নোভাক জোকোভিচ, রাফায়েল নাদাল, রজার ফেডেরারের মধ্যে কে সর্বকালের সেরা?
গত এক যুগ ধরে বিশ্ব টেনিস মেতে রয়েছে ‘ছাগলের যুদ্ধে’। তিন মহারথী রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচের মধ্যে কে সর্বকালের সেরা? কার নামের পাশে বসবে ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (G.O.A.T)’ তকমা? কে হবেন ‘গোট’?
এই ১০-১২ বছরে সময় যত এগিয়েছে, ছাগলের যুদ্ধ তত কঠিন হয়েছে। কিন্তু রবিবার দ্বিতীয় বারের জন্য ফরাসি ওপেন জিতে বোধ হয় এই যুদ্ধকে একটু সহজ করে দিলেন জোকোভিচ। এবার হয়ত ছাগলের যুদ্ধে বিরতি। পরিসংখ্যান, অঙ্ক তাই বলছে।
ফেডেরার, নাদালের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সংখ্যা ২০, জোকোভিচের ১৯। প্রায় ধরে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক রেকর্ড বলছে, টপকে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। ৩৯ বছরের ফেডেরার শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন তিন বছর আগে (২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন)। ১৩ বার ফরাসি ওপেন জেতা বাদ দিলে ৩৫-এর নাদালের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম দুই বছর আগে। আর এই তিন বছরে জোকারের শোকেসে ঢুকেছে ৭টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি।
তবে কি এ বার গোট যুদ্ধে ইতি পড়তে চলেছে?
অনেকেই সেরকম মনে করছেন। তাঁদের হাতে আরও একটি পরিসংখ্যান। ওপেন এরায় জোকোভিচই একমাত্র, যিনি দু’ বার করে সবকটি গ্র্যান্ড স্লামই জিতলেন। রয় এমার্সন এবং রড লেভারের এই কৃতিত্ব আছে। এমার্সনের কীর্তি ওপেন এরার আগে। লেভারের কীর্তির কিছুটা ওপেন এরার আগে, কিছুটা পরে।
রেকর্ড বইয়ের পাতায় জোকোভিচের আধিপত্যের এটাই শেষ নয়। মোট ৬ বার বর্ষসেরা ক্রমতালিকায় শীর্ষে থেকে ২০২০ সালে স্পর্শ করেছেন ছোটবেলার আদর্শ পিট সাম্প্রাসকে। সবথেকে বেশি সপ্তাহ এক নম্বরে থাকার ক্ষেত্রে গত মার্চে টপকে গিয়েছেন ফেডেরারকে। এখন জোকোভিচের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩২৩। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ৯টি এটিপি মাস্টার্স ১০০০ (৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের পরে সবথেকে বড়) খেতাবই অন্তত ২ বার করে জিতেছেন। ওপেন এরায় ৩০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরে সবথেকে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস খেতাব জেতার রেকর্ডও জোকোভিচের নামের পাশে। এর মধ্যে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবই আছে। উইম্বলডন (২০১৮, ২০১৯), ইউএস ওপেন (২০১৮), অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (২০১৯, ২০২০, ২০২১) এবং এ বারের ফরাসি ওপেন।
গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলা, বা আর একটু এগিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা, এসব স্বপ্ন থাকে অনেকের। প্রায় বছর তিরিশেক আগে নোভি সাদের টেনিস ক্যাম্পে র্যাকেট তুলে নেওয়ার সময় কী স্বপ্ন দেখেছিলেন জোকোভিচ, সেটা গত ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড সংখ্যক ৯ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেতাব জেতার পর বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘‘আমার লক্ষ্যটা সবসময়ই অনেক বড় ছিল। রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখতাম। যদি বলি, এগুলো ভাবিনি, সত্যিই মিথ্যে বলা হবে। ছেলেদের সার্কিটে সেরা জায়গাটায় থাকব, এর বাইরে আর কিছু ভাবিনি।’’
সেরা জায়গাতেই তিনি আছেন। এখন বিশ্বের এক নম্বর তিনি। কিন্তু ‘লক্ষ্যটা যে সবসময় বড় ছিল’। তাই সর্বকালের সেরা হয়ে ছাগলের যুদ্ধ জয়ই এখন লক্ষ্য। মুখোমুখি লড়াইয়েও বাকি দুজনকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। ফেডেরারের বিরুদ্ধে তাঁর জয়-হারের সংখ্যা ২৭-২৩, নাদালের বিরুদ্ধে ৩০-২৮। গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জয়ের সংখ্যায় দুজনের থেকে মাত্র এক কদম দূরে।
এখনও একটা কীর্তি স্পর্শ করা বাকি আছে। ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম। অর্থাৎ এক বছরে চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। দু’ বার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন জোকোভিচ। চারটির মধ্যে তিনটি খেতাব জিতেছিলেন। এই বছর কি সেটা হবে? চিচিপাসকে হারানোর দিন জোকার কিন্তু বলেছিলেন, ‘‘সব সম্ভব।’’ সেটা সম্ভব হলেই হয়ত ছাগলের যুদ্ধের চিরকালীন বিরতি হবে।