স্মৃতিচারণ: ইস্টবেঙ্গলের কোচের দায়িত্বে পিকে। ফাইল চিত্র
১৯৭২ সাল। ফুটবল মরসুম শুরুর মুখে এক সকালে ‘গ্যালারি’ পত্রিকার সম্পাদক শিবরাম কুমারের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে যাই। তখন সবে গ্র্যাজুয়েশন করছি। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে সে দিন প্রথম বার দেখলাম প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
’৬০ এর রোম অলিম্পিক্সের অধিনায়ক, ’৬২-র জাকার্তা এশিয়াডের সোনা জয়ী দলের সদস্য, দীর্ঘ বারো বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং গত ৮৫ বছরে তিন প্রধানের বাইরে এক মাত্র দল হিসেবে ইস্টার্ন রেলের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বড় ভূমিকা নেওয়া প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি ’৭২ সালে লাল হলুদের দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোচের সংজ্ঞাটাই পাল্টে গেল। সুশীল ভট্টাচার্য, মহম্মদ হোসেন, স্বরাজ ঘোষ, রমনী সরকার, অচ্যুত বন্দ্যোপাধ্যায়রা এমনকী অমল দত্তেরও কোচিংয়ে হাতেখড়ি হয় ’৬৩ সালে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। পরে মোহনবাগানেরও কোচ হন। তবে এক জন কোচ যে দলের তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে জনপ্রিয়তায় সমান তালে পাল্লা দিতে পারেন, এবং কখনও কখনও সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়েও যেতে পারেন, সেটা প্রথম দেখিয়ে দেন পিকে-ই।
ফুটবলার হিসেবে তাঁর বিরাট ভাবমূর্তির জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। ’৭৫ সালের ভরা মরসুমে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিকে তাঁর করা একটা মন্তব্য তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। সে বছর মহমেডানের টানা পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাপটের সঙ্গে লড়াই করে তাঁর সামনে ষষ্ঠ বার লিগ জয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। এক দিন তো যতটা মনে পড়ছে, রেড রোডে তিনি মহমেডান সমর্থকদের হাতে ঘেরাও হয়ে যান।
’৭২ সালে কোচ হয়েই ঝড় তুলে দেন তিনি। ইস্টবেঙ্গল সে বার ত্রিমুকুট জেতে। গোটা মরসুম অপরাজিত থেকে। পাঁচটা প্রতিযোগিতায় খেলে পাঁচটিতেই চ্যাম্পিয়ন। ’৭৩-এও পাঁচটি ট্রফি জেতে ইস্টবেঙ্গল। ’৭৫-এ টানা ষষ্ঠ লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং শিল্ড ফাইনালের ডার্বিতে ৫-০ জেতার দাপট, যা আজও বৃহত্তম ব্যবধানে জয়ের নজির হয়ে রয়েছে। পরের চার বছর পিকে-ঝড়ে ভেসে যায় মোহনবাগান। ’৭৭-এ মোহনবাগানেও তিনি ত্রিমুকুট এনে দেন। তার আগে ছয় বছরের খরা কাটিয়ে এনে দেন কলকাতা লিগ। সঙ্গে আরও ট্রফি। ’৭৭-এর পেলে ম্যাচ তো ইতিহাস। ’৮০-তে আবার তিনি ‘ভঙ্গুর’ ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব পান। এর পরে আবার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল। কোচিং জীবনের শেষটা মোহনবাগানে। লাল হলুদ তাঁবুতে কোচ পিকে-এনে দিয়েছেন ২৮টি ট্রফি। মোহনবাগানে তার চেয়ে তিনটি কম। তাঁর বিখ্যাত ‘ভোকাল টনিক’ নিয়ে আজও চর্চা হয় ময়দানে। আমার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনের সব চেয়ে বর্ণময় চরিত্র তাই পিকে-ই।