মানসিক শক্তির প্রশংসা কোচের
Naseem Shah

আক্রমের ভিডিয়ো, কাদির-মন্ত্রে উদয় নতুন তারা নাসিম

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে হেরে গিয়েছে পাকিস্তান। দু’টো উইকেট পেয়েছেন নাসিম।

Advertisement

কৌশিক দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৬:৫৯
Share:

চর্চায়: পাকিস্তানের নতুন পেস প্রতিভা নাসিম শাহ। ফাইল চিত্র

বলটা দেখে অনেকে চমকে উঠলেও তিনি অবাক হননি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে নাসিম শাহের বাউন্সারে হেলমেট ফেটে যায় ক্রিস ওক্‌সের। যে ঘটনা দেখার পরেও নির্লিপ্ত সুলেমান কাদির। লাহৌর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে বলছিলেন, ‘‘আমি কিন্তু অবাক হইনি। হেলমেট ফাটানোর একটা অভ্যাস আছে নাসিমের।’’

Advertisement

সুলেমান কাদিরের দুটো পরিচয় আছে। এক, তিনি প্রয়াত লেগস্পিন কিংবদন্তি আব্দুল কাদিরের ছেলে। দুই, এই মুহূর্তে বিশ্বের সব চেয়ে দ্রুতগতির বোলারদের এক জন, পাকিস্তানের নাসিম শাহের ছোটবেলার কোচ। যাঁরা এত দিন স্পিনের পতাকা উড়িয়ে এসেছেন পাকিস্তানে, সেই কাদির পরিবারের হাত ধরেই উঠে এসেছেন আগুনে এক ফাস্ট বোলার। শুধু সুলেমান নন, তাঁর বাবা আব্দুল কাদিরের মন্ত্রেও দীক্ষিত নাসিম।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে হেরে গিয়েছে পাকিস্তান। দু’টো উইকেট পেয়েছেন নাসিম। কিন্তু আদায় করে নিয়েছেন ওয়াসিম আক্রম থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা। প্রথম টেস্টে ছাত্রের বোলিং কেমন লাগল? আব্দুল কাদিরের ছেলে সুলেমানের জবাব, ‘‘উইকেট বেশি না পেলেও খুব ভাল বল করেছে নাসিম। একটা কথা বলে রাখছি, মিলিয়ে নেবেন। ও কিন্তু এর চেয়েও জোরে বল করতে পারে।’’ নাসিম মোটামুটি ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন এই টেস্টে। কতটা জোরে বল করতে পারেন এই তরুণ ফাস্ট বোলার? প্রাক্তন অফস্পিনার সুলেমানের মন্তব্য, ‘‘১৪৫টা ওর স্বাভাবিক গতি। ও অনায়সে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে।’’

Advertisement

বছর পাঁচেক আগে লাহৌরের আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমিতে এসেছিলেন নাসিম। তখন থেকেই সুলেমানের কোচিংয়ে আছেন এই তরুণ। যে অ্যাকাডেমির প্রধান কোচ ছিলেন কিংবদন্তি লেগস্পিনার আব্দুল কাদির। নাসিমের কোন ব্যাপারটা আপনার প্রথম নজরে পড়ে? ‘‘গতি। কিশোর বয়সে একটা ছেলে ও রকম গতিতে বল করতে পারে, ভাবতে পারিনি,’’ বলছেন কোচ। সরকারি ভাবে দেখানো হচ্ছে, নাসিমের বয়স ১৭। যদিও তা নিয়ে নানা বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে।

কাদির প্রথমে দেখে কী বলেছিলেন? সুলেমান একটা মজার কাহিনি শোনালেন। নাসিমের কথা যখন তাঁর বাবাকে বলেছিলেন সুলেমান, তিনি দেখতে রাজি হননি। বলেছিলেন, আলাদা করে দেখার কী আছে! কোনও একটা ম্যাচে দেখে নেব। আর ম্যাচে দেখার পরে কী ছিল প্রতিক্রিয়া? সুলেমানের কথায়, ‘‘বাবা এসে বলেছিলেন, দারুণ বোলার। এই ছেলে অনেক দূর যাবে।’’ আব্দুল কাদির কী পরামর্শ দিয়েছিলেন তরুণ নাসিমকে? জানা যাচ্ছে, দুটো মন্ত্র দিয়েছিলেন প্রয়াত লেগস্পিনার। এক, ফলো থ্রুর সময় শরীরের একটা অংশ ঘোরালে হবে না, দুটোই ঘোরাতে হবে। অর্থাৎ, উপরের অংশটা ঘুরলে কোমরের নীচ থেকেও ঘোরাতে হবে। না হলে চোট লাগবে। দুই, কোনও সময় গতি কমাবে না, বরং বাড়াতে হবে। সুলেমান বলছিলেন, ‘‘আমরা এই দুটো ব্যাপারের উপরে জোর দিই। গতিও আগের থেকে বেড়েছে।’’ যে গতির জোরে একবার অনূর্ধ্ব ১৬-র ট্রায়ালে তিন ব্যাটসম্যানের হেলমেট ফাটিয়ে দেন নাসিম।

আরও একটা প্রিয় বিষয় আছে তাঁর। ওয়াসিম আক্রমের বোলিং ভিডিয়ো মন দিয়ে দেখা। দেখেছেন ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারের ভিডিয়োও। যে তথ্যটা দিলেন সুলেমানই। আক্রমের ভিডিয়ো দেখে কী শিখেছেন নাসিম? বল ছাড়ার সময়ে কব্জির ব্যবহারের উপরে নজর দেওয়া হয়েছে। ‘‘তবে নাসিমের পুরনো অ্যাকশনে কোনও বদল হয়নি। আমরা ওই অ্যাকশনটা ধরে রেখেছি,’’ বলছিলেন কাদির-পুত্র। এই প্রথম ডিউকস বলে বল করছেন নাসিম। ইংল্যান্ডে থাকা ছাত্রের সঙ্গে কী কথা হয়েছে? সুলেমান বলছেন, ‘‘ডিউকস বলের জন্য ওর কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আমি বলেছি, স্টাম্প টু স্টাম্প আর শরীর লক্ষ্য করে বলটা আরও বেশি করতে। তা হলে গতিতে চাপে ফেলতে পারবে ব্যাটসম্যানদের।’’

কিন্তু প্রথম টেস্টের হার কি মানসিক ভাবে চাপে ফেলবে নাসিমের মতো তরুণকে? সুলেমানের জবাব, ‘‘নাসিমের মানসিক শক্তি দারুণ। গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টের আগে ওর মা মারা যান। আমি তখন ওকে ফোন করেছিলাম। নাসিম আমাকে বলে, স্যর, আমি এখন পাকিস্তানে ফিরব না। টেস্ট ঠিক খেলব। এমনই মনের জোর ছেলেটার।’’

সেই মানসিক শক্তি আর গতিকে অস্ত্র করে এগিয়ে চলেছেন ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া নাসিম শাহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement