পিভি সিন্ধু।
নজমি ওকুহারার বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়েও শেষ মুহূর্তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ ভারতের পিভি সিন্ধু।
হায়দরাবাদের ব্যাডমিন্টন কন্যা ম্যাচের পর সেই হতাশা গোপন না করে বলে দিলেন, ‘‘সত্যিই হতাশ লাগছে। তৃতীয় গেমে সমানে সমান লড়াই হচ্ছিল। ২০-২০ হয়ে যাওয়ার পরে যে কেউ জিততে পারত ম্যাচে। এই ধরনের ম্যাচে সবাই সোনার জন্যই মরিয়া থাকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জয়ের কাছাকাছি যাওয়া সত্ত্বেও মাত করল ওকুহারাই।’’
ম্যাচে ২০-২০ হওয়ার পরে আনফোর্সড এরর-ই যে তাঁর জয়ের কাছে গিয়ে হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ, সেটাই ম্যাচের পর বলতে চেয়েছেন সিন্ধু। সোনাজয়ী ওকুহারা সম্পর্কে সিন্ধু আরও বলেন, ‘‘ওকুহারা মোটেও সহজ প্রতিপক্ষ নয়। ওর বিরুদ্ধে খেলা সব সময়েই শক্ত। ওকে মোটেই হাল্কা ভাবে দেখিনি। জানতাম একটা লম্বা ম্যাচ হবে। কিন্তু দিনটা আমার ছিল না।’’
এ দিন সিন্ধুকে হারিয়ে ওকুহারার ফাইনাল জিততে সময় লেগেছে প্রায় দু’ঘণ্টা। যা এ বারের টুর্নামেন্টের দীর্ঘতম ম্যাচ। যে ম্যাচ সম্পর্কে সিন্ধু বলছেন, ‘‘শারীরিক ও মানসিক ভাবে এই ধরনের ম্যাচ খুবই শক্ত। আমরা দু’জনেই পয়েন্টের জন্য কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়িনি। এক বার ও এগোচ্ছিল তো আর এক বার আমি। দুর্ভাগ্য এই ধরনের একটা আকর্ষণীয় ফাইনাল ম্যাচের পর আমি জিততে পারলাম না।’’
সিন্ধু সঙ্গে এটাও বলে যান, ‘‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে আমি আর সাইনা দু’জনেই পদক নিয়ে ফিরছি। ভারতীয়দের জন্য ভাল ফল অবশ্যই। তবে এই ম্যাচ আমাকে আগামী দিনে অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’’ সিন্ধুর প্রতিপক্ষ অবশ্য জানিয়ে দেন, ‘‘এত ক্লান্ত লাগছে যে কথাই বলতে পারছি না।’’ ৪০ বছর পরে কোনও জাপানি বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে উঠেছিলেন। এ বার সফলও হলেন।
গ্লাসগোয় ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল শুরুর আগে পি ভি সিন্ধুকে শুভেচ্ছা বার্তা টুইট করেছিলেন ভারতের বর্তমান এবং প্রাক্তন কোচ। শাস্ত্রী টুইট করেন, ‘চ্যাম্প, ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’ কুম্বলের টুইট ছিল, ‘ফাইনালে ওঠার জন্য অভিনন্দন। তোমার জন্য আমরা গর্বিত।’ ম্যাচ শেষের পরে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টুইটার হ্যান্ডলেও সিন্ধুস্তুতি চলেছে।
রক্তচাপ বাড়ানো ম্যাচ হেরে সিন্ধু ভেঙে পড়লেও ভারতীয় সমর্থকেরা কিন্তু বাইশ বছরের এই তারকাকে অজস্র অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে তিন বার পদক জিতে ফিরলেন সিন্ধু। আগের দু’বার ছিল ব্রোঞ্জ। এ বার গ্লাসগোয় আৈসার আগে বলেছিলেন, তিনি পদকের রংটা বদলে দেবেন। সোনার লক্ষ্য অপূর্ণ থাকলেও রূপো জিতে মাথা উঁচু করেই দেশে ফিরছেন তিনি।
৭৩ শটের বিস্ময় র্যালি
শুধু রেষারেষির দিক থেকেই নয়, রবিবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল র্যালির দিক থেকেও গোটা বিশ্বের নজর কেড়ে নিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় গেমের শেষ দিকে ৭৩ শটের র্যালিটা। সিন্ধুকে গেমটা জিততেই হতো ম্যাচে টিকে থাকতে। এক সময় পয়েন্ট এসে দাঁড়ায় ২০-২০। চতুর্থ গেম পয়েন্ট পান সিন্ধু। এর পরের দু’তিন মিনিটে ব্যাডমিন্টন ভক্তদের সিন্ধু আর ওকুহারা মাতিয়ে দেন দুরন্ত ওই র্যালিতে। কি ছিল না এই র্যালিতে? ড্রপ, হাফ স্ম্যাশ, স্ম্যাশ, মরিয়া ডাইভ, ঘাতক প্লেসিং, শেষ পর্যন্ত ৭৩ শটের যুদ্ধটা যখন সিন্ধু জিতে দ্বিতীয় গেম দখল করলেন, দুই খেলোয়াড়ই তখন ক্লান্তিতে হাঁটুগেড়ে বসে পড়েছিলেন কোর্টে। ফের উঠে দাঁড়াতে বেশ কিছুক্ষণ দম নিতে হয় দু’জনকে।