আত্মবিশ্বাসী: চলতি মরসুমে তিন বার ফাইনালে উঠেও ট্রফি পাননি পি ভি সিন্ধু। ভারতীয় তারকা আশাবাদী, এই খরা কাটবে খুব তাড়াতাড়ি। —ফাইল চিত্র।
পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধুর এই মরসুমে একটিও ট্রফি জেতা হয়নি। তিন বার বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেও না। তবু গোপী চন্দের এই ছাত্রী ভেঙে পড়ছেন না। উল্টে চিনে আসন্ন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের ব্যাপারে তিনি অনেক আশার কথাই শোনাচ্ছেন।
এমনিতে রিয়ো অলিম্পিক্সে রুপো জয়ের পরে সিন্ধুর উন্নতির লেখচিত্র খুবই আশাব্যঞ্জক। গত বারই যেমন তিনি তিনটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ফাইনালে উঠেছেন ছ’টি কঠিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। কিন্তু গত বছরই আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, হং কং ওপেন এবং দুবাই সুপার সিরিজের ফাইনালে হারের ফলে তাঁর নামের পাশে অনেকে এখন ‘চোকার্স’ তকমা মেরে দিচ্ছেন। এ বছরও ছবিটা অনেকটা একই রকম। ইন্ডিয়ান ওপেনের ফাইনালে তিনি হেরেছেন। জিততে পারেননি কমনওয়েলথ গেমস এবং তাইল্যান্ড ওপেনের ফাইনালেও।
পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করেছেন সিন্ধুও। বলেছেন, ‘‘আমি জানি, পর পর ফাইনালে আমি হেরে যাচ্ছি। তবু জানবেন সব কিছুরই একটা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে। যখন আপনি সেমিফাইনাল বা কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাচ্ছেন, তখন আপনি ভুল থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। তা ছাড়া অনেক সময়ই ভাল খেলেও চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়া যায় না।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘ফাইনালে হারগুলো আমাকে চিন্তায় ফেলছে না। আসলে এ সব নিয়ে বেশি মাথাও ঘামাচ্ছি না। তা ছাড়া ফাইনাল খেলা মানে তো ট্রফি জয়ের পরেই সব চেয়ে ভাল ফল। তাই না? আমার তো মনে হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ প্রথম বা দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে যাওয়াটা। আর সেখানে ফাইনালে ওঠা মানে বেশ বড় সাফল্য। কে না জানে, ফাইনালে যে কোনও কিছুই
হতে পারে।’’
৩০ জুলাই ভারতীয় দলের সঙ্গে চিনের নানজিং রওনা দেবেন ২৩ বছরের এই ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা। ‘‘আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল কিছু করতে চাই। এ’কদিন ভাল প্রস্তুতিও চলছে। তা ছাড়া এশিয়ান গেমসও আছে। ওখানেও ভাল কিছু করতে চাই। জানি, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আমার পক্ষে খুবই কঠিন একটা সূচি হয়েছে। তাই কাজটা অত সহজ নয়,’’ বলেছেন সিন্ধু। তাঁর আরও কথা, ‘‘এমন নয় যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খুব হাল্কা ভাবে খেলতে পারব। ৬৪ জনকে নিয়ে সূচি হয়েছে। প্রথম গেমেই খেলতে হবে ফিতরিয়ানির (ইন্দোনেশিয়ার খেলোয়াড়, এখন বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২৯) সঙ্গে। এর আগেও ওর সঙ্গে খেলেছি। খুবই ভাল খেলোয়াড়। এখনও ভাল খেলছে। তাই প্রথম থেকেই আমার কাজটা কঠিন। যে কোনও কিছুই হতে পারে এই ম্যাচটায়।’’
সিন্ধুর খেলা এখন পর্যন্ত সেরা ম্যাচ বলা হয় গত বছর গ্লাসগোয় জাপানের নোজোমি ওকুহারার সঙ্গে ম্যাচটা। যে ম্যাচ চলেছিল ১১০ মিনিট। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সিন্ধু ও ওকুহারা একই দিকে পড়েছেন। তাঁদের দেখা হতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালেই। যা নিয়ে সিন্ধুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি জানি, সবাই নজোমির কথা বলছে। কিন্তু এখনই আমার পক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ওর সঙ্গে সম্ভাব্য লড়াই নিয়ে বলা ঠিক হবে না। তার কারণ, তার আগে আমাকে অন্য ম্যাচগুলোয় জিততে হবে। তা ছাড়া খেলতে হতে পারে সাং জি হিউনের বিরুদ্ধেও। এশীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে আমি তো ওর কাছে হেরেছিলাম। সেটা ভুলিনি। ওর স্ট্রোক প্লে খুবই ভাল।’’
এ দিকে, গ্লাসগো ফাইনালের কথা মনে করানো হলে সিন্ধু বলেছেন, ‘‘ওই ম্যাচটাও ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি। ভাল খেলা হয়েছিল। নোজোমিও দারুণ খেলেছিল। কিন্তু সেই ম্যাচ এখন ইতিহাস। এখন আমাকে নতুন করে শুরু করতে হবে। আর একটা নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’’
প্রসঙ্গত গত সপ্তাহেই সিন্ধু হেরেছেন ওকুহারার কাছে তাইল্যান্ড ওপেনে। গোপী চন্দের ছাত্রী মনে করেন, সেই হার থেকেও তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। ‘‘হ্যাঁ। যত বার আমাদের দেখা হয়েছে, তত বারই লড়াই হয়েছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ও জিতেছিল। কোরিয়াতে আমি ওকে হারাই। তার পর ও আমাকে জাপানে হারায়। আমি আবার অল ইংল্যান্ডে ওর বিরুদ্ধে জিতি। এ ভাবেই চলছে। আসলে আমরা দু’জনই প্রায় সমান-সমান। শেষ গুরুত্বপূর্ণ ২-৩ পয়েন্টেই পার্থক্য তৈরি হয়,’’ বলেছেন সিন্ধু।
এশিয়ান গেমস নিয়ে সিন্ধু বলেছেন, ‘‘জাকার্তাতে লড়াই কঠিন। ওখানে খেলার মানও যে কোনও সুপার সিরিজ প্রতিযোগিতার মতো। ক্যারোলিন মারিন ছাড়া বিশ্বসেরাদের সবাই প্রায় এশিয়ান গেমসে খেলবে। তাই জাকার্তাতেও পদক জেতা মুখের কথা নয়।’’