স্মৃতি: মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনার মধ্যে হঠাৎই ক্রিকেট রাজনীতির আসরে পুনঃপ্রবেশ শ্রীনিবাসনের। নতুন মোচড়ে জমজমাট বোর্ড রাজনীতি।
শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে আবার ভারতীয় দলের নীল জার্সি পরে খেলতে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। তবে এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর ‘গডফাদার’ বলে পরিচিত এন শ্রীনিবাসন কিন্তু এখনও পুরোপুরি প্রাক্তন হয়ে যাননি। বোর্ড রাজনীতিতে আগের মতো সর্বময় কর্তা আর না থাকলেও, যদি কেউ ভেবে থাকেন শ্রীনি সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল থেকে সরে গিয়েছেন, ভুল ভাবছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বুধবারই বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার ক্রিকেট কর্তাদের নিয়ে শ্রীনি একটি টেলিকনফারেন্স করেছেন। তাতে মুখ্য আলোচনার বিষয় ছিল, কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের (সিওএ) বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখা হবে। ফোনালাপে অংশ নেওয়া কর্তাদের সংখ্যা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল না। শোনা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে অন্তত ১৫-১৬ জন হাজির ছিলেন।
কলকাতা থেকে কেউ কি টেলিকনফারেন্সে ছিলেন? দক্ষিণ এবং উত্তর ভারতের কয়েক জন কর্তা, যাঁরা ফোনালাপে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের কথায়, অভিষেক ডালমিয়া ছিলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইংল্যান্ডে ছিলেন, তাই সম্ভবত থাকতে পারেননি। না হলে ভিতরে-ভিতরে সিওএ বিরোধী অংশের মধ্যে যে তাঁরাও আছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যদিও দেখার, সিএবি শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভাবে শ্রীনির সঙ্গে থাকে কি না। কারণ, লোঢা সংস্কার সম্পূর্ণ করার কথাই ভাবছে তারা। শুধু টেলিকনফারেন্স করেই থেমে থাকা নয়, আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে সশরীরে হাজির থেকে পুরোদস্তুর সভাও ডাকছেন শ্রীনি। সেখানে আরও বিস্তারিত ভাবে যুদ্ধের ডাক দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
একাধিক রাজ্য সংস্থা সিওএ-র পরিচালন ভঙ্গি নিয়ে ক্ষুব্ধ। কারও কারও অভিযোগ, লোঢা সংস্কারকে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করা হচ্ছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এই অভিযোগের সুর আরও গতি পেয়েছে কারণ স্বয়ং বিচারপতি আর এম লোঢা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘সিওএ-র আচরণে আমি হতাশ। ওরা নিজেদের মতো করে লোঢা সুপারিশকে প্রয়োগ করছে। যা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।’’ ৮ অগস্ট ফের সুপ্রিম কোর্টে বোর্ডের সংস্কার নিয়ে শুনানি রয়েছে। সে দিন বোর্ডের পুরনো সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ লোঢার এই বক্তব্য তুলে ধরার কথা বলছেন। দিল্লির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সিওএ-র কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন ভাবেও আবেদন করা হতে পারে।
দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্রিকেট কর্তারা কেউ কেউ ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্তে নানা গলদ এবং অস্বচ্ছতার কথা তুলছেন। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারার পরেও সিওএ নির্বিকার, এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। দল নির্বাচনকে ঘিরে বারবার বিতর্ক হচ্ছে। তা নিয়েও হাত গুটিয়ে বসে আছেন কেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকেরা, সেই প্রশ্ন উঠছে। আবার একাধিক মহলের অভিযোগ, জাতীয় দলে দক্ষিণের ক্রিকেটারদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে বার বার বিতর্ক হচ্ছে। বিশ্বকাপে দীনেশ কার্তিক, বিজয় শঙ্কর। এমনকি, কেদার যাদবকেও লোকে চেনে তাঁর আইপিএল টিম চেন্নাই সুপার কিংস দিয়ে। কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছিল, শ্রীনি সর্বময় কর্তা থাকাকালীন চেন্নাই এক্সপ্রেস এ রকম দুরন্ত গতিতে ছুটত। এখনও কি তা হলে তিনি ক্ষমতাশালী আছেন?
কাকতালীয় হয়তো কিন্তু ঠিক যে সময়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ক্রিকেটীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখনই আসরে পুনঃপ্রবেশ শ্রীনির। সম্প্রতি সিওএ পূর্ণ সদস্য করে দিয়েছে পুদুচেরি ক্রিকেট সংস্থাকে। যার অর্থ, শ্রীনির তামিলনাড়ুর সরসারি প্রতিপক্ষ তৈরি হয়ে যাওয়া। পুদুচেরির পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া মানে ওই অঞ্চল থেকে দু’টি সংস্থা ভোটাধিকার পেয়ে গেল। ব-কলমে শ্রীনি-পরিচালিত টিএনসিএ (তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) এবং পুদুচেরি। দুই সংস্থার মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। বিশেষ করে শ্রীনির আমলে দু’পক্ষের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছিল। শ্রীনি এবং তাঁর অনুরাগীরা অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন যে, লোঢা সুপারিশে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল, তাদের অ্যাসোসিয়েট সদস্য করা হবে। তা হলে পুদুচেরিকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে কেন? বোর্ডের এক প্রভাবশালী কর্তার কথায়, ‘‘এ নিয়ে তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থা আদালতে যাবেই। যার অর্থ, বোর্ড নির্বাচন আরওই পিছিয়ে যাবে।’’
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অধীনস্থ নানা সংস্থা এখনও লোঢা কমিটির সংস্কার পুরোপুরি মেনে নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি করেনি। কোনও কোনও সংস্থা এখনও গাঁইগুই করে চলেছে, সব সংস্কার মানব না। ও দিকে সিওএ হুঁশিয়ারি জারি করেছে, যারা পুরোপুরি সংস্কার মেনে নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি করবে না, তারা ভোটাধিকার হারাবে। সমস্ত রাজ্য সংস্থায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সেরে ফেলতে চাইছিল সিওএ। আর বোর্ডের নির্বাচন করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিল অক্টোবরের মধ্যে। কিন্তু তীব্র ডামাডোলের এই আবহে ধরেই নেওয়া হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যে বোর্ড নির্বাচন সম্ভব হবে না।
তার আগে সব নজর এখন আগামী সপ্তাহের দিকে। শ্রীনির ‘দিল্লি চলো’ ডাকে কত জন সাড়া দেন, সেটাই দেখার। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, উৎসুক লোকের সংখ্যা কিন্তু বাড়তে শুরু করেছে। শ্রীনি ক্ষমতার বলয়ে থাকা মানে কি ধোনির ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও প্রভাব পড়তে পারে?
সময় বলবে!