ঠিকানা বদলাচ্ছেন ওমিদ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
বেড়ে উঠেছেন ইরানে। ফুটবলের পাঠও সে দেশেই। ইরানের ফুটবলমহলে পরিচিত ওমিদ সিংহের এ বার নতুন ঠিকানা এ দেশ। তাঁর বাবার জন্ম ভারতে। তাই পিতৃভূমির হয়ে খেলার ইচ্ছা শাখাপ্রশাখা মেলতে শুরু করে দিয়েছে তাঁর মনে। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কথাবার্তাও প্রায় চূড়ান্ত হয়েই গিয়েছে। নতুন ক্লাব, ভারতের জাতীয় দল, নিজের খেলার ধরনধারণ নিয়ে ওমিদ সিংহ কথা বললেন আনন্দবাজার ডিজিটাল-এর সঙ্গে।
ইস্টবেঙ্গলে আপনার আসা তো একপ্রকার পাকাই। ইরানের ক্লাব ছেড়ে এ দেশে আসছেন কেন?
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কথা আমি আগে থেকেই জানতাম। আমার চেনা পরিচিতদের কাছ থেকেও ইস্টবেঙ্গল নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। ফুটবলার হিসেবে আমি চাই এমন একটা ক্লাবের হয়ে খেলব, যে ক্লাবটার নাম রয়েছে, প্রচুর ফ্যান আছে। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কথা শুরু হতেই অনুভব করেছিলাম, এই ক্লাবে সই করা যায়। আমার কাছে ভারতের এবং ইয়োরোপের কয়েকটি ক্লাবে খেলার প্রস্তাব ছিল। অনেক চিন্তাভাবনা করেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারতের ক্লাবে খেলতে আসার পিছনে অবশ্য আরও একটা কারণ রয়েছে। ভারতের হয়ে খেলা আমার স্বপ্ন। তার জন্য আমি অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি এবং বলছি।
মজিদ বিসকর ইস্টবেঙ্গলে খেলে গিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসার আগে মজিদের থেকে নিশ্চয় পরামর্শ চাইবেন?
ভারতীয় ফুটবল নিয়ে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। আমি জানি প্রবাদপ্রতীম মজিদ বিসকর ইস্টবেঙ্গলে খেলে গিয়েছেন। অতীতে ইরান থেকে আরও কয়েক জন ভারতে খেলে গিয়েছেন। জামশেদ নাসিরি এখনও ভারতেই রয়েছেন। ভারতে যাওয়ার আগে আমি অবশ্যই মজিদ স্যরের পরামর্শ নেব। জানতে চাইব ওঁর অভিজ্ঞতা। সেগুলো আমার দারুণ কাজে আসবে।
ইস্টবেঙ্গলে আপনি খেলবেন, এই খবর শুনে সমর্থকরা উল্লসিত। আপনার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
হ্যাঁ আমি জানি। কলকাতার ফুটবল পাগল দর্শকরা আমার আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে শুনেওছি। আমি কলকাতার ফুটবল-ভক্তদের উদ্দেশে বলছি, আপনাদের ভালবাসার যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করব। কলকাতার ফুটবল ভক্তরা ভাল ফুটবল দেখতে পছন্দ করেন। আমি ভাল ফুটবল তুলে ধরব ওঁদের সামনে। ইস্টবেঙ্গল বড় ক্লাব, ক্লাবের প্রচুর ফ্যান রয়েছে। মাঠে নেমে ভক্তদের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করব।
দুটো উইংয়েই খেলতে পারেন ওমিদ।
ভারতের হয়ে খেলার ইচ্ছা হল কেন?
আমার বাবা ভারতীয়। ফলে ভারতের উপরে আমার তো একটা টান থাকবেই। আর সেই কারণেই ভারতের হয়ে খেলার ইচ্ছাটা আমার বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে আমার পরিবার ও বাবার সঙ্গেও কথা বলেছি। ভারতের পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্বের জন্য আমি আবেদনও করব। আশা রাখি ভারত সরকার আমার এই আবেদনে সাড়া দেবে। আমি বড় হয়েছি ইরানে। এ বার আমি আমার বাবার দেশে যেতে চাই। ফুটবল মাঠে ভারতের হয়ে নিজেকে মেলে দিতে চাই। বড় টুর্নামেন্টে ভারতকে সাফল্য এনে দিতে চাই। আশা করি আমার এই ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।
ভারতের ফুটবল লিগ সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে?
ভারতের ফুটবল সম্পর্কে আমি যথেষ্ট খোঁজখবর রাখি। ক্লাবগুলো সম্পর্কেও জানি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। এ রকম একটা দেশেই তো খেলতে যাওয়া যায়। অন্য দিকে এশিয়ার সেরা টিম ইরান। লিগও দারুণ শক্তিশালী। এখানকার লিগে খেলে আমিও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি। ইরান লিগের কাঠিন্য থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ফুটবলার হিসেবে এত দিন যা শিখেছি, তা ভারতে গিয়ে উজাড় করে দিতে চাই। ভারতের জাতীয় দলের বর্তমান কোচ স্টিমাচের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্ব পেয়ে গেলেই আমি ভারতের হয়ে নেমে পড়ব।
আপনি নাকি গোলকিপার ছাড়া সব পজিশনেই খেলতে পারেন?
ঠিকই শুনেছেন। একাধিক পজিশনে খেলতে পারি। ডান ও বাঁ— দুই দিকের উইংয়েই খেলতে আমি সমান দক্ষ। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলেছি। আমার পছন্দের জার্সির নম্বর ৭ এবং ১০। সাত নম্বর জার্সি পরে খেলি বলে আমাকে ‘রোনাল্ডো’ বলে ডাকা হয়। রোনাল্ডোর খেলার স্টাইলের সঙ্গে আমার খেলার মিল রয়েছে বলে মনে করে ভক্তরা।
একাধিক পজিশনে খেলতে পারেন ওমিদ।
ইস্টবেঙ্গলের প্রবল প্রতিপক্ষ মোহনবাগান এ বার আইএসএল-এ খেলবে। ইস্টবেঙ্গল কোন লিগে খেলবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়েছে?
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে শুনেছি। মোহনবাগান আর এটিকে মিশে গিয়েছে, সেই খবরও জানি। ইস্টবেঙ্গল কোন লিগে খেলবে, এটা তো ক্লাবের কর্তারাই বলতে পারবেন। আমি ভারতে আসার জন্য দিন গুনছি বলতে পারেন। ইরানের লিগ শেষ হলেই আমি চলে আসব। ভারতের সব ক্লাব সম্পর্কে হোমওয়ার্ক করেই যাব। মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দেওয়াই হবে আমার একমাত্র লক্ষ্য। যখন যে ক্লাবে খেলেছি, সেই ক্লাবে নিজের সেরাটাই এত দিন দিয়ে এসেছি। ভারতে গিয়ে একই ভাাবে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।