নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় দিয়ে টি টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে ভারত। কিউয়িদের করা বড় রানের টার্গেট খুব সহজেই পেরিয়ে গিয়েছেন কোহালিরা। রবিবার ইডেন পার্কেই দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচের বল গড়াবে। কেমন হতে পারে ভারতের প্রথম একাদশ। বোলিং বিভাগ মেরামতে কি দলে বদল আনবে টিম ম্যানেজমেন্ট? দেখে নেওয়া যাক ভারতের সম্ভাব্য একাদশ।
রোহিত শর্মা— প্রথম টি টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে সফল হননি ‘হিটম্যান’। ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত। শুরুতেই তিনি আউট হওয়ায় চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। বিরাট কোহালি ও লোকেশ রাহুল সামলে দেন অবশ্য। দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচে রোহিতকে সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। তাঁর উপরে ভারতের ব্যাটিং নির্ভর করে রয়েছে। প্রতিদিন রাহুল ও কোহালির পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো হয়ত সম্ভব হবে না। রোহিতের কাছ থেকে রান চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
লোকেশ রাহুল— দ্বৈত ভূমিকা পালন করছেন লোকেশ রাহুল। কিপিং করছেন। তার পরে ব্যাট হাতে ওপেন করতে নামছেন। তিনি নিজে বলছেন, উইকেটের পিছনে দাঁড়ালে পিচ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তিনি দিতে পারবেন অধিনায়ক, বোলারদের। পিচের চরিত্র আগে জেনে যাওয়ায় ব্যাট করতে নেমে সুবিধা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছেন রাহুল। একটা সময়ে কে এল রাহুল দীর্ঘদিন খেলার সুযোগ পাননি। হতাশা চলে এসেছিল তাঁর মধ্যে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে ছন্দ পেয়েছে। বদলেছে মানসিকতাও। অস্ট্রেলিয়ার পরে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সুযোগ আসতেই তার সদ্ব্যবহার করছে ও। টপ অর্ডারকে নির্ভরতা দিচ্ছে রাহুলের ব্যাট।
বিরাট কোহালি — প্রথম টি টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত ক্যাচে তাঁকে ফেরান মার্টিন গাপ্টিল। তার আগে কোহালি ও রাহুল ভারতের ইনিংস গড়ার কাজ করেন। ৩২ বলে চটজলদি ৪৫ রান করে যান ভারত অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেও রানের মধ্যে ছিলেন তিনি। কিউয়িদের মাঠে সিরিজ জেতার ক্ষেত্রে কোহালিকে জ্বলে উঠতেই হবে।
শ্রেয়স আইয়ার — নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। প্রথম টি টোয়েন্টিতে কোহালি ও লোকেশ রাহুল ফিরে যাওয়ার পরেও ভারত-ভক্তদের মনে প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল, পারবে কি ভারত ম্যাচ বের করতে? এ রকম পরিস্থিতিতে শ্রেয়স আইয়ার ২৯ বলে ৫৮ রান করে জ্বলে ওঠেন। অনিল কুম্বলের মতো প্রাক্তন তারকাও বলেছেন, চার নম্বর পজিশনের জন্য যোগ্য ব্যাটসম্যান আইয়ার। চার নম্বরের জন্য নিজেকে প্রমাণ করছেন তিনি।
শিবম দুবে — দ্রুত রান তুলতে পারেন। বাঁ হাতি শিবম দুবেকে ব্যাট করতে দেখলে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে পড়ে যায় যুবরাজ সিংহের কথা। প্রথম টি টোয়েন্টি ম্যাচে অবশ্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ফিরে যেতে হয় দুবেকে। তাঁর অভিজ্ঞতা কম। কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা যত করবেন, ততই অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন তিনি। বল হাতেও প্রথম টি টোয়েন্টিতে দুবে নেন গাপ্টিলের উইকেট। তাঁর কাছ থেকে বল ও ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স চাইছে দল। এই বছরেই রয়েছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে দুবেকে প্রমাণ করতে হবে।
মণীশ পাণ্ডে — মণীশ পাণ্ডের ব্যাটের হাত ভাল। টি টোয়েন্টিতে যে কোনও মুহূর্তে জ্বলে উঠতে পারেন। ইডেন পার্কের প্রথম টি টোয়েন্টিতে দলের প্রয়োজনে শ্রেয়স আইয়ারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। ম্যাচ শেষ করেন শ্রেয়স। মণীশ পার্শ্বনায়কের ভূমিকা পালন করেন। কালকের ম্যাচেও তাঁর দলে না থাকার কোনও কারণ নেই।
রবীন্দ্র জাডেজা— রবীন্দ্র জাডেজা বিরাট কোহালির দলের ‘থ্রি-ডি’ ক্রিকেটার। ব্যাটিং, বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংও দারুণ করেন তিনি। প্রথম টি টোয়েন্টিতে জাডেজা রান আটকে রাখার কাজ করেন। তার পাশাপাশি গ্র্যান্ডহোমের উইকেটও নেন। শুক্রবার ব্যাট করতে নামতে হয়নি জাডেজাকে। ব্যাট হাতেও প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে পারেন। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ধোনি ও জাডেজা প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। জাডেজা ও ধোনির রান আউট স্বপ্নভঙ্গ করে। এ হেন জাডেজার কাছ থেকে সেরাটাই চাইছে দল।
নবদীপ সাইনি — শার্দুল ঠাকুরের জায়গায় কোহালি দ্বিতীয় টি২০-তে দেখে নিতে পারেন নবদীপ সাইনিকে। দুরন্ত গতিতে বল করতে পারেন। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। প্রথম ম্যাচে শার্দুল খুবই খারাপ বল করায় দ্বিতীয় টি টোয়েন্টিতে কিউয়িদের ঘরের মাঠে আগুনে বোলিং করতে দেখা যেতে পারে সাইনিকে।
যুজবেন্দ্র চহাল— কোহালির হাতের অন্যতম তাস চহাল। কিউয়িদের বিরুদ্ধে প্রথম টি টোয়েন্টিতে একটি উইকেট নেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা আক্রমণের রাস্তা নেন তাঁর বিরুদ্ধে। কোহালি এগিয়ে এসে তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচে চহাল কেমন খেলেন, তার দিকে তাকিয়ে ভারতের ক্রিকেটভক্তরাও। বলের গতির হেরফের ঘটিয়ে কিউয়িদের আটকে রাখাও চহালের দায়িত্ব।
মহম্মদ শামি— ঘরের মাঠে আগুন জ্বালিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের সিম বোলিং সহায়ক পিচে শামি কিন্তু একেবারেই নজর কাড়তে পারেননি প্রথম টি টোয়েন্টিতে। ৪ ওভারে দেন ৫৩ রান। দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে হবে বাংলার পেসারকে।
যশপ্রীত বুমরা— ইডেন পার্কের প্রথম টি টোয়েন্টিতে বুমরা একটি উইকেট নেন। শেষ ওভারে বল করার সময়ে পড়ে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পান তিনি। ওভার অবশ্য শেষ করেন তিনি। পরে তাঁর গোড়ালিতে স্ক্যান করা হয়। বুমরাকে নিয়ে উদ্বেগ ভারতের সাজঘরে। দলের একনম্বর বোলার সদ্য চোট সারিয়ে ফিরেছেন। আবার চোট পেলে বিশ্বকাপের আগে সমস্যায় পড়ে যাবে কোহালি-শাস্ত্রীর পরিকল্পনা।