নীরজ চোপড়া: ভারতকে সেরা সাফল্য দিলেন পানীপতের খান্ডরা গ্রামের ২৩ বছরের নায়ক। জীবনের প্রথম অলিম্পিক্সে ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে দেশকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে দিলেন সোনা।
অলিম্পিক্স অ্যাথলেটিক্স থেকে দেশকে প্রথম বার সোনা এনে দেওয়ার পরের দিন শরীরে তিনি ব্যথা অনুভব করেছিলেন। সোমবার ভারতে পা রেখে তা জানালেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া।
সোমবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সেই গল্প শুনিয়েছেন নীরজ। তিনি বলেছেন, “বিশেষ একটা কিছু যে করেছি, তা ভালই বুঝতে পেরেছিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, থ্রোটা খুব ভাল হয়েছিল। সেই সময় তো মনে হয়েছিল, ব্যক্তিগত রেকর্ডটাও উন্নত করতে পেরেছি।”
সেখানেই না থেমে নীরজ আরও বলেছেন, “সেই বিশেষ ব্যাপারটা যে কী, তা টের পেয়েছিলাম পরের দিন। শরীরে দারুণ ব্যথা হয়েছিল। তবে এটা ভেবেও ভাল লেগেছিল, সেই ব্যথা মূল্যহীন হয়নি। আমি বলব, এই পদকটা পুরো দেশের।” সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিযোগিতার মঞ্চে ভয়কে জয় করার মন্ত্রটাও রপ্ত করা দরকার। নীরজের কথায়, “আমি বলব, প্রতিপক্ষ হিসেবে যে-ই থাকুন, ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আসল কথা হল নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাতে হবে। সেই কারণেই কিন্তু এই সোনা এসেছে। প্রতিপক্ষকে কোনও সময়ে ভয় পাবেন না।”
সোমবার ভারতীয় খেলোয়াড়দের অভ্যর্থনা জানানো হয় লাল কার্পেটে। যেখানে নীরজ ছাড়াও ছিলেন ভারতীয় পুরুষ এবং মহিলা হকি দলের সদস্যরা। ছিলেন বজরং পুনিয়া, লাভলিনা বরগোহাঁই, দীপক পুনিয়াও। জমকালো সংবর্ধনার মধ্যেও নীরজ ভুলতে পারেননি তাঁর অতীতকে। বলেছেন, “মনে রাখবেন আমরা সকলেই কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। এই সাফল্যের ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন পাওয়া
খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
৪১ বছর পরে অলিম্পিক্স হকিতে পদক জয়ে উল্লসিত পুরুষ দলের অধিনায়ক মনপ্রীত সিংহ। তিনি বলেছেন, “দারুণ একটা অনুভূতি হচ্ছে। তবে সেই সঙ্গেই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চাই কেন্দ্রীয় সরকার, সাই এবং ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থাকে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এই উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব হত না।” অভিষেক অলিম্পিক্স থেকে মেয়েদের বক্সিংয়ে পদক নিয়ে ফেরা লাভলিনা বরগোহাঁই বলেছেন, “দেশে ফিরতে পেরে দারুণ আনন্দ হচ্ছে।” লাভলিনার অন্যতম কোচ শিব সিংহ বলেন, “আমি মনে করি অভিষেক অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পাওয়াও দারুণ কৃতিত্বের। পরের অলিম্পিক্স থেকে সোনা জিতে ফেরার ব্যাপারে লাভলিনাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা যায়।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না মীরাবাই চানু এবং পি ভি সিন্ধু। মেয়েদের হকিতে পদক না পেলেও গোটা দেশের মন জিতে নিয়েছেন রানি রামপালরা। তাঁদের নিয়েও উৎসবে মেতে ওঠেন ক্রীড়ামোদীরা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ কেকও কাটেন মহিলা হকি দলের খেলোয়াড়েরা। অল্পের জন্য রুপোর পদক হাতছাড়া করা কুস্তিগির বজরং পুনিয়া বলেছেন, “নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে পদক জয়ের
চেষ্টা করেছিলাম।”
এ দিন সকাল থেকেই নয়াদিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাস গড়ে জ্যাভলিনে সোনা জয়ী নীরজ চোপড়া-সহ ভারতীয় দলের বাকি সদস্যদের আগমনকে কেন্দ্র করে ক্রীড়ামোদীদের উত্তেজনা ছিল চরমে। ভারতীয় অ্যাথলিট দলকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সাই) প্রতিনিধিরা। ছিলেন জাতীয় সংস্থার সর্বময় কর্তা আদিল সুমারিওয়ালা। ভারতীয় দল বিমানবন্দরে পা রাখার পরেই দূরত্ববিধি ভুলে শুরু হয়ে যায় সমর্থকদের নাচ এবং গান।