বার্লিনে আজ লাতিন শিল্প বনাম ইউরোপের প্রাচীর

রোনাল্ডোকে ব্যালন ডি’অর হাতে দেখতে চাও, জাভির বকুনিতে তেতে যান মেসি

পাড়ার আড্ডায় বসে লম্বা-চওড়া গুল ঝাড়ার মতোই লেগেছিল অনেকের। একটা টিমের ফরোয়ার্ড লাইনে ব্রাজিলের এক জন। আর্জেন্তিনার এক জন। উরুগুয়ের এক জন। তারাও আবার যে যার দেশের ব্রহ্মাস্ত্র! স্বপ্নে হয়, কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নাকি? আর লাতিন আমেরিকার তিন সেরা শিল্পীকে তুললে তো মাঠে নামার আগেই লেগে যাবে। ইগো— সেটা কে সামলাবে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

পাড়ার আড্ডায় বসে লম্বা-চওড়া গুল ঝাড়ার মতোই লেগেছিল অনেকের। একটা টিমের ফরোয়ার্ড লাইনে ব্রাজিলের এক জন। আর্জেন্তিনার এক জন। উরুগুয়ের এক জন। তারাও আবার যে যার দেশের ব্রহ্মাস্ত্র! স্বপ্নে হয়, কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নাকি? আর লাতিন আমেরিকার তিন সেরা শিল্পীকে তুললে তো মাঠে নামার আগেই লেগে যাবে। ইগো— সেটা কে সামলাবে?

Advertisement

লুই এনরিকে এখন মুচকি হাসি সে দিনের কঠোর সমালোচকদের দিতেই পারেন। সমালোচকদের তালিকায় বাঘা একটা নামও ছিল। জোহান ক্রুয়েফ। প্রথমে মেসি-নেইমারকে এক টিমে দেখে ক্রুয়েফ চটে লাল। বলেছিলেন, দু’জন ক্যাপ্টেনকে এক টিমে রাখার মানে কী? তার পর যখন লুই সুয়ারেজ এলেন, ক্রুয়েফের উত্তাপ আরও চড়ল। বলে দিলেন, যে মিডফিল্ড এত দিন জীবনদায়ী শক্তি জোগাত বার্সাকে, তার বিনিময়ে সুয়ারেজকে কেনা হল। ভুগবে।

ভুগছে ঠিকই। তবে বার্সা নয়। প্রতিপক্ষ। পুড়ছে ক্রুয়েফ সমালোচিত ত্রয়ীরই আগুনে।

Advertisement

যাঁরা সুয়ারেজকে আনার দিন এনরিকেকে ‘ওকে গুয়ান্তানামো থেকে বার করে আনলাম’ বলতে শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন সম্ভাব্য বিতর্ক একই সঙ্গে উপস্থিত হল ভেবে, তাঁরাই আজ বলছেন সুয়ারেজের মতো নিঃস্বার্থ, সাদাসিধে লোক খুব কম হয়! মেসির সঙ্গে সমস্যা হবে কী, লোকটা তো মেসির জন্য নিজের গোলগুলো ছেড়ে দিতে দু’বার ভাবে না!

লিওনেল মেসি— বার্সার পঞ্চম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তাঁরও কি বিশেষ এক জনকে মনে পড়ছে না? জাভি হার্নান্দেজকে ভোলা সম্ভব হবে আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার? সতেরো বছর বার্সায় কাটানো স্পেনীয় কিংবদন্তির শেষ ম্যাচ আজ। জাভিকে ‘রিটার্ন গিফট’ দেওয়ার মঞ্চ এর চেয়ে ভাল আর কী পাবেন মেসি?

শনিবার জুভেন্তাস-বধ সম্ভব হলে বার্সা ট্রফিটা জিতবে পাঁচ বার। মেসি জিতবেন চার বার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতিহাস সৃষ্টি দূরে থাক, একটা সময় বার্সা কোচ এনরিকের সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, মেসির টিম ছাড়া নিয়েও প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে যায়। জানুয়ারি তখন। রিয়াল সোসিয়েদাদের বিরুদ্ধে হেরে গিয়ে বার্সা শিবির অগ্নিগর্ভ। মেসি তখন প্র্যাকটিস ম্যাচে ‘রেফারি’ এনরিকে কেন একটা ন্যায্য ফাউল দেননি সেটা নিয়ে মেজাজ হারাচ্ছেন। জাভি সে সব দেখে মেসিকে আলাদা করে নিয়ে যান। তার পর নাকি বলেন, ‘‘তুমি কি চাও? চাও যে গত বছর ক্লাব যে ভাবে ট্রফিহীন থেকে গিয়েছে সেটা এ বারও হোক? আমরা সেটা হতে দিতে পারি না। দেবও না। তুমি কি চাও যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ব্যালন ডি’অরটা জিতুক আর তুমি দেখো? এ সব বন্ধ করো লিও!’’

এক বকাতেই কাজ হয়েছিল কি না, কে জানে। তবে তার পর মেসি জীবনের সেরা ফর্মে। লা লিগা বার্সেলোনা জিতেছে। কোপা দেল রে জিতেছে। এবং শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সামনে। ত্রিমুকুট প্রাপ্তির সামনে।

বলা হচ্ছে, টিমটার সবচেয়ে অ্যাডভান্টেজ ‘বিগ থ্রি’-র ফর্ম নয়, তাঁদের সম্পর্ক। সুয়ারেজ আসায় নাকি মেসি প্রতিদ্বন্দ্বী নন, এক জন বন্ধু পেয়েছেন। দু’জনকে প্রায়ই একসঙ্গে দেখা যায়। মাঠে, মাঠের বাইরে। আসলে দু’জনের শিশুসন্তানও প্রায় সমবয়সী হওয়ায় সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। আর আছেন নেইমার। মাঝেমধ্যে ব্রাজিলিয়ানকে একটু ছাড় দিতে হয় পার্টি-টার্টি করার জন্য। কিন্তু ফুটবলের বৃত্তে ফিরলে তাঁর চেয়ে সিরিয়াস নাকি আর কাউকে দেখায় না। কে বলবে, আর দিন দশেক পর এঁরা প্রত্যেকে নেমে পড়বেন একে অন্যের বিরুদ্ধে। কে বলবে, মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ আর কয়েক দিনে ছুটবেন এক ট্রফির লক্ষ্যে। এক সঙ্গে নয়, আলাদা আলাদা। আর পনেরো দিনে তো শুরু কোপা আমেরিকা। তখন মেসি বনাম নেইমার। মেসি বনাম সুয়ারেজ। নেইমার বনাম সুয়ারেজ।

থাক। সে সব পরের ব্যাপার। আপাতত বার্সার পৃথিবী পরের চব্বিশ ঘণ্টা দেখছে। স্বপ্নের প্রহর গুনছে। যে মোহনায় মিশে যাচ্ছেন সমর্থক থেকে প্রাক্তন। এক বিখ্যাত যেমন বলে রেখেছেন, ‘‘আর একটা ইতিহাস সামনে। বার্সা, বার্লিনে আমার হৃদয় তোমাদের সঙ্গে থাকবে।’’

ভদ্রলোকের নাম— রোনাল্ডিনহো গাউচো। টিম বার্সেলোনার ‘ভাল’ থেকে ‘অসাধারণে’ উত্তরণে তাঁরও একটু-আধটু অবদান ছিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement