লা লিগায় নিজের সাড়ে তিনশোতম ম্যাচ ১-০ জেতার পর। ছবি: এএফপি
অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। গায়ে সাদা-নীল দশ নম্বর জার্সি। ঈশ্বরপ্রদত্ত বাঁ পা। আবার দেখতে পাওয়া যাবে। আর্জেন্তিনায় দ্বিতীয় বারের জন্য শুরু হতে চলেছে মেসি-যুগের।
শতবর্ষের কোপার সেই অভিশপ্ত রাতের পরে বিশ্বফুটবলকে স্তম্ভিত করে অবসর ঘোষণা করেন মেসি। কিন্তু রাজপুত্রের বিদায় মেনে নিতে না পেরে ভেসে আসে সমর্থকদের একের পর এক আর্তি। দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে সাধারণ মানুষ। মেসির ফ্যান মেল ভরে গিয়েছিল ‘ফিরে এসো’ আবেদনে। কোপা ফাইনালের আট সপ্তাহ পরে দেশবাসীর সেই আর্তির জবাব দিতে চলার পথে মেসি। যখন অবসর ভেঙে আবার আর্জেন্তিনা জার্সিতে প্রত্যাবর্তন ঘটার কথা এলএম টেনের। ঘটবে ভারতীয় সময় শুক্রবার ভোরে। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে প্রাক বিশ্বকাপ ম্যাচে।
কিন্তু মেসির প্রত্যাবর্তনের আগে সামান্য একটা কাঁটা থেকে যাচ্ছে। গত রবিবার লা লিগা ম্যাচের পরে পেশিতে সমস্যা অনুভব করেন মেসি। আর তাতেই ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে উরুগুয়ে ম্যাচে রাজপুত্র দলে থাকবেন কিনা? যদিও রাতের খবর, চোটের আশঙ্কা থাকলেও দলের সঙ্গে থাকছেন এলএম টেন। তাঁর ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে ম্যাচের আগে।
মেসিকে ফেরানোর পিছনে যে নামটা উঠে আসছে, তা হল, নতুন কোচ এডগার্ডো বাউজা। প্রশ্ন উঠছিল, তিনি কী এমন বললেন মেসিকে যে এত দ্রুত মত বদল করলেন রাজপুত্র? বাউজা প্রথমে দাবি করেছিলেন বৈঠক সম্পূর্ণ ফুটবল নিয়ে ছিল। একবারও নাকি অবসরের প্রসঙ্গ ওঠেনি।
কিন্তু উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিফায়ারের তিন দিন আগে বাউজাও স্বীকার করলেন, ফুটবল-টুটবল নয়, মেসিকে অবসর ভাঙানোই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। কোপা ফাইনাল হারের পরে বিধ্বস্ত মেসি আবেগের বসে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাউজা জানালেন, বৈঠকের মেসি ছিলেন সেই শীতল মস্তিষ্কের ফুটবলার। যিনি যুক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করছেন। যিনি বিবেচনা করে দেখছিলেন, অবসর নেওয়াটা আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কিনা। ‘‘মেসি হারের যন্ত্রণায় অবসর নিয়ে ফেলে। ওর সঙ্গে কথা বলে আমি সেটাই বুঝতে পেরেছিলাম। মেসির সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় ও আর্জেন্তিনাকে কতটা ভালবাসে। ও কতটা দায়বদ্ধ দেশের প্রতি,’’ বলছেন বাউজা।
বৈঠকে আর্জেন্তাইন কোচ পেপ-টকও দেন মেসিকে। বাউজা বলেন, ‘‘আমি মেসিকে বললাম আর্জেন্তিনায় একশোটা ইডিয়ট আছে। সবার কথায় কান দিলে কাজ হবে না।’’ সাধারণ ধারণা হল, মেসি বা রোনাল্ডো থাকা মানেই সেই দল হারতে পারে না। সে ক্লাব ফুটবল হোক বা আন্তর্জাতিক। বাউজা বলছেন, ‘‘মেসি কোনও দলে থাকা মানে বিপক্ষের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তা বলে এই নয় যে প্রতিটা ম্যাচেই সে জিতবে। মেসিকে আরও ভাল করে ব্যবহার করতে হবে আমাকে।’’
বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে উরুগুয়ে ও লুইস সুয়ারেজের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আর্জেন্তিনার জন্য। যে ম্যাচ হওয়ার কথা মেসির প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। কিন্তু দলে পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার থাকলেও, বাউজা এক রকম সতর্ক করে দিচ্ছেন দলকে। মেসির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দলের পতনের কারণ হতে পারে, সেটাই বলে দিচ্ছেন কোচ। মেসি ছাড়াও বাকিদের দায়িত্ব নিতে বলছেন বাউজা। একের বদলে এগারো খেললে তবেই আর্জেন্তিনা ট্রফি জিততে পারবে। বাউজা বলছেন, ‘‘মেসিকে সাহায্য করতে হবে দলকে। দুটো কোপা ফাইনাল দেখলে বোঝা যাবে মেসি ভাল সাপোর্ট পায়নি। মেসিকে আরও বল পাস দিতে হবে। ও আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। কিন্তু শুধু মেসির উপর ভরসা করে থাকলে চলবে না।’’
তিনটে ফাইনালে হার। ক্লাবের হয়ে অসংখ্য ট্রফি জিতলেও, দেশের ট্রফি ক্যাবিনেটে অলিম্পিক্স সোনা ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু বাউজার মতে, দেশের হয়ে এলএম টেনের ট্রফি জেতা মাত্র সময়ের অপেক্ষা। ‘‘মেসির মধ্যে এখনও খিদে আছে জেতার। ফাইনালে হারের যন্ত্রণা ওকে আরও বেশি তাতিয়ে দিয়েছে দেশকে ট্রফি দিতে।’’
দ্বিতীয় ইনিংস অধিনায়ক হিসেবেই শুরু করবেন আর্জেন্তাইন কিংবদন্তি। আর দলের অধিনায়ক হয়ে এখন থেকেই কোচকে নাকি দল নিয়ে টিপস দিচ্ছেন এলএম টেন। বাউজার সংযোজন, ‘‘মেসি আমায় বলল বিপক্ষ সম্বন্ধে। তাতেই বুঝলাম মেসি ফুটবল থেকে দূরে থাকতে পারে না।’’