‘স্পাইডারম্যান’ টপকে আজ ডার্বি-প্রবাদ চুরমারের স্বপ্ন

একটা হারতে থাকা টিমকে উদ্বুদ্ধ করা, আর একটা জিততে থাকা টিমের ফোকাস ধরে রাখার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটা? ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা তিন সফল কোচের উত্তর অনেকটা এ রকম— প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: জিততে থাকা টিমকে দূর থেকে অনেকটা নদীতে আসা ভাঁটার মতো দেখায়। নিস্তেজ। কিন্তু একবার ভিতরে উঁকি মারলে বোঝা যায় সেটা কতটা অশান্ত, অস্থির। আত্মতুষ্টিতে ভরা। সেখানে একটা হারতে থাকা টিম অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারে।

Advertisement

প্রীতম সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২১
Share:

লক্ষ্য গোল। সালগাওকর ম্যাচের আগে অনুশীলনে বাগানের দুই স্ট্রাইকার সনি ও বোয়া। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

একটা হারতে থাকা টিমকে উদ্বুদ্ধ করা, আর একটা জিততে থাকা টিমের ফোকাস ধরে রাখার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটা?

Advertisement

ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা তিন সফল কোচের উত্তর অনেকটা এ রকম—

Advertisement

প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: জিততে থাকা টিমকে দূর থেকে অনেকটা নদীতে আসা ভাঁটার মতো দেখায়। নিস্তেজ। কিন্তু একবার ভিতরে উঁকি মারলে বোঝা যায় সেটা কতটা অশান্ত, অস্থির। আত্মতুষ্টিতে ভরা। সেখানে একটা হারতে থাকা টিম অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারে।

সুব্রত ভট্টাচার্য: একটা কোচের আসল পরীক্ষা হয় চ্যাম্পিয়নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে। ওই সময় দলটাকে ধরে রাখা বেশ শক্ত। তখন টিমগেম লাগে। সবচেয়ে দরকার হয়, কোচের বিশ্বাস ফুটবলারদের মধ্যে ইনজেক্ট করা। হারতে থাকা টিমে সেই চাপ অনেক কম।

সুভাষ ভৌমিক: দু’টোই কঠিন। তবে হারতে থাকা টিমকে উদ্বুদ্ধ করা একটু হলেও শক্ত। জিততে থাকা টিমের ভুল-ত্রুটিগুলো চোখ এড়িয়ে যায়। হারলে সেগুলোই কঙ্কালের মতো বাইরে বেরিয়ে আসে।

মোহনবাগান যে অশ্বমেধের ঘোড়ায় চেপেছে, তাতে বোধহয় প্রথম দুই কিংবদন্তির দর্শনের উপরই বেশি আস্থা সঞ্জয় সেনের। আই লিগে ‘দশে দশ’ অপরাজিত থাকার যুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে তাই বাগান কোচ বললেন, ‘‘বার বার ফুটবলারদের বোঝাচ্ছি, এখনও দিল্লি অনেক দূরে। লিগে শীর্ষে আছি এই ভেবে ঢিলেমি দিলে, তলিয়ে যাব। এত কষ্ট করে এখানে এসেছি। সব মাটি হয়ে যাবে।’’

এমনিতেই ময়দানে একটা কথা খুব চালু— যে ডার্বি জেতে, সে আর পরের ম্যাচ জিততে পারে না। সেখানে সালগাওকর এমন একটা টিম যাদের গোটা মরসুমে এখনও পর্যন্ত হারাতে পারেননি সনি-বোয়ারা। কতটা তৈরি সবুজ-মেরুন শিবির? সঞ্জয় বললেন, ‘‘প্রথমে বলা হয়েছিল মোহনবাগান নাকি লিগের প্রথম ম্যাচ জিততে পারে না। তার পর তৈরি করা হল টানা চার ম্যাচ অপরাজিত থাকার কাঁটা। সেটা নাকি হয় না। তো সেটাও পেরোলাম। এখন প্রশ্ন ডার্বির পরের ম্যাচটা জেতা যাবে কি না? যেটা নাকি আরও একটা মিথ। আমি একটা জিনিস বলতে পারি, এই মরসুমে আমরা সব মিথ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছি। তাই বারাসতের ম্যাচটা আমার কাছে চাপ নয়, চ্যালেঞ্জ।’’

করিম বেঞ্চারিফার ‘দশে দশ’ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছুঁয়ে সঞ্জয়ের জয়-যাত্রা আরও মসৃণ হয় কি না, সে তো শুক্রবার রাতেই বোঝা যাবে। তবে তার আগে টিমকে শুভেচ্ছা জানাতে বৃহস্পতিবার সাত সকালে ক্লাব তাঁবুতে হাজির পর্বতারোহীর একটা গ্রুপ। এ দিনই তাঁরা এভারেস্ট-জয়ের অভিযানে বেরোলেন। তার আগে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন সবুজ-মেরুন পতাকা। তাও আবার স্বয়ং বাগান অধিনায়ক শিল্টন পালের হাত থেকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, মে মাসে যখন জানা যাবে আই লিগ চ্যাম্পিয়নের নাম, তখনই সবুজ-মেরুন পতাকা উড়বে এভারেস্টের শৃঙ্গে। পর্বতারোহী টিমের এক সদস্য দেবরাজ দত্ত বলে গেলেন, ‘‘গত বারও ক্লাবের পতাকা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছন্দা গায়েনের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে নেপাল সরকার সব অভিযান বাতিল করে দেয়। এ বার পতাকা লাগিয়েই ফিরব। আই লিগও জিতব।’’

বাগান ড্রেসিংরুমে আই লিগ ঢোকে কি না, সে তো সময় বলবে। তার আগে সালগাওকর-কাঁটা টপকাতে মরিয়া সঞ্জয়। তবে সেটা যে খুব সহজ নয়, তা ভাল মতোই বুঝতে পারছেন বাগান কোচ। বিশেষ করে যখন বিপক্ষ দলের কোচ ডেরেক পেরেরা বললেন, ‘‘এই প্রথম কোনও ম্যাচে টিমের সব ফুটবলারকে পাচ্ছি। ডাফি-র সামান্য চোট আছে। তবে কিছু সময় খেলতে পারবে।’’ সেখানে বাগানের চিন্তা, বলবন্তের চোট। শুক্রবারের ম্যাচে সম্ভবত এক স্ট্রাইকারে (জেজে) নামবেন সঞ্জয়। রোমিং স্ট্রাইকার হিসেবে থাকবেন সনি-বোয়া। কাতসুমি খেলবেন উইথড্রল ফরোয়ার্ডে। মাঝমাঠে বিক্রমজিৎ-ডেনসন। চার ডিফেন্ডার বেলো-আনোয়ার-ধনচন্দ্র-কিংশুক। গোলে দেবজিৎ।

সনির চিন্তা অবশ্য মাঠ। প্র্যাকটিস শেষে বললেন, ‘‘ছোট মাঠে ওরা যদি আঁটোসাঁটো ডিফেন্স রাখে, তা হলে গোল করতে সমস্যা হতে পারে। আমি দৌড়তে বেশি পছন্দ করি। সেটা ছোট মাঠে করা খুব কঠিন।’’ পাশেই দাঁড়িয়ে তখন বোয়ার যুক্তি, ‘‘আমরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলব। যাতে ছোট মাঠের সুবিধা নিতে না পারে সালগাওকর। ওদের অ্যাটাকিং থার্ড আর মিডল থার্ডের মধ্যে সাপ্লাই লাইনটা কেটে দিতে হবে।’’

সনি-বোয়ারা গোটা মাঠের হিসেবনিকেশ তো সেরে ফেললেন। সালগাওকরের শেষ প্রহরীর কথা কি মনে আছে?

ভারতের ‘স্পাইডারম্যান’ সুব্রত পাল প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন কিন্তু!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement