হুঙ্কার: পাঁচ সেট লড়ে জেতার উল্লাস জোকোভিচের। মঙ্গলবার। ছবি রয়টার্স।
লন্ডনের আবহাওয়া এখন মনোরম। খুব ঠান্ডা নেই। খুব গরমও নয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এই সপ্তাহে একটু গরম বাড়তে পারে। উষ্ণতা এই সপ্তাহে আরও বাড়ছে উইম্বডনের লড়াইয়েও। শীর্ষবাছাইরা এগিয়ে যাচ্ছে দারুণ ভাবে।
মঙ্গলবার অবশ্য নোভাক জোকোভিচকে প্রবল লড়াই করতে হল সেমিফাইনালে উঠতে। ইটালির ২০ বছরের ইয়ানিক সিনার রীতিমতো চাপে ফেলে দিয়েছিল প্রথম দুই সেট জিতে। অবশ্য অভিজ্ঞতার জোরে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসে জোকোভিচই। উইম্বলডনে টানা ২৬টা ম্যাচ জিতে ফেলল জোকোভিচ। পাশাপাশি এখানে সেমিফাইনালে উঠল এই নিয়ে ১১ বার। অপর কোয়ার্টার ফাইনালেও পাঁচ সেট লড়াই চলল। শেষে বেলজিয়ামের দাভিদ গঁফাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল ব্রিটেনের ক্যামেরন নরি।
প্রথম দুটো সেটে জোকোভিচ কিছুটা রক্ষণাত্মক খেলছিল। সেই সুযোগে আগ্রাসী টেনিস শুরু করে ওর চেয়ে প্রায় ১৫ বছরের জুনিয়র সিনার। নিখুঁত খেলছিল ছেলেটা এই সময়। ওর সার্ভিস, ফোরহ্যান্ডের হদিশ পাচ্ছিল না ছ’বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন। কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। তার সঙ্গে সিনার দারুণ ভাবে ব্যবহার করছিল ড্রপ শট। এই ম্যাচের আগে সিনার এক বারই মুখোমুখি হয়েছিল জোকোভিচের। গত বছর মন্টে কার্লো মাস্টার্সে। সেখানে সহজেই জোকোভিচ স্ট্রেট সেটে সিনারকে হারিয়েছিল। কিন্তু এখানে ছবিটা অন্যরকম হয়ে যায়। সিনারের প্রথম দু’সেটে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল আত্মবিশ্বাসে ফুটছে।
চাপে পড়লেও জোকোভিচ কিন্তু তাড়হুড়ো করেনি। শান্ত ছিল। কারণ এর আগে ছ’বার ও একই রকম পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ফরাসি ওপেনের ফাইনালেও স্টেফানোস চিচিপাসের বিরুদ্ধে ও জিতেছিল দু’সেটে পিছিয়েযাওয়ার পরে।
তাই খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো জোকোভিচ পাল্টা জবাব দেয় তৃতীয় সেটে। কৌশল বদলে আরও বেশি আগ্রাসী খেলতে শুরু করে। কোর্টে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জোকোভিচ বলছিল, টয়লেট ব্রেক নিয়ে ওই সময় আয়নার সামনে নিজেকে তাতাচ্ছিল। তাতেই ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র ফিরে পায়। আমার মনে হয় শুধু তাতেই নয়, জোকোভিচের অভিজ্ঞতাও এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে বড় ভূমিকা নিয়েছে। তাই তৃতীয় সেটে শুরু থেকেই সিনারকে পাল্টা চাপ দিতে শুরু করে সার্ভিস রিটার্নে। বেসলাইনের পাশাপাশি নেটেও বেশি করে আসতে শুরু করে। ড্রপ শটের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়ে সিনারকে ওর অস্ত্রেই ঘায়েল করে পয়েন্ট তুলতে থাকে। তৃতীয় সেটের চতুর্থ গেমে জোকোভিচ ভেঙে দেয় সিনারের সার্ভ। ওই শুরু। সিনারের ছন্দ ভেঙে যাওয়ার পরে দাপট ছিল শুধু জোকোভিচেরই।
চতুর্থ সেটের অষ্টম গেমে নেটের দিকে ছুটে আসতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায় সিনার। গোড়ালি চেপে ধরে যন্ত্রণায়। জোকোভিচ সঙ্গে সঙ্গে নেট টপকে ওকে সাহায্য করতে ছুটে আসে। অনেকেরই এই সময় এ বারের ফরাসি ওপেনে আলেকজান্ডার জ়েরেভের চোট পাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভাল সিনারের সে রকম চোট লাগেনি।
রাফায়েল নাদালের প্রি-কোয়ার্টার ম্যাচটাও দেখেছি সোমবার। প্রথম দুটো রাউন্ডে যে রকম রক্ষণাত্মক নাদালকে কোর্টে দেখা গিয়েছিল পরের দুটো রাউন্ডে কিন্তু নিজের খেলাকে আরও একধাপ তুলে নিয়ে গিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে নাদালের সামনে টেলর ফ্রিৎজ। ছেলেটা জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছে। টানা আটটা ম্যাচ জিতেছে। একটাও সেট হারায়নি। তার চেয়েও বড় কথা এ বছর ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে নাদালকে হারিয়েছিল। কিন্তু সেন্টার কোর্টে খেলতে নামাটা একটা অন্য ব্যাপার। শরীরের থেকেও বেশি মানসিক চাপ বেশি থাকে। যেটা সামলানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে নাদালই।
অন্য কোয়ার্টার ফাইনালে নিক কিরিয়স মুখোমুখি ক্রিশ্চিয়ান গারিনের। আগেই বলেছিলাম কিরিয়স এ বার অনেক দূর যেতে পারে যদি মেজাজ ঠিক রাখতে পারে। স্টেফানোস চিচিপাসকে ও হারিয়ে সেটা প্রমাণ করেছে। তবে দু’জনেই পাঁচ সেট লড়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠছে বলে কে দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে উঠবে, সেটা বড় হয়ে উঠতে পারে ওদের লড়াইয়ে।
আমাদের আশা এ বারের উইম্বলডনে দারুণ ভাবে ধরে রেখেছে মিক্সড ডাবলসে সানিয়া মির্জা। দুর্দান্ত লড়াই করে সেমিফাইনালে উঠল ও আর ক্রোয়েশিয়ার মাতে পাভিচ। ওরা এ বারের ষষ্ঠ বাছাই। হারাল চতুর্থ বাছাইদের। এ বারই সানিয়ার শেষ উইম্বলডন। তাই প্রার্থনা করছি আরও একটা উইম্বলডন ট্রফি যেনজিততে পারে।