সোজাসাপ্টা: টেস্টের মান পড়ছে, বলে দিলেন সচিন। ফাইল চিত্র
উন্নত মানের পেস বোলারের অভাবেই টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণীয় সেই সব দ্বৈরথ হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর বহুদিনের সতীর্থ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইডেনে গোলাপি বলে দেশের প্রথম দিনরাতের টেস্ট আয়োজন করতে চলেছেন। আর তার মাঝেই সচিন চিন্তিত টেস্ট ক্রিকেটের স্বাস্থ্য নিয়ে।
সত্তর বা আশির দশকে সুনীল গাওস্কর বনাম অ্যান্ডি রবার্টস বা ডেনিস লিলি বা ইমরান খান দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকত ক্রিকেট জনতা। তেমনই সচিন বনাম ম্যাকগ্রা বা সচিন বনাম আক্রম-ইউনিস ছিল ক্রিকেটের সেরা আকর্ষণ। এখনকার টেস্ট ক্রিকেটে চিরাচরিত সেই দ্বৈরথের আকর্ষণটাই যেন ফিকে হতে শুরু করেছে। চব্বিশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে চলা সচিন যা ভাল করেই অনুভব করতে পারছেন। কয়েক দিন আগে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে বসে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা ব্যক্ত করে পরামর্শ দিয়েছিলেন, বোলার-বন্ধু পিচ বানানোর।
এ দিন সংবাদসংস্থাকে কার্যত একই কথা বলেন সচিন। ‘‘দ্বৈরথ হারিয়ে যাচ্ছে কারণ বিশ্বমানের ফাস্ট বোলারের সংখ্যাই খুব কম। নিশ্চিত ভাবেই সেই দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ফাস্ট বোলিংয়ের মান নিঃসন্দেহে অনেক ভাল হতে পারে।’’ দু’শো টেস্ট খেলা তিনি কয়েক দিন আগে আনন্দবাজারকে যা বলেছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি করেন, ‘‘ক্রিকেটের মান পড়েছে। সেটা টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ভাল খবর নয়। মানে উন্নত করতেই হবে এবং পিচ তৈরির উপরে নজর দিতে হবে।’’ যোগ করছেন, ‘‘যদি খেলোয়াড়সুলভ পিচ তৈরি করা যায়, যেখানে বোলাররাও সুবিধা পাবে, ফাস্ট বোলারদের মতোই যা সাহায্য করবে স্পিনারদের, তা হলেই ব্যাট ও বলের মধ্যে ভারসাম্য ফেরানো সম্ভব।’’ সচিন মনে করেন, সেই ভারসাম্যটা না থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যায় এবং তখন মানুষ সেই ম্যাচ সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পরে এ দিন বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সব চেয়ে বেশি করে কথা উঠছে অনেক দলের গুণগত মান নিয়ে। এই মুহূর্তে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড ছাড়া যে টেস্ট খেলা দেশের মধ্যে ভাল দল কেউ নেই, সচিনও মানছেন।
তবে পিচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবারও অ্যাশেজের কথা টেনেছেন একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডের অধিকারী। বলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিককালের সেরা পিচ দেখা গিয়েছে অ্যাশেজের সময়। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পিচটা অন্য রকম ছিল, তাই সেখানে হেডিংলে বা লর্ডস বা ওভালের মতো উত্তেজনাপূর্ণ টেস্ট দেখা যায়নি। আমি বলব, অ্যাশেজে উত্তেজনাপূর্ণ টেস্ট দেখা গিয়েছে।’’
এখনকার দিনে আইপিএলের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে প্রায় সমস্ত ফর্ম্যাটেই দল নির্বাচন সেরে ফেলা হচ্ছে। নিজে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো সফল আইপিএল দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সচিন এই প্রথার বিরোধী। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আইপিএলে কেউ ভাল করলে তাকে টি-টোয়েন্টি দলেই নেওয়া উচিত। কিন্তু তাকে যদি টেস্ট বা ওয়ান ডে-তে নেওয়া হয়, তা হলে প্রশ্ন উঠতেই পারে।’’ তিনি অবশ্য দ্রুত যোগ করছেন, যদি সেই ক্রিকেটার যশপ্রীত বুমরার মতো প্রতিভাবান হন, যিনি সমস্ত ফর্ম্যাটেই সফল হতে পারেন, তা হলে অবশ্যই ব্যতিক্রম ঘটানো যেতে পারে।
ঐতিহাসিক দ্বৈরথের কথা উঠলে সকলের মনে পড়ে যাবে তাঁর সঙ্গে শেন ওয়ার্নের ব্যাট-বলের লড়াই। ক্রিকেটের রূপকথায় ঢুকে রয়েছে যে দ্বৈরথ। আবারও সচিন বলে দিচ্ছেন, সেই দ্বৈরথ জেতার মূলে ছিল তাঁর প্রস্তুতি। ‘‘সিরিজটাকে দেখা হচ্ছিল সচিন বনাম ওয়ার্ন দ্বৈরথ হিসেবে। আমি জানতাম, ওয়ার্ন রাউন্ড দ্য উইকেট এসে আউট করার চেষ্টা করবে। আমার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল মুম্বই দলের সতীর্থ লেগস্পিনার সাইরাজ বাহুতুলে আর বাঁ-হাতি স্পিনার নীলেশ কুলকার্নিকে নিয়ে,’’ স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলছেন তিনি। ১৯৯১ সালে পার্থে করা টেস্ট সেঞ্চুরিকে কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত বলছেন তিনি। ‘‘আমি তুলনা করতে পছন্দ করি না। কিন্তু যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, পার্থের ওই ফাস্ট পিচে সেঞ্চুরিটা আমার মধ্যে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে, আমি যে কোনও পিচে যে কোনও বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে সফল হতে পারি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার আবির্ভাব ঘোষণার মতো ছিল সেই সেঞ্চুরি।’’ তার পরেই যোগ করছেন, ‘‘তবে কোমরের ব্যথা নিয়ে চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি বা সিডনিতে ডাবল সেঞ্চুরি করা ইনিংসে একটিও কভার ড্রাইভ না খেলা অথবা কেপ টাউনে ডেল স্টেনের বিধ্বংসী স্পেলের সামনে দাঁড়ানো— এগুলোও খুব উপভোগ করেছি।’’