হাউস্টনের মাঠে। ছবি: ইউ এস এ টু ডে স্পোর্টসের সৌজন্যে
কে বলেছে দেশের হয়ে সফল নন মেসি?
কোপার এই মঞ্চেই যেন তার মোক্ষম জবাব দিলেন।
সে ২৬ মিনিট মাঠে থাকুন বা পুরো ৯০ মিনিট। লিওনেল মেসি ম্যাজিকে যখন আচ্ছন্ন গোটা বিশ্ব! হাই প্রোফাইল ইউরোর সব গ্ল্যামার যেন রাতারাতি কেড়ে নিলেন একা মেসিই। গোল করলেন। গোল করালেন। ছুঁয়ে ফেললেন দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডও! আরও এক বার প্রমাণ করে দিলেন, গোলের জন্য ছটফট করলেও গোলের মুখে তিনি স্বার্থপর নন। না হলে শেষ বেলায় হিগুয়াইনকে দিয়ে ওই গোল করাতেই পারতেন না। মাঝে মাঝেই তাঁর ক্লাস নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলেন মারাদোনা। তারও হয়তো জবাব দিলেন মাঠে নেমেই। মুখে কথা বেশি বলেন না। কাজটা যে মাঠেই করতে হয় ফুটবলারদের।
মেসির কোনও তুলনাই চলে না! তবুও ফুটবল দুনিয়ার একাংশ তো তুলনা করতেই ভালবাসে। লিওনেল মেসির সঙ্গে এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি যাঁর তুলনা করা হয়, তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। পাশাপাশি চলা ইউরো কাপে সেই রোনাল্ডোই এখনও পর্যন্ত ১০ গোল হজম করে বসে আছেন মেসির কাছে। আজকের পর কি এই তুলনা করা বন্ধ হবে?
পিঠের চোট সারিয়ে সবে ফিরেছিলেন। কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বে খেলেছেন মাত্র ৭৪ মিনিট। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৩৬ মিনিট খেলে হ্যাটট্রিক। সঙ্গে অ্যাসিস্ট। তখনই শুরু হয়ে গিয়েছিল জল্পনা। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড ভাঙতে ছিল সময়ের অপেক্ষা। কোপার ফাইনালে দেশকে তুলে সেই কাজটিও সেরে রাখলেন লিওনেল মেসি। ৭৮ ম্যাচে ৫৪টি গোল করেছিলেন বাতিস্তুতা। তাঁর দখলে রয়েছে দুটো কোপা। ১৯৯১ ও ১৯৯৩ এ আর্জেন্টিনার কোপা জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল বাতিস্তুতার। ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকও এসেছিল তাঁর পা থেকে।
আরও পড়ুন: দেশের হয়েও দুর্দান্ত মেসি, আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকার ফাইনালে
২৮ বছর বয়সেই সেই রেকর্ড ভেঙে ফেললেন মেসি। তাঁর এই গোল এসেছে ২৭টি আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি, ১৫টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে, ৭টি কোপা আমেরিকায় ও ৫টি বিশ্বকাপে। এর মধ্যে ন’বার মাঠে নেমেছেন পরিবর্ত হিসেবে আর ৪৪ বার শুরু থেকে। এর মধ্যে রয়েছে ৪টি হ্যাটট্রিক, ছ’টি জোড়া গোল ও ২৯বার একটি করে গোলে। তার মধ্যে ৪২টি গোল এসেছে স্বাভাবিক ছন্দে। ১১টি পেনাল্টি থেকে।
মেসির সব থেকে পছন্দের নেট অবশ্যই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল। সঙ্গে রয়েছে প্যারাগুয়েও। এই দুই দেশের জালে ৪বার করে বল জড়িয়েছেন তিনি। তিন বার করে ৭টি দেশের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। ২০০৫-এ হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ১৮ বছরের মেসির। কিন্তু দেশের জার্সিতে তাঁর গোল পেতে লেগে গিয়েছিল ছ’টি ম্যাচ। যে ম্যাচটি ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিল আর্জেন্তিনা। সেটাও ছিল ফ্রেন্ডলি। তাঁর প্রথম প্রতিযোগিতামূলক গোল আসে ২০০৬ এর বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে। প্রথম হ্যাটট্রিক পেতে লেগে যায় আরও ছ’বছর। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। এই বছরই বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে গোলের হাফ সেঞ্চুরিটি সেরে ফেলেছিলেন মেসি বলিভিয়ার বিরুদ্ধে। আর আজ দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড। একগুচ্ছ, রেকর্ড, বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান ব্যাল ডি’ওর, বিশ্ব ফুটবলের সেরা নাম। তবুও আফশোস একটাই এখনও দেশের হয়ে যেতা হল না বিশ্বকাপ।