বিনেশ ফোগট। ছবি: পিটিআই।
প্যারিস অলিম্পিক্সে অঘটন ঘটালেন ভারতের কুস্তিগির বিনেশ ফোগট। বিশ্বের এক নম্বর তথা গত বারের সোনাজয়ী ইউ সুসাকিকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে দিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে একটি প্যাঁচেই জিতলেন বিনেশ। গোটা সময় পিছিয়ে ছিলেন তিনি। জিতলেন ৩-২ পয়েন্টে। পরের ম্যাচে ইউক্রেনের ওকসানা লিভাচকে ৭-৫ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেলেন। পদক থেকে আর এক ধাপ দূরে তিনি।
গত বছর ভারতীয় কুস্তিতে টালমাটাল অবস্থা ছিল। তৎকালীন কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের মহিলা কুস্তিগির নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাঁদের অন্যতম সেরা মুখ ছিলেন বিনেশ। দিল্লির যন্তর মন্তরে দীর্ঘ দিন ধর্না দিয়েছিলেন তাঁরা। অলিম্পিক্সের ঠিক আগের বছরে এই কারণে প্রস্তুতির অনেকটা সময় নষ্ট হয়। অবশেষে ব্রিজভূষণ ইস্তফা দেন এবং নতুন করে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া সঞ্জয় সিংহকে নিয়েও খুশি ছিলেন না বিনেশরা। তবে অলিম্পিক্সে প্রস্তুতির কারণে আর আন্দোলন করতে চাননি। বিদেশে প্রস্তুতি নিতে চলে যান বিনেশ।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বাকি যাঁরা মুখ ছিলেন, সেই বজরং পুনিয়া এবং সাক্ষী মালিক অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। একা বিনেশের উপরেই ছিল জবাব দেওয়ার পালা। সেই জবাব তিনি দিলেন কুস্তির ম্যাটেই।
শুরুতে বিনেশের খেলা দেখে মনেই হয়নি তিনি জিততে পারেন। কুস্তির ম্যাটের দিকে এগিয়ে আসার সময়ে ভাবলেশহীন ছিল তাঁর মুখ। হয়তো সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের কীর্তির কথা ভেবে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন। শুরু থেকে কিছুটা পিছিয়েছিলেন তিনি। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক খেলতে থাকায় রেফারি তাঁকে দু’বার সতর্ক করে দেন। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পয়েন্ট না পেলে বিপক্ষ পয়েন্ট পেত। দু’বারই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পয়েন্ট পাননি। ফলে জাপানের কুস্তিগির ২-০ এগিয়ে গিয়েছিলেন।
বিনেশের সময় ক্রমশ কমছিল। উৎকণ্ঠা বাড়ছিল সমর্থকদের মধ্যে। আবারও একটা হতাশার গল্প তৈরি হচ্ছিল। পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে সব বদলে দিলেন তিনি। বিপক্ষের ক্ষণিকের ভুলের সুযোগ নিয়ে তাঁকে ম্যাটের বাইরে বার করে এক পয়েন্ট পেলেন। পাশাপাশি ‘টেক ডাউন’ করে আরও দু’পয়েন্ট। ৩-২ পয়েন্টে জিতলেন বিনেশ।
কেন সুসাকিকে হারানো অঘটন?
তিনি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা তো জিতেছেনই। মোট চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। দু’বার এশীয় চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া গোল্ডেন গ্রাঁ প্রি, অনূর্ধ্ব-২৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব ক্যাডেট চ্যাম্পিয়নশিপ, সব জায়গায় সোনা পেয়েছেন। এ রকম কুস্তিগিরকে প্রথম রাউন্ডে হারানো সহজ ছিল না। সেই অসাধ্যসাধনই করলেন ভারতের কুস্তিগির।