ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এ বারের মতো খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের।
তবে ফেডারেশনের নতুন ফর্মুলায় সাড়া দিয়ে দুই প্রধান আই লিগে খেলবে কিনা, সেটা জানা যাবে বুধবার। শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বৈঠকের পর ক্লাব কর্তারা নিজেরাই রীতিমতো বিভ্রান্ত। বিদ্রোহের রাস্তায় হাঁটবেন না, প্রফুল্ল পটেলদের প্রস্তাব মেনে এ বারের মতো সমঝোতা করবেন, তা ঠিক করতে পারছেন না কেউই।
শনিবার দিল্লিতে সারা দিন নানা রকম প্রস্তাব নিয়ে দুই প্রধানের কর্তারা নানা প্রস্তাব দিলেও নীতা অম্বানীর কোম্পানির কর্তাদের রাজি করাতে পারেননি। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে আইএসএল কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বেঙ্গালুরু ও টাটা— নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে দশ দলের লিগ করবেন তারা। কলকাতা থেকে আইএসএল খেলবে শুধু আতলেতিকো দে কলকাতা।
এ দিন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর কলকাতার দুই বড় ক্লাবের কর্তারা বুঝে যান আই লিগ ও আইএসএল পাশাপাশি করতে বদ্ধপরিকর ফেডারেশন। এটা বদলানো যাবে না। ফলে নিজেদের দাবি থেকে সরে এসে দুই প্রধানের পক্ষ থেকে পাল্টা শর্ত দেওয়া হয় ফেডারেশনকে। এক) আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া হোক। দুই) দু’টো লিগের প্রথম চার বা পাঁচ দলকে নিয়ে সুপার কাপ হোক। সেখানে যারা চ্যাম্পিয়ন হবে তাদের এএফসি কাপে খেলার সুযোগ দেওয়া হোক।
যা মানতে রাজি হননি ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘আইএসএল বা আই লিগ কাউকেই সরাসরি এএফসির টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে না। বরং দু’টো টুর্নামেন্টের সেরা চার বা পাঁচ দলকে নিয়ে ইন্ডিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামে নতুন একটা লিগ হোক এ বছর। সেই লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সরা এএফসি-র দুটো টুর্নামেন্ট খেলুক।’’ যা শুনে বিভ্রান্ত বাংলার কর্তারা বলে দেন, ‘‘প্রস্তাবটা লিখিত আকারে পাঠান, আমরা উত্তর জানিয়ে দেব।’’ জানা গিয়েছে, দুই প্রধানের কর্তারা ঠিক করেছেন, শনিবারের সভার প্রস্তাব হাতে পেলে ফের আইএফএ-র সঙ্গে আলোচনায় বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ক্লাবেদের বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ, প্রফুল্ল পটেলের প্রস্তাব মেনে আই লিগ ও ইন্ডিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেললে তারা আইএসএলের টিমের সঙ্গে খেলতে পারবেন হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিতে অন্তত দশটি ম্যাচ। যা ক্লাবের বিপনন এবং স্পনসরদের খুশি করবে। তবে তারা চিন্তিত দুটো লিগ পাশাপাশি তললে আই লিগের জন্য ফুটবলার পাবেন কোথায়? তা ছাড়াও আই লিগ ঠিকমতো না হলে ভাল টাকার স্পনসর পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে।
দিল্লির খবর, ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট সভায় নাকি বারবার বলেন, ‘‘লিগের এই কাঠামো শুধু এই মরসুমের জন্য। পরের বার এএফসি-র রোডম্যাপ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি চাই এ বারের লিগটা কোনওক্রমে শেষ হোক।’’ তিনি নাকি উপস্থিত ক্লাব কর্তাদের প্রতিশ্রুতি দেন, আইএসএলের মতোই আই লিগের টিভি সম্প্রচার হবে ঝকঝকে। সব ম্যাচও দেখানো হবে। এবং একই টিভি চ্যানেলে। যা শুনে অবশ্য সভার বাইরে বেরিয়ে হেসেছেন সবাই।
সভা থেকে বেরিয়ে ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘ওঁরা প্রস্তাব পাঠাক। তারপর আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’’ আর মোহনবাগান সহ সচিব সৃঞ্জয় বসুর মন্তব্য, ‘‘আলোচনা হল। কিন্তু কী যে হবে কেউ জানে না।’’ আই লিগের সব ক্লাবগুলিকে ডাকা হলেও বেশিরভাগ ক্লাবই আসেনি। কলকাতার দুই প্রধান ছাড়া শিলং লাজং ও চার্চিল ব্রাদার্সের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন শুধু। বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছে আইজল এফসি-ও। সভায় বাংলার টিমের হয়ে সওয়াল করতে গিয়েছিলেন ফেডারেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত ও আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়। দু’জনের মুখেই কুলুপ। তবে ফেডারেশনের এক বড় কর্তা বললেন, ‘‘আই লিগের ক্লাবগুলিকে তো ছুঁড়ে ফেলাই হয়েছিল। নতুন প্রস্তাব তো মন্দের ভাল। আইএসএলে সরাসরি না খেললেও কলকাতার দুই প্রধান আইএসএলের টিমগুলোর সঙ্গে তো খেলার সুযোগ পাবে।’’ যা শুনে এক ক্লাব কর্তার মন্তব্য, ‘‘ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গল্প তো পরে। তার আগে আই লিগে খেলার জন্য ফুটবলার পাব কোথায়? ভাল ফুটবলার সব তো আইএসএলে চলে যাবে।’’ আর এক ক্লাব কর্তার মন্তব্য, ‘‘এত ঝামেলা! এ বার না হয় আমরা শুধু কলকাতা লিগ আর শিল্ড খেললাম। আই লিগ খেলব না। পরের বার ১৪ বা ১৬ দলের একটা লিগ যখন হবে তখন খেলব।’’