আইপিএলে বিরল বিশ্রামের দিন ছিল সোমবার। প্রায় দু’মাস এক নাগাড়ে অ্যাকশনের পর সন্ধেয় কোনও ম্যাচ না থাকা কিছুটা অস্বস্তিকর। আসলে আইপিএল একটা আসক্তির মতো আর কখনই আমার এতে মন ভরে না। তাই রেস্ট ডে কে কোনও সময়েই স্বাগত নয়, অন্তত আমার কাছে। সোনির সঞ্চালক গৌরব কপূরের সেই টুইটটা মনে আছে, ‘‘৯ এপ্রিলের পর আমাদের কঠোর পরিশ্রমী ক্রু প্রথম ছুটি পেল। কিন্তু ওদের ঘুমের মধ্যেও নিশ্চয়ই কাজের কথা ভেসে উঠছে।’’
রাজধানীতে খারাপ আবহাওয়ার জন্য আমাদের কলকাতা-দিল্লি উড়ান সোমবার জয়পুর চলে গিয়েছিল। জয়পুরে বিমানে যখন বসে আছি, তখন সেই সময়কার কথা ভাবছিলাম যখন ক্রিকেট ম্যাচে রেস্ট ডে বলে একটা ব্যাপার ছিল। আমি সব সময়ই ক্রিকেট ট্র্যাজিক, রেস্ট ডে তাই কখনই আমার পছন্দের ছিল না। এমনকী বড় হয়ে ওঠার সময়ও না। এখনও আমার মাথায় ঢুকছে না কেন আমার ‘মাচো’ নাইটদের তরতাজা থাকার জন্য এক রাতের ঘুম যথেষ্ট নয়, কেন গোটা একটা দিন বিশ্রাম লাগবে?
তা ছাড়া রেস্ট ডে মানে তখন টিভিতে কোনও ক্রিকেট দেখারও উপায় ছিল না। আমায় প্রাগৈতিহাসিক মনে হওয়ার আগে আমার তরুণ পাঠকদের এটা জানিয়ে দিতে চাই আটের দশকের শেষ আর ন’য়ের দশকের শুরুর দিকে স্যাটেলাইট টিভি ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না, ফেসবুক-টুইটারও না। হ্যাঁ, এ রকমও একটা সময় ছিল বটে। টিভি সেটগুলো প্রাণ পেত শুধু সন্ধের দিকে। জাতীয় চ্যানেল সম্প্রচারকারীদের সম্মান করেই বলছি, সে সময় আমার ডুবে থাকার মতো জিনিস খুব কমই ছিল। হয়তো স্পাইডারম্যান ছিল। ‘দ্য জায়ান্ট রোবট’ বা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড দিস উইক’ যা সঞ্চালনা করতেন তরুণ ড. প্রণয় রায়। কিন্তু ক্রিকেট থাকলে টিভি আর জীবনের মানেটাই অন্যরকম হয়ে যেত।
আধুনিক টেস্ট ক্রিকেটে কোনও রোম্যান্টিক যদি রেস্ট ডে-র প্রস্তাব দিয়ে বসেন তা হলে কী হবে? আমার মনে হয় সম্প্রচারকারীদের সেলস টিমের কেউ তাঁকে খুন করে ফেলতেন বা নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন। আমাদের হার-জিত ছাড়াও ক্রিকেটকে ঘিরে একটা সেলস টার্গেট কিন্তু থাকে। সূদূর ভবিষ্যতে সম্প্রচারকারীরা তাদের ক্রিয়েটিভ ক্যানভাসকে আরও একটু প্রসারিত করে যদি এই সব দিনগুলোয় ক্রিকেট নিয়ে নতুন কিছু করার কথা ভাবেন অবাক হব না। উল্টে জড়িয়ে ধরব।
সোমবার আবহাওয়ার বিভ্রাট দিল্লিতে বিমান না নামতে দেওয়ায় আমাদের বিশ্রামের দিনটা হয়ে উঠল বিভীষিকা। দলের ক্রিকেটারদের পরিবার আর বাচ্চাদের জন্য আমার খারাপ লাগছিল। বাচ্চাটার আবার জ্বর হওয়ায় মর্কেল পরিবারকেই ধকল সহ্য করতে হল সবচেয়ে বেশি। অনেক রাতে ডিনার করার পর আমরা দিল্লির পথে রওনা হলাম। কিন্তু আমায় বাড়িতে যেতেই হবে এটা মাথায় রাখার পরও সকালে দিল্লি পৌঁছে হোটেলের বেডে শরীরটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। একটুও শক্তি আর ছিল না। বুধবারের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা সামনে রেখে সফরটা একেবারেই আদর্শ ছিল না। কিন্তু কীই বা করা যাবে।
যখনই আমি দিল্লিতে খেলতে নামি, আমায় জিজ্ঞেস করা হয় ঘরের মাঠে নামার অনুভূতিটা কেমন। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সে চলে আসার সময় থেকেই আমার উত্তরটা কিন্তু একই থেকেছে। আইপিএল চলার সময় আমার হোম কলকাতা, দিল্লি নয়। ফিরোজ শাহ কোটলায় বেশ ভাল প্র্যাকটিস করলাম আমরা। উমেশ আস্তে আস্তে পুরো ফিট হয়ে উঠছে। এখানকার আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। আশা করছি বুধবারও আবহাওয়া এমনই থাকবে। না হলে এটা একটা বাধ্যতামূলক বিশ্রামের দিন হয়ে যাবে। তাই না?