প্রস্তুতি: গঞ্জালেস, বেইতিয়া এবং পাপা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভূস্বর্গে গিয়ে রিয়াল কাশ্মীরকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল তাঁর দলের খেতাব জয়ের রাস্তা আরও মসৃণ করে দিয়েছে। অনুশীলন থেকে বেরিয়ে কিবু ভিকুনা মাঠে উপস্থিত কর্তাদের কাছে শুনলেন সুখবরটা। তার পরেই স্পেনীয় কোচের মুখে ফুটে উঠল হাসি। বলেই ফেললেন, ‘‘পুরো শক্তি নিয়েই কাল আইজলের বিরুদ্ধে মাঠে নামব আমরা। তিন পয়েন্টই লক্ষ্য।’’
লিগ টেবলের পরিস্থিতি যা, তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সোজা অঙ্ক পাঁচ ম্যাচে চাই মাত্র দু’পয়েন্ট। তা হলেও গোল পার্থক্যে পাঁচ বছর পরে ফের গোষ্ঠ পাল সরণির তাঁবুতে ঢুকে যাবে আই লিগ ট্রফি। সবুজ-মেরুন কোচের ভাবনায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, আজ মঙ্গলবার কল্যাণী স্টেডিয়ামেই সদস্য-সমর্থকদের বিজয় মিছিল শুরু করার রসদ তুলে দিতে চান তিনি।
কিবু সংযত থাকলেও, আইজলের বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে অনুশীলনের পরে অবশ্য ‘উৎসব’ করে দিলেন অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটানো ফুটবলারেরা। জোসেবা বেইতিয়া থেকে পাপা বাবাকর দিয়োহারা, ফ্রান গঞ্জালেস থেকে শঙ্কর রায়—সবাই সবুজ-মেরুন আবিরে দোল খেললেন চুটিয়ে। বাদ গেলেন না কার্ড দেখে বাইরে চলে যাওয়া ফ্রান মোরান্তেও। মাঠে উপস্থিত কর্তাদেরও মাখিয়ে দেওয়া হল আবির। তবে কিবু মুখে ‘হ্যাপি হোলি’ বললেও নিজে রং মাখেননি। যা থেকে স্পষ্ট, কোচ সতর্ক হলেও কাশ্মীরের হারের পর আর অপেক্ষা করতে রাজি নন ফুটবলাররা। ১৫ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট। স্ট্যানলি রোজারিওর দলকে আজ হারালে পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা পৌঁছে যাবেন ৩৯ পয়েন্টে। লিগে খেলা কাশ্মীর-সহ বাকি দশ দল সব ম্যাচ জিতলেও যা ছুঁতে পারবে না। তবে আইজলের সঙ্গে আজ ম্যাচ ড্র হলে ডার্বি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে মোহনবাগানকে।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে ডি’ককদের হাত না মেলানোর নির্দেশ
সে জন্যই সম্ভবত কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন বেইতিয়াদের হেডমাস্টার। লিগের প্রথম পর্বে কিবু বাহিনীকে রুখে দিয়েছিল জাস্টিস মর্গ্যানরা। খেলা ড্র হয়েছিল। সেটা মাথায় রেখেই কিবু এ দিন বলে দিলেন, ‘‘আইজল যথেষ্ঠ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। প্রচণ্ড দৌড়য়। ওদের হারানো কঠিন। সব চেয়ে বড় কথা। ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৭টা ম্যাচ ড্র করেছে ওরা। যেগুলো হেরেছে সেখানেও প্রচণ্ড লড়াই করেছে।’’ তা হলে কি আপনারা চাপে রয়েছেন? প্রশ্ন শুনে কিবু বলে দিলেন, ‘‘খেতাবের কাছে আছি বলে কোনও চাপ নেই। তবে চাপ রয়েছে তিন পয়েন্ট পাওয়ার। যেটা আমরা আগের ম্যাচে (চেন্নাই) পাইনি।’’ টানা তেরো ম্যাচ অপরাজিত মোহনবাগান কোচ মুখে যা বলেন, কাজেও তাই করেন। দোল-উৎসবে যখন মেতেছে বাংলা, তখন টানা প্রায় দু’ঘণ্টা ছাত্রদের নিয়ে রণনীতি তৈরি করেছেন কিবু। রক্ষণ শক্তিশালী রাখতে ফ্রান মোরান্তের জায়গায় ড্যানিয়েল সাইরাসকে খেলিয়েছেন স্টপারে। চোট সারিয়ে তিন ম্যাচ পরে খেলবেন দীর্ঘদেহী ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর ফুটবলার। আক্রমণে ধার বাড়াতে কোমরান তুর্সুনভকে তিনি জুড়ে দিচ্ছেন সুহের-বেইতিয়াদের সঙ্গে।
কিন্তু তাতে কি ড্র-এর ভাবনা নিয়ে খেলতে নামা আই লিগের দশ নম্বর দলকে সহজে হারাতে পারবেন কিবু? আইজল কোচ স্ট্যানলি রোজারিও একসময় মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে কোচিং করিয়ে গিয়েছেন। অভিজ্ঞতা প্রচুর। বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগানের উপরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ রয়েছে। আমাদের যা নেই। কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকেও ড্র করেছি। শেষ মিনিট পর্যন্ত আমার ছেলেরা লড়বে।’’ তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, পাহাড়ে যে মোহনবাগানকে প্রথম রুখে দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে এখনকার কিবুর দলের অনেক ফারাক। ‘‘পাপা এ বারের আই লিগের সেরা স্ট্রাইকার। মোহনবাগানের খেলায় স্পেনীয় ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছি,’’ বলে দিলেন স্ট্যানলি।
মঙ্গলবার আই লিগে
মোহনবাগান বনাম আইজল
(কল্যাণী ৫-০০, ওয়ান স্পোর্ট)।