শাস্তি হবে কি, প্রশ্ন রেফারিদের

লাল কার্ড দেখার পর কিংশুক সরাসরি ধাক্কা মারেন রেফারি রঞ্জিত বক্সীকে। যা গুরুতর অপরাধ। রেফারিকে হেনস্থা করার জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো তারকার পাঁচ ম্যাচের নির্বাসন হয়েছে সম্প্রতি। নেইমারকেও শাস্তি পেতে হয়েছে একই কারণে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

কিংশুক লাল কার্ড দেখার পরে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। রবিবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মরসুমের নাটকীয় প্রথম ডার্বি শেষের পর রবিবার রাতে মোহনবাগানের রেফারির উপর চড়াও হওয়া নিয়ে বিতর্ক এসে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে।

Advertisement

রেফারিং নিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রেফারির সিদ্ধান্ত খেলারই অঙ্গ। মেনে নিতেই হবে।’’ তবে সুরাবুদ্দিন মল্লিককে লাল কার্ড দেখানো নিয়ে লাল-হলুদ শিবির সামান্য হতাশ। কিন্তু অগ্নিগর্ভ মোহনবাগান শিবির। কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলে দেন, ‘‘ম্যাচটা ১৪ জনের বিরুদ্ধে খেলতে হবে সেটা জেনেই নেমেছিলাম। আমাদের বিরুদ্ধে যে পেনাল্টিটা দেওয়া হয়েছে, সেটা মনে হল না-ও দেওয়া যেত।’’ কোচের মতো রেখেঢেকে নয়, খেলার পর সরাসরি রেফারি ও আইএফএ-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। ইস্টবেঙ্গলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করেছেন আই এফ এ সচিবের পদত্যাগও। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে অধিনায়ক কিংশুক দেবনাথের অভব্যতা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মোহনবাগান কর্তারা।

লাল কার্ড দেখার পর কিংশুক সরাসরি ধাক্কা মারেন রেফারি রঞ্জিত বক্সীকে। যা গুরুতর অপরাধ। রেফারিকে হেনস্থা করার জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো তারকার পাঁচ ম্যাচের নির্বাসন হয়েছে সম্প্রতি। নেইমারকেও শাস্তি পেতে হয়েছে একই কারণে। বিতর্কে জড়িয়েছেন লিওনেল মেসি-ও।

Advertisement

কিংশুকের কি শাস্তি হবে?

আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘টিভিতে ম্যাচ দেখেছি। রেফারি এবং ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টে কিছু থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কী হতে পারে কিংশুকের? উৎপলবাবুর জবাব, ‘‘রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট না দেখে কী ভাবে বলব?’’ কিন্ত প্রাক্তন ফিফা রেফারি ও এএফসি-র রেফারি ইনস্ট্রাকটর প্রদীপ নাগ বললেন, ‘‘বিদেশে হলে শাস্তি অনিবার্য ছিল। আমাকে যখন সুব্রত ভট্টাচার্য ও মোহনবাগান টিম হেনস্তা করেছিল, তখন জরিমানা এবং নির্বাসিত করা হয়েছিল। এ বার কী হবে জানি না। তবে এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।’’

কিংশুককে লাল কার্ড দেখানো নিয়ে কোনও প্রতিবাদ করেননি মোহনবাগান কর্তারা। তাঁদের সব অভিযোগ মূলত ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে। অর্থসচিব বললেন, ‘‘আমরা আইনকানুন দেখব। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা বলছেন, ওটা পেনাল্টি ছিল না। নিয়ম থাকলে ফিফার কাছে সিডি পাঠাবো।’’

কিন্তু যে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইস্টবেঙ্গল ইতিহাস তৈরি করল তা কি সত্যিই ছিল? কলকাতার সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও আইন জানা প্রাক্তন রেফারি প্রদীপবাবু বললেন, ‘‘আমরা রেফারিদের ভাষায় এটাকে বলি ‘টাইট ডিসিশন’। ফিফটি-ফিফটি ব্যাপার। দিতেও পারে না-ও দিতে পারে। রেফারিদের উপর নির্ভর করে সব কিছু। টিভিতে যা দেখেছি তাতে বলটা মোহনবাগানের রেনিয়ার টোকা নিয়ে বের করলেও ধাক্কা একটা লেগেছিল প্রতিপক্ষ ফুটবলারের সঙ্গে। সে জন্য হয়তো পেনাল্টি দিয়েছে ওই দিকের লাইন্সম্যান।’’ তবে বহু ডার্বি খেলানো প্রাক্তন রেফারির মত, ‘‘এমনিতে রঞ্জিতরা ম্যাচটা খারাপ খেলায়নি। লালকার্ড বা মোহনবাগানকে যে পেনাল্টিটা দিয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’’

গ্যালারিতে যখন লিগ জয়ের উৎসবের বন্যায় মেতেছে লাল-হলুদ, তখন মোহনবাগান শিবিরে শুধুই আফসোস আর দোষারোপের পালা। আনসুমানা ক্রোমা টিম বাসে ওঠার আগে বললেন, ‘‘রেফারি খেলাটা শেষ করে দিলেন। জিততাম আমরাই।’’ চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল তাঁর। ক্রোমা-কামো-শিল্টনদের সঙ্গেই বেরিয়ে গেলেন কিংশুক। অপরাধীর মতো মুখ নিয়ে। যাওয়ার সময় বাগানের এক কর্তা বললেন, ‘‘আই লিগটা তো আছে। সেখানে রঞ্জিত বক্সী-রা তো থাকবেন না।’’ যা শুনে এক ইস্টবেঙ্গল কর্তার মন্তব্য, ‘‘ইতিহাস তো করে ফেললাম। সেখানে কাঁটা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে রেফারির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement