নির্দেশ: অনুশীলনের মধ্যে কোচ কিবুর সঙ্গে আলোচনা দুই অস্ত্র বেইতিয়া ও গঞ্জালেসের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আপনার বৃহস্পতিবারের প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়ান অ্যারোজকে পরামর্শ দিতে সুভাষ ভৌমিক কল্যাণী গিয়েছেন, জানেন?
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরোনোর মুখে সুভাষের নাম শুনে কিবু ভিকুনা থমকে দাঁড়ালেন। তারপর পাল্টা প্রশ্ন করেন, কে সুভাষ? উনি কি অ্যারোজের কোচিং স্টাফ? তাঁকে জানানো হয়, তিন বারের আইলিগ জয়ী কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অ্যারোজ কোচ সম্মুগম বেঙ্কটেশ। জোসেবা বেইতিয়াদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে যুব ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়েছেন সুভাষ। মোহনবাগানের স্পেনীয় কোচ হেসে ফেলেন। তারপর যুবভারতী সংলগ্ন মাঠের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে দেন, ‘‘তা হলে অবাক করার (মিরাকল) মতো কোনও ঘটনা নিশ্চয়ই কাল ঘটবে।’’
বনধের জন্য কল্যাণী থেকে দুপুরে সল্টলেকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসতে পারেননি অ্যারোজ কোচ। বিকেলে অনুশীলন ছিল, তাই আসা-যাওয়ার ঝুঁকি নেননি তাঁরা। অ্যারোজ না এলেও ম্যাচের সংগঠক মোহনবাগান স্কাইপে প্রশ্ন-উত্তরের ব্যবস্থা রেখেছিল। আই লিগে যা কখনও হয়নি। কল্যাণীর টিম হোটেলে বসেই নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বেঙ্কটেশ ও তাঁর দলের অধিনায়ক বিক্রম প্রতাপ সিংহ। কিন্তু নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে কল্যাণীতে দুপুরেই পৌঁছে যান দেশের অন্যতম সফল ক্লাব কোচ সুভাষ। ফুটবলার ও কোচেদের সঙ্গে অনুশীলনের আগে ও পরে কথা বলেন তিনি। কী বললেন? বাড়ি ফেরার পথে সুভাষ বললেন, ‘‘আমি কি বলেছি বেঙ্কটেশ বা মহেশ গাউলিকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ অ্যারোজ কোচ বললেন, ‘‘সুভাষ স্যর কলকাতার দুই বড় ক্লাবে খেলেছেন এবং কোচিং করিয়েছেন। উনি ছেলেদের পনেরো মিনিট ধরে বুঝিয়েছেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এই ম্যাচে সবাই সেরাটা দিয়ে তারকা হওয়ার চেষ্টা করে। ফেডারেশন যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেটা কাজে লাগাও।’’ দেশের যুব দলের ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি অ্যারোজের দুই কোচ বেঙ্কটেশ-মহেশের সঙ্গেও অনুশীলনের পরে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা গিয়েছে সুভাষকে। জাতীয় দলের প্রাক্তন ডিফেন্ডার দীপক মণ্ডলও পরামর্শ দেন ফুটবলারদের।
আমন্ত্রিত: অ্যারোজ দলের সঙ্গে সুভাষ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
অ্যারোজ বিদেশিহীন হলেও তারা যে ‘মিশন কাশ্মীর’ সফল হওয়া দলের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা জানেন মোহনবাগান কোচ। এ দিন কিবু বলেওছেন, ‘‘অ্যারোজ এমন একটা দল যারা যে কোনও সময় অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। যার সব চেয়ে বড় উদাহরণ শেষ ম্যাচেই দেখিয়েছে ওরা। ইস্টবেঙ্গলের থেকে যে দল তিন পয়েন্ট কেড়ে নিয়েছিল, সেই চার্চিলকে হারিয়ে এসেছে অ্যারোজ। যা থেকে স্পষ্ট, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামনে পড়তে চলেছি আমরা।’’
ভূস্বর্গে গিয়ে যে দলটি দুর্দান্ত ফুটবল খেলে জিতেছে, সেই দলে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না আজ। বুধবার নথিভুক্ত হলেও তাজিকিস্তানের কোমোরন তুর্সুনভকে রাখছেন না প্রথম একাদশে। তবে ফ্রান গঞ্জালেস শুরু থেকেই খেলবেন। এ দিন অনুশীলনে স্পেনীয় কোচ যে রণনীতি তৈরি করেছেন, তাতে পাপা বাবাকরের সঙ্গে ফরোয়ার্ডে খেলবেন সুহের ভিপি। জোসেবা বেইতিয়ার সঙ্গে মাঝমাঠে খেলবেন গঞ্জালেস, নংদাম্বা নওরেম এবং শেখ সাহিল। লিগ শীর্ষে থাকলেও অ্যারোজকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন সবুজ-মেরুন কোচ। বলে দিলেন, ‘‘স্পেনে এ রকম যুব দলের বিরুদ্ধে বহু ম্যাচ খেলেছি। বার্সেলোনা ‘বি’ দলের বিরুদ্ধে কোচিং করিয়েছি। এই দলগুলো অকুতোভয় হয়। যা প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। আর এখানে তো অ্যারোজের উপরে চ্যাম্পিয়ন বা অবনমনের কোনও চাপও নেই। এই দলটার মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি তা হল, পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে খেলায়। দ্রুত গতির পাসিং ফুটবল খেলে।’’
অ্যারোজে কোনও বিদেশি নেই। আপনার দলে পাঁচ বিদেশি। এটা তো বিরাট সুবিধা? হাশিখুশি কিবুর মুখটা গম্ভীর হয়। বলেন, ‘‘খেলা হবে ১১ বনাম ১১। কেরল, বাংলা, মাদ্রিদ সব ফুটবলার এখানে এক। কাশ্মীরে জিতে আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি। পাঁচ পয়েন্ট পাইনি। অ্যারোজকে হারালেও তিন পয়েন্ট পাব। সব ম্যাচ সমান গুরুত্বপূর্ণ।’’ পোলান্ড ও স্পেনে দীর্ঘদিন কোচিং করিয়ে আসা বেইতিয়াদের কোচের ভাবনা যে কতটা ঠিক তা, বোঝা যায় অ্যারোজ কোচের একটি মন্তব্যে। বেঙ্কটেশ বলে দেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে যখন খেলি তখন তো ১১ জন বিদেশির বিরুদ্ধেই খেলি। প্রতিপক্ষে ক’জন বিদেশি আছে, তা নিয়ে ভাবছি না। ছেলেদের বলেছি খেলাটা উপভোগ করো।’’
স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন থেকে ইগর স্তিমাচ—জাতীয় দলের বিদেশি কোচের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বেঙ্কটেশ। জানেন কী ভাবে দলকে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে চাঙ্গা করতে হয়। বলেও দিলেন, ‘‘সিনিয়র দলে কাজ করা সহজ। এখানে আমার ও ছেলেদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ।’’
অ্যারোজ ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে যে কোনও সময় বিপদে ফেলতে পারে। সেটা জানেন অভিজ্ঞ কিবু। আর সেজন্যই স্ত্রী-কে নিয়ে ড্রেসিংরুম ছাড়ার সময় মোহনবাগান কোচের কপালে চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট। অনায়াসে কাশ্মীর জয়ের পরেও।
বৃহস্পতিবার আই লিগে: মোহনবাগান বনাম ইন্ডিয়ান অ্যারোজ (কল্যাণী ৫-০০টা, ডি স্পোর্ট চ্যানেলে)