফতারও হয়েছেন। তখনও কি কেউ ভেবেছিলেন যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুঃসংবাদ শুনতে হবে। উয়েফার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লাইপজ়িসের মার্সেল হালস্টেনবার্গের সঙ্গে জার্সি বিনিময় করে ফাইনালে অনিশ্চিত হয়ে পড়বেন নেমার।