Indian Paralympics

Sakina Khatun: প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা, টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে পদকের খোঁজে বসিরহাটের শাকিনা

বসিরহাটের গ্রাম থেকে কর্নাটক। সেখান থেকে প্যারালিম্পিক্সের যাত্রা এত সহজ ছিল না। পরিবারের বিচক্ষণতার অভাবে শাকিনাকে পোলিয়ো খাওয়ানো হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ১৬:৫৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শাকিনা খাতুন। ফাইল চিত্র

কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেটা ভারতের প্রথম মহিলা ভারোত্তোলক হিসেবে প্যারালিম্পিক্সে অংশ নিতে চলা শাকিনা খাতুনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নতুন অভিযান শুরু করার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছা ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন। ৩২ বছরের শাকিনার এখন লক্ষ্য একটাই। মীরাবাই চানুর স্মৃতি মনে করিয়ে ভারোত্তোলন থেকে পদক জয়।

Advertisement

পোলিয়ো আক্রান্ত হওয়ার জন্য সেই ছোটবেলা থেকে দুটো পা কাজ করে না। তবে ইচ্ছাশক্তি, লড়াকু মনোভাবের কোনও ঘাটতি নেই। সেই ইচ্ছাশক্তির জোরেই প্যারালিম্পিক্সে ভারতের পতাকা বহন করবেন ৩২ বছরের এই ভারোত্তোলক।

বসিরহাটের গ্রাম থেকে কর্নাটক। সেখান থেকে প্যারালিম্পিক্সের যাত্রাপথটা এত সহজ ছিল না। পরিবারে বিচক্ষণতার অভাবে তাঁকে পোলিয়ো খাওয়ানো হয়নি। এর ফল যখন খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন শাকিনাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় দুটো পা ফিরে পাওয়ার লড়াই। কিন্তু চার বার অস্ত্রোপচার করার পরেও নিট ফল সেই শূন্য। তবুও ভেঙে পড়েননি শাকিনা। পায়ের পেশীর জোর বাড়ানোর জন্য সাঁতারকে বেছে নিয়েছিলেন।

Advertisement

জাকার্তা প্যারা এশিয়ান গেমসে রুপো জেতার পর শাকিনা। ফাইল চিত্র

কর্নাটক থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে শাকিনা বললেন, “সাঁতারের জন্যই নতুন ভাবে বাঁচতে শিখেছিলাম। বেশ ভাল সাঁতার কাটতাম। খেলাধুলা নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। তাই ভেবেছিলাম জাতীয় স্তরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেব। কিন্তু সেটা হল না। এর পরেই আমার জীবন একেবারে বদলে গেল।”

কী ভাবে বদলে গেল সেটাও জানালেন শাকিনা। তাঁর কথায়, “সাঁতার সংস্থার কর্তারা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সময় আমার সঙ্গে দেশের প্রখ্যাত ভারোত্তোলক ফারমান বাশার পরিচয় হয়েছিল। ওঁর কথা শুনে ২০১০ সাল থেকে ভারোত্তোলন শুরু করি। নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ সবসময় ছিল। সেই জন্য বসিরহাটের গ্রামের বাড়ি ছাড়তেও দ্বিধা করিনি। বাশা স্যর সবসময় মানসিক শক্তি যুগিয়ে গিয়েছেন। গত ১০ বছর আমার ঠিকানা বেঙ্গালুরু। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক, সাই ও বাশা স্যরের সাহায্যে নিজেকে তৈরি করেছি।”

প্যারাঅলিম্পিক্সের জন্য তৈরি হচ্ছেন বঙ্গ তনয়া। ফাইল চিত্র

এ যেন আক্ষরিক অর্থে নিজেকে নতুন করে তৈরি করা। ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ জয়। ২০১৪ সালে জাকার্তা এশিয়ান প্যারা গেমসে রুপো জেতা। সেই সুবাদেই চলে এল টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সের টিকিট। জাপানে পা রাখার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। শাকিনার লড়াই দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে উচ্ছ্বসিত শাকিনা বললেন, “শারীরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমস্যা হতে পারে। সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বলেই এত বছর ধরে পরিশ্রম করে আসছি। প্রধানমন্ত্রীও সেটাই বলছিলেন। কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান প্যারা গেমসে দেশের পতাকা উড়তে দেখেছি। এ বার অলিম্পিক্সে ফের এক বার সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে চাই।”

লড়াইয়ের আর এক নাম শাকিনা। ফাইল চিত্র

কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। এই টোকিয়ো অলিম্পিক্সে মীরাবাই চানুর হাত ধরে ভারোত্তোলনে রুপো জিতেছিল ভারত। সেই টোকিয়োতেই চানুর স্মৃতি উসকে দিতে চাইছেন শাকিনা। তবে একটা আফসোস কিছুতেই কাটছে না। নীরজ কুমার, পিভি সিন্ধুদের সাফল্য গোটা দেশ দেখলেও প্যারালিম্পিক্সের প্রচার টেলিভিশনে হচ্ছে না। পাঁচ বছর আগে এই বিষয় নিয়ে ভারতের প্যারালিম্পিক্স সংস্থার তরফ থেকে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছিল। তবে লাভ হয়নি।

শাকিনার আক্ষেপ, “প্রথম বার অলিম্পিক্সে নামলেও বাবা-মা, গ্রামের লোকজন আমাকে দেখতে পাবে না। আমার মতো অনেক অ্যাথলিটের লড়াই দেখতে পাবে না। এর চেয়ে বড় আক্ষেপ কিছু নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement