প্রতিবাদী: প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে অভিযোগ করেছিলেন খালিদ।
এক দিকে যখন আই লিগের খেতাবি দৌড়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেন জোসেবা বেইতিয়ারা, তখন মাঠের বাইরে জোরালো ধাক্কা খেল মোহনবাগান! দলের চার প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচের অর্থ বকেয়া রাখায় নির্বাসনের মুখে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব। ৩০ দিনের মধ্যে বকেয়া না মেটালে দলবদলের নির্বাসনের মুখে পড়বে মোহনবাগান। ফলে আগামী মরসুমে নতুন কোনও ফুটবলার সই করাতে পারবে না তারা। এখানেই শেষ নয়। মোহনবাগানের তিন লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। ১৫ দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে।
ফেডারেশন সূত্রে খবর, আইএসএলে এই মরসুমে কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে খেলা রাজু গায়কোয়াড়ের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১১ লক্ষ টাকা। আর এক ফুটবলার ড্যারেন কালদেইরা মোহনবাগানের কাছে পান ৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৬০১ টাকা। তিনি কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে খেলছেন। এই মরসুমে সবুজ-মেরুন ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়া ডিফেন্ডার অভিষেক অম্বেকরের পাওনা ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। প্রাক্তন গোলরক্ষক রিকার্ডো কার্ডোজ়োর বকেয়া রয়েছে ৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। গত মরসুমে মোহনবাগানকে কোচিং করানো খালিদ জামিলের বকেয়া ৮.২০ লক্ষ টাকা। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেই বৈঠকে বসেছিলেন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যেরা।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বেতন বকেয়া রাখার অভিযোগ নিয়ে শনিবার রাতে নাগপুরে ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আলোচনায় বসেছিলেন ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যেরা। রবিবার বিকেলে ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারা বললেন, ‘‘মোহনবাগানকে আমরা জানিয়েছি, ৩০ দিনের মধ্যে সকলের বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। তা না হলে আগামী মরসুমে দু’টি ট্রান্সফার উইন্ডোর একটিতেও ফুটবলার সই করাতে পারবে না তারা।’’ তাঁরা যোগ করেন, ‘‘এটিকের সঙ্গে মোহনবাগান গাঁটছড়া বাঁধলেও এই শাস্তি বহাল থাকবে। ফেডারশনের অনুমোদিত প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবে না। তাই নির্বাসন এড়াতে হলে মোহনবাগানকে পনেরো দিনের মধ্যে জরিমানা অর্থ জমা দিতে হবে। আর তিরিশ দিনের মধ্যে চার ফুটবলার ও প্রাক্তন কোচের বকেয়া মেটাতে হবে।’’ রবিবার রাতের দিকে মোহনবাগানের ডিরেক্টর সৃঞ্জয় বসু ই-মেল বিবৃতিতে জানান, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকলের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’
কিছু জরুরি প্রশ্ন ও উত্তর
কেন জরিমানা ও নির্বাসনের আতঙ্ক?
•দলের চার প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ বকেয়া না পেয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
কারা আবেদন করেছেন?
•চার ফুটবলার হলেন রাজু গায়কোয়াড়, ড্যারেন কালদেইরা, অভিষেক অম্বেকর, রিকার্ডো কার্ডোজ়ো। আছেন প্রাক্তন কোচ খালিদ জামিলও।
ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
•৩০ দিনের মধ্যে সকলের বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে ফেডারেশনের কাছে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া না মেটালে শাস্তি কী?
•আগামী মরসুমে দু’টি ট্রান্সফার উইন্ডোর একটিতেও নতুন ফুটবলার সই করাতে পারবে না মোহনবাগান।
কী প্রভাব পড়তে পারে?
•আই লিগের খেতাবি দৌড়ে থাকা ফুটবলারদের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে। এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আগামী মরসুমে আইএসএলে খেলবে মোহনবাগান। নির্বাসিত হলে জোর ধাক্কা খেতে পারে শক্তিশালী দল গঠনের পরিকল্পনা।
কী ভাবে নির্বাসন এড়ানো সম্ভব?
•শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিদের দেওয়া সময়ের মধ্যে বকেয়া মেটাতে হবে।
ক্লাব লাইসেন্সিং ও আর্থিক স্বচ্ছতার নিয়ম লঙ্ঘন করায় দু’দিন আগেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে ইউরোপের ক্লাব প্রতিযোগিতা থেকে ২০২০-’২১ ও ২০২১-’২২ মরসুমের জন্য নির্বাসিত করেছে উয়েফা। ৩০ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৩৩ কোটি) জরিমানাও করা হয়েছে। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বিশ্বফুটবলে। মোহনবাগানকে কেন্দ্র করে একই পরিস্থিতি ভারতীয় ক্রীড়ামহলে। অবশ্য মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অতীতেও বকেয়া না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বছর দশেক আগে ওকোনয়ো ডায়মন্ডস্টার ও গুস্তাভো সিলভা বকেয়া না পেয়ে ফিফার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা দ্রুত দুই ফুটবলারের বকেয়া মেটানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিল মোহনবাগানকে।
কলকাতার আর এক প্রধান ইস্টবেঙ্গলের উপরেও শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছিল। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে ফুটবলার সই করানোর ব্যাপারে তাদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফেডারেশন। কারণ, মিনার্ভা পঞ্জাব এফসির ডিফেন্ডার সুখদেব সিংহকে নিয়ে কাজিয়া চরমে পৌঁছেছিল ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে। দুই প্রধানের কর্তারাই সুখদেবকে নিজেদের ফুটবলার বলে দাবি করেছিলেন। বিষয়টি গড়ায় ফেডারেশনের স্টেটাস কমিটিতে। ভারতীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, ফিফা এবং ফেডারেশনের নিয়ম না মেনে সুখদেবকে সই করিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। তাই ২০১৯-এর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও ফুটবলার সই করাতে পারবে না তারা। চার মাসের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন সুখদেবও। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের উপর থেকে নির্বাসন তুলে নিয়েছিল ফেডারেশন।