ম্যাচ শেষে কার্লোস আলকারাজকে (ছবিতে পিছন থেকে) জড়িয়ে ধরছেন নোভাক জোকোভিচ। ছবি: রয়টার্স
নোভাক জোকোভিচ স্বীকার করে নিচ্ছেন, কার্লোস আলকারাজের মতো কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আগে তিনি খেলেননি। তা হলে কি আলকারাজই তাঁর চোখে সব থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ? রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদালদের থেকেও কি ২০ বছরের স্প্যানিশ খেলোয়াড়কে এগিয়ে রাখছেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক? আসলে আলকারাজের মধ্যে ফেডেরার, নাদাল ও তাঁর নিজের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন জোকোভিচ।
উইম্বলডন ফাইনালে আলকারাজের কাছে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে হারার পরে জোকোভিচ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে, ওর মতো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে এর আগে আমি খেলিনি। গত এক বছর ধরে সবাই বলছে ওর খেলার মধ্যে রজার, রাফা ও আমার কিছু গুণ আছে। এই কথার সঙ্গে আমি একমত।’’
গত ২০ বছর ধরে টেনিস বিশ্বকে শাসন করেছেন ফেডেরার, নাদাল ও জোকোভিচ। ফেডেরারের ২০, নাদালের ২২ ও জোকোভিচের ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম রয়েছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ৬৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকদের ছায়া আলকারাজের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন জোকার।
কার কোন গুণ আলকারাজের মধ্যে রয়েছে সেটাও বলেছেন জোকোভিচ। ম্যাচ শেষে জোকোভিচ বলেন, ‘‘স্পেনের খেলোয়াড়দের যে বজ্রকঠিন মানসিকতা থাকে সেটা আলকারাজের আছে। আমি রাফার মধ্যে সেটা দেখেছি। ওরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। এই ধরনের খেলোয়াড়দের হারানো কঠিন। এ ছাড়া ওর বেশি কিছু ব্যাকহ্যান্ডের সঙ্গে আমার মিল পেয়েছি। কখনও কখনও তো আমার থেকেও ভাল ব্যাকহ্যান্ড মারছিল আলকারাজ। আমি চাপে পড়ে যাচ্ছিলাম।’’
আর ফেডেরারের সঙ্গে কোথায় মিল আলকারাজের? সেই মিলটা জোকোভিচ খুঁজে পেয়েছেন কোর্টের বাইরে। জোকারের মতে, দর্শকদের সমর্থন পাওয়ার দিক থেকে আলকারাজের সঙ্গে ফেডেরারের মিল রয়েছে। উইম্বলডন ফাইনালে সারা ক্ষণ দর্শকদের সমর্থন পেয়েছেন আলকারাজ। হলিউডের খ্যাতনামী থেকে শুরু করে ব্রিটেনের রাজপরিবার— সবাই আলকারাজের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে জোকোভিচ বলেন, ‘‘আলকারাজ দর্শকদের সমর্থন আদায় করতে পারে। এই গুণ রজারের ছিল। বড় ম্যাচে সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আলকারাজ সত্যিই পরিপূর্ণ খেলোয়াড়।’’
টানা চার বার উইম্বলডন জিতেছেন জোকোভিচ। ২০১৭ সালের পর থেকে টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত খেলোয়াড় যে এ ভাবে হারবেন তা তিনি নিজেই ভাবতে পারছেন না। আলকারাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম এত দিন সুরকির কোর্ট বা কখনও কখনও হার্ড কোর্টে তোমার বিরুদ্ধে খেলতে সমস্যা হবে। এখন তো দেখছি ঘাসের কোর্টের সঙ্গেও দারুণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছ। আমার লড়াই আরও বাড়ল। এর আগে মাত্র এক বার-দু’বার এই কোর্টে তুমি খেলেছ। এই প্রতিযোগিতার আগে ঘাসের কোর্টে দু-একটা প্রতিযোগিতাতেও জিতেছ। এত তাড়াতাড়ি ঘাসের কোর্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে ভাবতে পারিনি।”
আলকারাজকে প্রথম সেটে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার পরেই দুই সেটে পিছিয়ে পড়েছিলেন জোকোভিচ। চতুর্থ সেটে আবার প্রত্যাবর্তন। কিন্তু পঞ্চম সেটের তৃতীয় গেমে ব্রেক হওয়ার পরেই বুঝেছিলেন এই ম্যাচে ফেরা আর সহজ নয়। কতটা খারাপ লেগেছিল সেই সময়? জোকোভিচের উত্তর, “এ ধরনের ম্যাচে কখনওই হারতে চাই না। কিন্তু মনটা স্থির হলে বুঝতে পারব আমি কতটা ভাগ্যবান। এর আগের কয়েকটা বছরে অনেক কঠিন ম্যাচ জিতেছি। ২০১৯ সালে ফেডেরারের বিরুদ্ধে ম্যাচের কথাই মনে করুন। দু-দু’বার চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট থেকে এক ধাপ দূরে ছিল ফেডেরার। সেখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছি। অনেকগুলো ফাইনালেও হারের মুখ থেকে জিতেছি। তাই এ বার মনে হয় শোধবোধ হয়ে গেল।”