হারের পর হতাশ ব্রাজিল দল। ছবি:এপি।
২০১১ কোপা আমেরিকার কোর্য়াটার ফাইনালে টাইব্রেকারে প্যারাগুয়ের কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিল ব্রাজিল। সেই কালো দিনের পরে দীর্ঘ চার বছর কেটে গিয়েছে। তবুও ছবিটা পাল্টাল না। এ বারও সেই প্যারাগুয়ে-বাধার কাছেই হার মানতে হল ব্রাজিলকে। ছিটকে যেতে হল কোপা আমেরিকা থেকে। তাও আবার সেই টাইব্রেকারে হেরে। শেষ চারে উঠে প্যারাগুয়ে আবার প্রমাণ করল কেন সাম্প্রতিক কালে তারা ব্রাজিলের জন্য ‘অপয়া’ দল হয়ে উঠেছে।
ভেনেজুয়েলা ম্যাচের মতোই এ দিনও ফরোয়ার্ডে রবের্তো ফির্মিনো সহ রোবিনহো-কুটিনহো ও উইলিয়ান ছিলেন। প্রথমার্ধের শুরুর থেকেই ব্রাজিল আক্রমণ তৈরি করতে থাকে। কুটিনহোর একটা লং রেঞ্জ শট ভাল সেভ করেন প্যারাগুয়ে গোলকিপার। ছোট ছোট পাস খেলে। দ্রুত বল মুভ করিয়ে চেনা ছন্দেই ছিল ব্রাজিল।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে রবিনহোর দলে থাকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, কোন যুক্তিকে ‘বুড়ো’ রবিনহোকে নেওয়া হচ্ছে। রবিনহো সেই প্রশ্নের উত্তরটা গোলের সৌজন্যেই দিলেন। মুভ শুরু করে নিজেই সেটা ফিনিশ করলেন। রবিনহোর থেকে এলিয়াস। এলিয়াস থেকে দানি আলভেজ। দানি আলভেজ থেকে রবিনহো। আর রবিনহো থেকে গোল। মুভটা ছিল ট্রেডমার্ক ব্রাজিল। সেই চেনা ফ্লুইড ফুটবলের মহড়া। দ্রুত পাসিংয়ের সঙ্গে ডিরেক্ট ফুটবল। ব্রাজিলের ভাল ফার্স্ট হাফের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল ডাবল পিভটে থাকা ফের্নান্দিনহো ও এলিয়াস। যাঁরা মিডফিল্ড নিজেদের দখলে রাখেন। কিন্তু বল দখলে রেখেও ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল।
গোল হজম করে অবশ্য গুটিয়ে যায়নি প্যারাগুয়ে। যারা সমতা ফেরাতে আক্রমণ করতে শুরু করে। দলের তারকা ফরোয়ার্ড সান্তা ক্রুজ ভাল জায়গায় সু্যোগ পেয়েও শট বাইরে মারেন। তবে প্রথমার্ধে থিয়াগো সিলভা আর মিরান্ডা জুটি কোনও জায়গা দেয়নি বিপক্ষকে। রবিনহো যেমন খেলা ছড়ায়। ফিলিপে লুইস আর দানি আলভেজ মুহুর্মুহু ওভারল্যাপ করতে থাকেন।
বিরতির পরেও প্যারাগুয়েও চাপ বাড়াতে থাকে। ব্রাজিল আবার একটা গোল করে ব্যবধান না বাড়িয়ে লিড ধরে রাখার প্রচেষ্টায় থাকে। সেট পিস থেকেই বেশি সু্যোগ তৈরি করে প্যারাগুয়ে। কর্নার থেকে ভালদেজের দুর্দান্ত হেড প্রায় গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। আবার এডগার বেনিতেজ একক দৌড়ে বিপদে ফেলে দেন ব্রাজিল ডিফেন্সকে। এত চাপের পড়ে অবশেষে সমতা ফেরায় প্যারাগুয়ে। থিয়াগো সিলভার হ্যান্ডবলের সৌজন্যে পেনাল্টি পায় প্যারাগুয়ে। স্পটকিক থেকে গোল করে ১-১ করেন ডের্লিস গঞ্জালেজ। টাইব্রেকারে ম্যাচ যাওয়ার ভয়ে জয়সূচক গোল খুঁজতে থাকে দু’দল। গঞ্জালেজের শট যেমন বাঁচান জেফারসন, উল্টোদিকে কুটিনহো দূরপাল্লার শট মেরে পরীক্ষা করতে থাকেন প্যারাগুয়ে গোলিকিপারকে। তাতেও স্কোর ১-১ থেকে ম্যাচ টাইব্রেকারে যায়।
চার বছর আগে পেনাল্টি শ্যুটআউট থেকে একটাও গোল করতে পারেনি ব্রাজিল। চারটের মধ্যে চারটেই মিস করেছিল। এ দিন সেটা হল না। ফের্নান্দিনহো, কুটিনহো, মিরান্ডা নিজেদের স্পটকিক থেকে গোল করলেন। তবে খলনায়কের তালিকায় ছিলেন রিবেরো ও ডগলাস কোস্তা। যাঁদের খারাপ মিস ব্রাজিলকে ছিটকে দিল কোপা থেকে। শেষ করে দিল ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনা সুপারক্লাসিকোর স্বপ্ন। পাশাপাশি প্যারাগুয়ের সান্তা ক্রুজ ছাড়া বাকি চারজন সঠিক পেনাল্টি মারেন। নিটফল, টাইব্রেকারে ৪-৩ জিতে রামোন দিয়াজের দল সেমিফাইনালে। আর ব্রাজিল ফের কোনও বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থ।
শেষ চারে প্যারাগুয়ের জন্য অপেক্ষা করছে আর্জেন্তিনা। যাঁদের সঙ্গে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ০-২ পিছিয়ে পড়েও শেষমেশ ২-২ করেন ভালদেজ-সান্তা ক্রুজরা। এ বারও কি সেই লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে আর্জেন্তিনাকে চমকে দেবে প্যারাগুয়ে, সেটা সময়েই বলবে।