উপ্পলে উমেশ। শনিবার। -পিটিআই
কিপার মুশফিকুরের সাতখুনও কি মাফ হতে পারে? এখন হয়তো পারে। কারণ, ব্যাটসম্যান মুশফিকুর দেশের মান বাঁচানোর লড়াইয়ে যে ভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন কিপার মুশির সামনে, তাতে রবিবার উপ্পলে তাঁর পাঁচ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করলে তিনি দেশে জাতীয় নায়কের সম্মান পেতে পারেন।
সাকিব আল হাসান আর একজন। তাঁর তো আবার টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিও আছে। মুশফিকুরের আগেই তাঁর টেস্ট ক্রিকেটের তিন হাজার ক্লাবে ঢোকা হয়ে গিয়েছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ভারতের চাপানো প্রায় সাতশোর ইনিংসের পাল্টা ব্যাট করতে নেমে সাকিব যে এমন একটা ইনিংস খেলবেন, সে রকম প্রত্যাশা ছিলই বাংলাদেশের।
এই দু’জন যথাক্রমে অপরাজিত ৮১ ও ৮২ করে বাংলাদেশকে এতটা দূর নিয়ে গেলেন, যা বিরাট কোহালি ও তাঁর দল হয়তো ভাবতে পারেননি। পারলে বোধহয় সাতশোর গণ্ডিটা পেরিয়ে মনস্তাত্ত্বিক চাপটা আরও কিছুটা বাড়িয়ে তার পর ডিক্লেয়ার করতেন। এই জায়গাটাতেই কোহালির হিসাব কিছুটা হলেও ওলোটপালোট করে দিয়েছেন মুশফিকুর ও সাকিব। তাঁদের ১০৭ রানের পার্টনারশিপে ভারতের পরিকল্পনাটা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল টেস্টের তৃতীয় দিন। যে দিনের শেষে বাংলাদেশ ৩২২-৬।
ফলো অন বাঁচানোর ধারে কাছেও যদিও এখনও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। সেটা করতে এখনও ১৬৬ রান দরকার তাদের। আরও দু-একটা বড় পার্টনারশিপ দরকার বাংলাদেশের, যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মুশফিকুর ও মেহদি হাসান মিরাজ। দু’জনে মিলে ৮৭ রান তুলে ফেলেছেন। রবিবার সকালেই বড় পরীক্ষা তাঁদের। উমেশ যাদব (২-৭২) শনিবার সকালে যে রকম ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন, রবিসকালে যদি তাঁর সেই রূপ দেখতে হয় ওপার বাংলার দুই ব্যাটসম্যানকে, তা হলে তাঁদের লড়াই শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না। বিরাট কোহালি এখন নিশ্চয়ই সে দিকেই তাকিয়ে।
শনিবার খেলা শেষে সাকিব স্বীকার করেই নিলেন, উমেশের বিষাক্ত স্পেলটা ছাড়া বাকি সময়টা স্বাচ্ছন্দেই ব্যাট করেছেন তাঁরা। কারণ, উপ্পলের উইকেটে এখনও সে ভাবে ঘূর্ণির আগমন হয়নি। সকালে উমেশের ন’ওভারের স্পেল নিয়ে সাকিব বলেন, ‘‘আমার টেস্ট কেরিয়ারে এমন স্পেল আগে দেখিনি। এটাই সেরা। আমরা একসঙ্গে কেকেআরে খেলি। উমেশ কেমন বোলিং করে জানি। ওই স্পেলে ও দু’দিকেই বল সমান মুভ করাচ্ছিল। কয়েকটা ডেলিভারি তো খেলাই যায়নি।’’
রবিবার সকালে ফের সে রকমই একটা স্পেল নিশ্চয়ই উমেশের কাছ থেকে চাইছেন বিরাট কোহালি। শনিবার ভারতের তিন পেসারই যে ভাবে রিভার্স সুইং করিয়ে গেলেন, রবিবার সকাল থেকেই তেমন ধারালো আক্রমণ শুরু করলে বাংলাদেশের এই জুটি যে ঝামেলায় পড়ে যাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে এ দিন যে প্ল্যান নিয়ে ক্রিজে নেমেছিলেন মুশফিকুর, সেটা রবিবারও তাঁর খেলায় থাকলে তিনি ফের অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারেন। কী ছিল সেই প্ল্যান? সাকিব বললেন, ‘‘মুশফিকভাই পুরো ইনিংসে একটাও বাজে শট খেলেনি। মারার বল মেরেছে। ছাড়ার বল ছেড়েছে। ডিফেন্সও করেছে ঠিকমতো। মিরাজও ভাল ব্যাট করছে। ওরা যদি কাল সকালে একই রকম ব্যাটিং করতে পারে, তা হলে সকালের সেশনে ১০০-১২০ তুলে ফেলতে পারব হয়তো। সেটা ফলো অন বাঁচানোর দিকে এগিয়ে যাব আমরা।’’
মুশফিকুর অবশ্য এ দিন তাঁর ১৮ রানের স্কোরেই আম্পায়ারের দেওয়া বেনিফিট অব ডাউটে জীবন পেয়ে যান। সাকিবের কলে একটু দেরিতে সাড়া দিয়ে ওপারে পৌঁছতে একটু দেরিই হয় বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের। ডাইভ দিয়ে ক্রিজে পৌঁছতে গিয়ে ব্যাটটাও শূন্যে উঠে পড়ে। জাডেজার থ্রোয়ে ঋদ্ধিমান স্টাম্পের বেল ওড়ানোর সময় নেহাত মুশির ব্যাটের উপরের অংশটা মাটিতে ঠেকে ছিল। সে জন্যই এ যাত্রা বেঁচে যান। সাকিবের ইনিংসও যে নিখুঁত, তাও নয়। বারবার শরীরের অনেক বাইরের বল ওড়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছিলেন। স্পিনারদেরও ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে আক্রমণ করছিলেন। সে রকমই একটা শটে মিড অনে ধরা পড়ে যান তিনি। রবিবারও যদি এ রকমই হয়, তা হলে বাংলাদেশের এই লড়াইটা কার্যত ব্যর্থই হয়ে যাবে।
ভারত প্রথম ইনিংস ৬৮৭-৬ ডি: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৪১-১ এর পর) তামিম রান আউট ২৪, মমিনুল এলবিডব্লিউ উমেশ ১২, মাহমুদুল্লাহ এলবিডব্লিউ ইশান্ত ২৮, সাকিব ক উমেশ বো অশ্বিন ৮২, মুশফিকুর ৮১ ব্যাটিং, সাব্বির এলবিডব্লিউ জাডেজা ১৬, মেহেদি ৫১ ব্যাটিং, অতিরিক্ত ১৩, মোট ৩২২-৬। পতন: ৪৪, ৬৪, ১০৯, ২১৬, ২৩৫। বোলিং: ভুবনেশ্বর ১৭-৬-৪৬-০, ইশান্ত ১৬-৫-৫৪-১, অশ্বিন ২৪-৬-৭৭-১, উমেশ ১৮-৩-৭২-২, জাডেজা ২৯-৮-৬০-১।