হুঙ্কার: ফের কোহালির উইকেট নিলেন। উল্লসিত টিম সাউদি। গেটি ইমেজেস।
ওয়েলিংটন আর ক্রাইস্টচার্চের পিচের মধ্যে কিছু পার্থক্য নজরে পড়ল প্রথম দিনেই। ক্রাইস্টচার্চের পিচে বাউন্স কম, বল সে রকম দ্রুত যাচ্ছে না, একটু মন্থরের দিকে। দুই শহরের মাঠের মধ্যে আরও একটা ফারাক আছে। ওয়েলিংটনে তীব্র হাওয়ার সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের। ক্রাইস্টচার্চে সেটা করতে হল না।
কিন্তু এ সব সত্ত্বেও ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে গেল ২৪২ রানে। জবাবে নিউজ়িল্যান্ড বিনা উইকেটে ৬৩। ভারতীয় ব্যাটিংয়ে একটু সন্ত্রস্ত ভাব লক্ষ করলাম। এমন সব শট খেলে আউট হল, যা না খেললে কোনও ক্ষতি ছিল না। ভাল স্কোরের মঞ্চটা তৈরি করেছিল হনুমা বিহারীরা, কিন্তু নিজেরাই সেটা নষ্ট করল। ছুড়ে দিয়ে এল উইকেট।
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ম্যাচের রাশ কেন উইলিয়ামসনের দলের হাতে। এখান থেকে ফিরে আসতে হলে রবিবার ভারতের দর্শকদের ভাল করে ঘুম ভাঙার আগেই মহম্মদ শামিদের গোটা তিনেক উইকেট তুলে নিতে হবে। আর নিউজ়িল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে তিনশোর আশেপাশে আটকাতে হবে।
ওয়েলিংটনের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ভাল পিচ পেয়েও কেন ভারতীয় ব্যাটিং আবার ভেঙে পড়ল? আমি বলব, অহেতুক বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হল ব্যাটসম্যানরা। হয়তো নিউজ়িল্যান্ডের উপরে একটু আধিপত্য জারি করতে চেয়েছিল ওরা।
নিউজ়িল্যান্ডের ছ’ফুট আট ইঞ্চির পেসার কাইল জেমিসন পাঁচ উইকেট নিয়ে চলে গেল। ওর পাওয়া বাউন্স সমস্যায় ফেলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের কথাও বলতে হবে। বোল্ট হয়তো দু’উইকেট পেয়েছে কিন্তু নিখুঁত নিশানা, সুইং এবং মাঝে মাঝে শর্ট বলের ব্যবহারে ভারতকে চাপে রেখে গিয়েছে। যে চাপ কাটাতে জেমিসনকে আক্রমণের রাস্তায় গিয়ে উইকেট দিয়ে আসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
কোহালি আবার টস হারার পরে মায়াঙ্ক আগরওয়াল শুরুতে আউট হয়ে গেল। পৃথ্বী শ এই টেস্টে ভালই খেলছিল। ওর ব্যাটিংয়ে একটু টেকনিক্যাল পরিবর্তন দেখলাম যার জন্য ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিকে ধন্যবাদ দেব। ওয়েলিংটনে দেখেছিলাম পৃথ্বী বটম হ্যান্ড, অর্থাৎ ডান হাতের উপরে জোর দিয়ে ব্যাটটা তুলছে। যার ফলে ব্যাট নামছিল গালির দিক থেকে। যাতে ওর সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এখানে বাঁ-হাতে জোর দিচ্ছিল ব্যাকলিফ্টের সময় এবং ব্যাট নেমেছে দ্বিতীয় স্লিপ থেকে। পৃথ্বীও ওর স্বাভাবিক স্ট্রোকগুলো খেলতে পেরেছে। এ দিন দুরন্ত একটা অন ড্রাইভ মারল, যা ছিল দিনের সেরা শট। কিন্তু পৃথ্বীকে বুঝতে হবে উইকেটে জমে গেলে, বড় রান করে ফিরতে হবে। স্লিপে টম লাথাম অবশ্য অবিশ্বাস্য একটা ক্যাচ ধরে
