ফাইল চিত্র
আর একটা বিশ্বযুদ্ধ নয়। শুধু মাত্র একটা অতিমারীর জেরে লন্ডভন্ড অবস্থা ক্রীড়া-দুনিয়ার। প্রতিযোগিতা, লিগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। ঘরোয়া, জাতীয়, আন্তর্জাতিক— সব। প্রশ্নই নেই ট্রেনিংয়ের। কার্যত প্রায় সব খেলার নিয়ামক সংস্থা নির্দেশ দিয়েছে, কোথাও কোনও ম্যাচ আয়োজন করা যাবে না। ফিফা এমনকি এও বলেছে, কোনও ক্লাব যদি মনে করে তাদের ফুটবলার জাতীয় শিবিরে পাঠাবে না, তা হলেও অসুবিধে নেই। তাতে কোনও ক্লাবের শাস্তিও হবে না। অথচ ফিফা চিরকালই এই বিষয়টায় বেশ কড়া ছিল!
প্রায় তিন দশক পরে নিশ্চিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিততে যাচ্ছিল লিভারপুল। কিন্তু ইংল্যান্ডেও ফুটবল স্তব্ধ। লিভারপুল ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘‘সবার আগে মানুষের জীবন। খেলার কথা আপাতত না ভাবলেও চলবে।’’
ঘটনাচক্রে, ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত শেফিল্ড শিল্ডের কথা ধরা যাক। করোনা-ত্রাস যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে এই টুর্নামেন্টও বন্ধ হয়ে যেতে পারে চলতি মরসুমে। আর সেটা সত্যি হলে বিশ্বযুদ্ধের পরে অস্ট্রেলীয় তারকারা তাঁদের দেশের সেরা টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ হারাবেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চিফ এগজিকিউটিভ কেভিন রবার্টস সে রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ফাঁকা স্টেডিয়ামে বেকহ্যাম: ছ’বছর ধরে তিনি এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে মেজর সকার লিগে নিজেদের স্টেডিয়ামে খেলবে তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামি। কিন্তু ডেভিড বেকহ্যামের স্বপ্নপূরণে বাদ সাধল করোনাভাইরাস। শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির বিরুদ্ধে খেলার কথা ছিল ইংরেজ মহানায়কের ক্লাবের ঘরের মাঠ মায়ামির স্টেডিয়ামে। কিন্তু মেজর সকার লিগই যে বন্ধ রাখা হয়েছে! বেকহ্যাম তবু সপরিবার স্টেডিয়ামে হাজির হলেন। সেখান থেকে ভক্তদের বার্তাও দিলেন। বার্তাতেও একই কথা, ‘‘খেলা ‘ব্যাক সিটে’। এটা মানতে হবে।’’
মহানুভব লিচিচ: ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে ভাইরাস-আগ্রাসনে ছিন্নভিন্ন অবস্থা ইটালির। আক্রান্তের তালিকায় একের পর এক ফুটবলারের নাম শোনা যাচ্ছে। গোটা দেশ যখন ভয়ে কাঁপছে, তখন জসিপ লিচিচ রোমের বার্গামোর এক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করে এলেন, গত সপ্তাহেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আটলান্টার হয়ে করা তাঁর চার গোলের বলটি। ‘‘আমরাও তোমাদের পাশে আছি। তোমরাই দেবদূত। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা তোমরাই খেলছ,’’ তাঁর গোলের বল দান করে হাসপাতাল কর্মীদের উদ্দেশে এটাই ছিল লিচিচের বার্তা। অবশ্য চিকিৎসায় আর্থিক সাহায্য করতেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে। নাপোলির অধিনায়ক লোরেঞ্জো ইনসাইন যেমন একাই দান করেছেন প্রায় বিরাশি লক্ষ টাকা। তুরিনের এক হাসপাতালকে জুভেন্টাসের ডিফেন্ডার লিয়োনার্দো বোনুচি দিয়েছেন আরও বেশি। প্রায় এক কোটি!
আক্রান্ত আরও চার: সেরি আ-র আরও চার ফুটবলার সংক্রমিত। শনিবারই খবরটা এসেছে। সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। অন্য কোনও দেশে এত খেলোয়াড়ের করোনাভাইরাসের কবলে পড়ার খবর নেই। এখন পর্যন্ত সেরি আ-তেই আক্রান্তের সংখ্যা ১১। আছেন অন্য খেলার কুশীলবেরাও। এর মধ্যেই বেশ কিছু ক্লাব ট্রেনিং শুরুর করার কথা ভাবছে এমন একটা খবর রটেছিল। যার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারেরা। যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা সাবধান করেছেন, ‘‘এত বড় ভুল যেন না করা হয়।’’ তেমন কিছু হলে তাঁরা কাজেও যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন।