স্বপ্নিল কুসলে। —ফাইল চিত্র।
প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতকে তৃতীয় পদক দিয়েছেন শুটার স্বপ্নিল কুসলে। ভারতের প্রথম শুটার হিসাবে ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজ়িশনে অলিম্পিক্সে পদক জিতেছেন। নায়কের সম্মান পাচ্ছেন মহারাষ্ট্রের ২৮ বছরের শুটার। অথচ তিনিই গত ন’বছর ধরে অবহেলিত।
অলিম্পিক্সেই প্রথম সাফল্য পেলেন না স্বপ্নিল। ২০২২ সালে শুটিংয়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। ২০২১ সালে শুটিং বিশ্বকাপে জিতেছিলেন সোনা। ২০২২ সালের এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছিলেন। রয়েছে আরও সাফল্য। তবু গত ন’বছরে পদোন্নতি হয়নি ভারতীয় রেলের কর্মীর। তাঁর ফাইল আটকে রয়েছে রেলের সদর দফতরে। বৃহস্পতিবার স্বপ্নিল পদক জয়ের পর হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছেন রেল মন্ত্রকের আধিকারিকেরা।
২০১৫ সালে মধ্য রেলে যোগ দিয়েছিলেন স্বপ্নিল। তার পর এক বারও পদোন্নতি হয়নি তাঁর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক সাফল্যের পরও কর্মক্ষেত্রের কর্তাদের টনক নড়াতে পারেননি। স্বপ্নিলের কোচ দীপালি দেশপাণ্ডে বলেছেন, ‘‘রেলকর্তাদের ব্যবহার এবং মানসিকতায় স্বপ্নিল অত্যন্ত হতাশ। ন’বছর ধরে রেলে চাকরি করছে। এত সাফল্যের পরও ওর কোনও পদোন্নতি হয়নি।’’
অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রেলকর্তারা। মধ্য রেলের সহকারী স্পোর্টস অফিসার রঞ্জিত মাহেশ্বরী বলেছেন, ‘‘শুক্রবারের মধ্যে স্বপ্নিলের দ্বিগুণ পদোন্নতি হবে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘স্বপ্নিলের পদোন্নতি আটকে রয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। আমরা জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, দু’দিনের মধ্যেই ওর দ্বিগুণ পদোন্নতি হবে।’’ বৃহস্পতিবারই স্বপ্নিলের পদোন্নতির জন্য মধ্য রেল প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করেছে। গত ন’বছরে স্বপ্নিলের একটিও পদোন্নতি কেন হয়নি, তার কোনও সদুত্তর দেননি মধ্য রেলের আধিকারিকেরা।
রেলের আধিকারিকদের নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্বপ্নিলের সহকর্মীদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় শুটারের এক সহকর্মী বলেছেন, ‘‘কর্তারা এখন চাপের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্বপ্নিল পদোন্নতি নিয়ে কথা বলতে গেলে সব সময় খারাপ ব্যবহারই পেয়েছে। কর্তাদের ব্যবহার ওকে মানসিক ভাবে আঘাত করত।’’ দীপালি বলেছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের আগে স্বপ্নিলকে অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। পদোন্নতির জন্য নাকি প্যারিস রওনা হওয়ার আগে ওর অফিস করাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু অনুশীলনের ব্যস্ততার জন্য সে সময় ওর পক্ষে অফিস যাওয়া সম্ভব হয়নি।’’
স্বপ্নিলের কোচ এবং সহকর্মীদের অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয়েছিল মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক স্বপ্নিল নীলার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘‘বিষয়টি না জেনে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। সাধারণ ভাবে এমন অসঙ্গতি হওয়ার কারণ নেই।’’ মধ্য রেলের আধিকারিকেরা অবশ্য কেউই বলতে পারেননি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক পদক জেতার পর স্বপ্নিলের কত বার পদোন্নতি হয়েছে, ২০১৫ সালে রেলে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁর এক বারও পদোন্নতি হয়েছে কি না।