ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। ফেডারেশনের নির্বাচন পরিচালনার যুগ্ম দায়িত্বে এলেন একজন তারকা ফুটবলার—ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। দেশের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির সঙ্গে পর্যবেক্ষক হিসাবে সংস্থার গঠনতন্ত্র সংশোধন থেকে নির্বাচন পরিচালনা সবই করবেন ভাস্কর।
শনিবার রাতেই দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে করা ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের মামলার লিখিত রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র-র নেতৃত্বে তৈরি তিন সদস্যের বেঞ্চ। সেখানেই কুরেশির সঙ্গে রাখা হয় ভাস্করকে। আদালত শনিবার জানিয়েছিল, নির্বাচনের কাজে কুরেশির সঙ্গে একজন ফুটবলারকে রাখতে চান তাঁরা। ফেডারেশনের তরফে নাম দেওয়া হয়েছিল আই এম বিজয়নের। আর জনস্বার্থ মামলাকারী রাহুল মেহরা দিয়েছিলেন দুটি নাম—ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ও মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। দেশের সর্বোচ্চ আদালত মামলাকারীর দেওয়া নাম থেকেই বেছে নিয়েছে ভাস্করকে।
ফেডারেশনের দুর্নীতি নিয়ে বছর খানেক আগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভাস্কর। তার সঙ্গী ছিলেন মনোরঞ্জনও। সেই ভাস্করকে ভোটের দায়িত্ব দিলেও দশ দিন আগে দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া অন্য একটি নির্দেশ খারিজ করেছে আদালত। ‘স্পোর্টস কোড’ মেনে নির্বাচনের নির্দেশ দিলেও প্রফুল্ল পটেল ও পুরো কর্মসমিতিই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট সরিয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলকে। অন্য নির্বাচিত পদাধিকারীদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রফুল্ল ও তাঁর কর্মসমিতি সদস্যরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাবেন। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ফিফা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সুনাম নষ্ট হয় এ রকম কিছু করা যাবে না। স্পোর্টস কোড মেনে পর্যবেক্ষকরা সংস্থার গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে আট সপ্তাহের মধ্যে তা জমা দেবেন আদালতে। তারপর নির্বাচন হবে।’’
বেশি রাতে রায় জানানো হলেও দুটো ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে। এক) প্রফুল্লদের ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হবে কি না? দুই) নির্বাচন ঠিকঠাক হয়নি সেটা কার্যত মেনে নিয়েছে আদালত। তা হলে কী ভাবে বর্তমান কর্মসিমিতি বহাল রাখা হল। ময়দানের একজন নামী আইনজীবী অবশ্য বললেন, ‘‘প্রথমে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন হবে, সেটা জমা দেওয়ার পর হবে নির্বাচন। নির্বাচনের তারিখ তো জানানো হয়নি। সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়নি।’’ তিনি এই ব্যাখ্যা দিলেও মামলাকারী রাহুল মেহরা এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দিল্লিতে রাতে ফোনে ধরা হলে বলে দেন, ‘‘আইনজীবীদের সঙ্গে কথা না বলে এটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছিলাম।’’
ফেডারেশন কর্তারা রাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় হাতে পাওয়ার পর স্বস্তিতে। তাদের ব্যাখ্যা এক) সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে কারও অনুমতি নিয়ে চেক কাটতে হবে। শুধু তাই নয়, টুনার্মেন্ট পরিচালনা থেকে সংস্থার পরিচালনা সবই করবে নির্বাচিত কর্মসমিতিই। দুই) ১৫ নভেম্বরের মধ্যে অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপের জন্য দরপত্র জমা দিতে হতো ফেডারেশনকে। সেটা এখন দেওয়া যাবে। আই লিগ চালাতেও কোনও সমস্যা হবে না।