শহরের এক হাসপাতালে ইউসুফ পাঠান ও কালিস। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
প্রথমে ‘অপশনাল’ বা ঐচ্ছিক বলা হলেও মঙ্গলবার বিকেলে কেকেআরের নেটে গৌতম গম্ভীরের দলের ক্রিকেটারদের ভিড় দেখে তা বোঝার উপায় নেই। সবাই হাজির সেখানে।
রবিন উথাপ্পা শুধু ছুটি নিয়ে ক’দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছেন পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বাকিরা সবাই হাজির। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝাড়া তিন ঘন্টা অনুশীলনে যেমন নেটে ব্যাট হাতে নামলেন গম্ভীর থেকে শেলডন জ্যাকসন, তেমন বোলিং করলেন মর্নি মর্কেল থেকে বীর প্রতাপ সিংহ সবাই।
দু’দিন আগে ইডেনে যিনি ক্রিস গেইলের ক্যাচ ফেলেছিলেন দু-দু’বার, সেই মর্কেলকেও বেশ পরিশ্রম করতে দেখা গেল ফিল্ডিং প্র্যাকটিসে। ছ’দিন বিশ্রামের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তিন-তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ পুণে, দিল্লি ও বিশাখাপত্তনমে। বুধবার সন্ধেয় সেই সফরে রওনা হচ্ছে কেকেআর। তার আগের দিন পুরোদস্তুর প্র্যাকটিসে সব কিছুই দেখে রাখা হল। এর মধ্যে আবার গল্ফ খেলতে গিয়ে পাওয়া পিঠের চোটে কাবু বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রম।
প্রথম ম্যাচে জয়ের পর দুই নম্বরেই হোঁচট। শুরুটা এরকম হলেও গম্ভীর অবশ্য মিডিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এতে তিনি চিন্তিত নন। এ দিন নিজের গড়া সংস্থা গম্ভীর ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে যদিও স্বীকার করে নিলেন, ‘‘ভাল খেলিনি আমরা। তবে দীর্ঘ টুর্নামেন্টে ওঠা-পড়া তো লেগে থাকেই। একটা জয় ও একটা হার দিয়ে শুরু করাটা খারাপ নয়।’’ তবে আরসিবি ম্যাচ হারলেও কেকেআরের জনপ্রিয়তায় কোনও ভাঁটা পড়েনি। এ দিনই কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর টুইট করে জানিয়েছেন যে টুইটারে কেকেআরের ফলোয়ার দশ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
গত বার যিনি ছিলেন সাফল্যের অন্যতম স্থপতি, সেই সুনীল নারিন প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্ফলা। এর দায় অনেকটা ইডেনের পাটা উইকেটের উপর চাপানোর চেষ্টা করে গম্ভীর বললেন, ‘‘এখনও ও যথেষ্ট বিপজ্জনক। এখানে আসলে উইকেট খুব পাটা। তবে আমার বিশ্বাস, টুর্নামেন্ট যত এগোবে, নারিন আগের বারের মতোই সফল হবে।’’ নেটে ও নেটের বাইরেও এ দিন নারিন অস্ত্রে শান দেওয়ার পর্ব চলল। গম্ভীর নিজে অনেকক্ষণ ধরে কথা বললেন দলের নির্ভরযোগ্য স্পিনারের সঙ্গে। শহরে পা দেওয়ার পর নেটে এ দিনই সবচেয়ে বেশিক্ষণ বল করতে দেখা গেল নারিনকে।
পরের ম্যাচগুলো থেকে এমনিতেই অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সিরিজে খেলতে দেশে ফিরে গেলেন তিনি। তাঁর যথাযথ বিকল্প কে হবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা যেমন চলছে নাইট শিবিরে, তেমনই নারিনকে নিয়ে চাপা টেনশনও রয়েছে। গম্ভীরের কথা থেকেই তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। ভারতের আইস হকি দলকে তাঁর সংস্থার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর এ দিন বললেন, ‘‘সাকিব আমাদের দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ও চলে যাওয়ায় টিম কম্বিনেশন বদলাতেই হবে। তা নিয়ে ভাবার জন্য আরও দিন দুয়েক পাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’’ রায়ান টেন দুশখাতে ও যোহান বোথা দু’জনই এ দিন নেটে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। দু’জনের মধ্যে একজন হয়তো সাকিবের বদলি হিসেবে খেলতে পারেন। এই দুই ধাঁধা বাদে বাকিটুকু নিয়ে যাতে নতুন করে কোনও সমস্যা না দেখা দেয়, সে জন্যই এ দিন ভাল করে নিজেদের ঘষা-মাজা করে নিলেন গম্ভীররা। শনিবার পুণে-তে সহবাগের কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব, সোমবার কোটলায় যুবরাজের দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও বুধবার বিশাখাপত্তনমে শিখর ধবনের সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নামতে হবে গম্ভীরদের। আপাতত নিজেদের নিয়েই এত ব্যস্ত যে আসন্ন প্রতিপক্ষদের নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়নি নাইট শিবিরে। ক্যাপ্টেন নিজেই বললেন, ‘‘এখনও সময় আছে ওদের নিয়ে ভাবার। পুণেতে পৌঁছনোর পর ভাবনা-চিন্তা শুরু করব।’’
তার আগে সেই পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরি করে নিতে পারলেন কি না, তা শনিবার রাতের আগে বোঝার উপায় নেই।