পৃথ্বীকে ফেরাল।
কোহালিকে দেখে এ দিন অনেক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লাগছিল। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের কৌশলটা খুব ভাল খেটে গেল। টিম সাউদি পরপর আউটসুইং করছিল কোহালিকে। ঘাতক বলটা সিমে পড়ে সামান্য ভিতরে ঢুকে আসে। কোহালি আড়াআড়ি চলে যাওয়ায় মাথার ওজনটা অফসাইডে ঢলে পড়ে। কিন্তু এই রকম জায়গা থেকেও কোহালি এই ধরনের বল কব্জির মোচড়ে মিডউইকেট বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেয় অহরহ। এ দিন ব্যাটে বলে হল না। সাউদির বলটা মিডল স্টাম্পের সামনে কোহালির পা পেয়ে যায়। রিভিউ নিয়ে লাভ হয়নি। আরও একবার সাউদির শিকার হয়ে ফিরল ভারত অধিনায়ক। অজিঙ্ক রাহানে আউট হল চতুর্থ স্টাম্পের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে। যার কোনও মানে নেই।
ভারতের পরের দিককার ব্যাটসম্যানরা শর্ট বলের শিকার হল। যে শটগুলো ওরা না খেললেও পারত। হনুমা বিহারীর একটা ক্যাচ শুরুতেই ফেলেছিল নিউজ়িল্যান্ডের উইকেটকিপার ওয়াটলিং। প্রথম স্লিপের হাতে যাওয়ার মুহুর্তে ওয়াটলিং গ্লাভস বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত কিপারদের সঙ্গে প্রথম স্লিপের একটা অদৃশ্য বোঝাপড়া থাকে। এই বোঝাপড়ার একটু অভাব দেখা গেল হনুমার ক্যাচ ফস্কানোর সময়।
কিন্তু তাতেও ভারতের বিশেষ লাভ হয়নি। হনুমা হাফসেঞ্চুরি করে ওয়্যাগনারের শর্ট বল অহেতুক হুক করতে গিয়ে সেই ওয়াটলিংয়ের হাতে লেগ সাইডে ক্যাচ দিল। জেমিসন এমনিতে ছ’ফুট আট ইঞ্চি হওয়ায় ও বল ছাড়ছিল মোটামুটি সাত ফুট উচ্চতা থেকে। যার জেরে স্বাভাবিক একটা বাউন্স পেয়েছে। যে বাউন্সের শিকার চেতেশ্বর পুজারা এবং রবীন্দ্র জাডেজা। কেন ওরা ওই শট খেলল, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিশেষ করে পুজারার ক্ষেত্রে। অফস্টাম্পের উপরে শর্ট বলকে পুল মারছে পুজারা— এই দৃশ্য দেখব বলে ভাবিনি।
ঋষভ পন্থকে এই সিরিজে খেলানো হচ্ছে, কারণ ভারতীয় দল এক জন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান চাইছে। কিন্তু পন্থ যে ফর্মে, তাতে এই কৌশল খাটছে না। বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হল এ দিন। বরং ঋদ্ধিমান সাহা উইকেটের পিছনে থাকলে একটু ভরসা পাওয়া যেত। ভুললে চলবে না, ঋদ্ধিরও টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। ক্রাইস্টচার্চের পিচ যে ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভাল, তা নিউজ়িল্যান্ড ওপেনারদের খেলায় বোঝা গিয়েছে। এই অবস্থায় রবিবার সকালে কিন্তু শামি, উমেশ যাদবকে দারুণ বল করতে হবে। ইশান্ত শর্মার চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আর যশপ্রীত বুমরাকে এখনও সেই পুরনো মেজাজে দেখছি না।